অণুগল্পে সুনৃতা রায় চৌধুরী

গভীর জলের তত্ত্ব

সেই মেয়ে জানতে চাইতো গভীর জলের কথা।

ঐ যে বাড়ির পাশের পিদিম পুকুর! জল সবসময় টলটল করে, ঢিল মারলে টুপ করে ডুবে যায় আর জলে বৃত্ত তৈরি হয়ে পাড়ের দিকে চলে যায়!
ঠাম্মা বলতেন, ‘ওর তলায় আছে এক কুয়ো, তাতে আছে মস্ত দুটো রুইমাছ, তাদের সোনালী রঙের আঁশ।’

তো সেবার খরায় সব খাল বিল শুকিয়ে গিয়েছিল। পুকুরের জলও অনেক কমে গিয়েছিল। ছেলেটিকে সে বলেছিল, ‘দেখিস তো, তলায় কুয়ো আছে কিনা!’
মেয়েটির জলে নামতে বড়ো ভয়।
ছেলেটি হেসে বলে, ‘বোকা কোথাকার! এসব কেউ বিশ্বাস করে?’
মেয়েটি কিন্তু করতো।

সেই যে পাতালকন্যা মণিমালা!
সাপের মণি ছোঁয়ালে যেখানে জল সরে পথ করে দেয়! মণির আলোয় উজল পাতালপুরীতে বিষের ঘোরে নিঝুম রাজকন্যাকে রাজপুত্র কেমন উদ্ধার করে নিয়ে আসে! ঠাম্মার কাছে বারবার শুনতে চাইতো সেই আখ্যান।

একদিন ছেলেটি বলে, ‘তোকে জানাবো গভীর জলের কথা।’
ভেসে পড়লো সে অনন্ত জলরাশির বুকে। মেয়েটি আশায় আশায় বসে থাকে জানালায় প্রদীপ জ্বালিয়ে। ছেলেটি তো ফেরে না। পেলো কি সে কোনো দ্বীপান্তরের রাজকন্যার সন্ধান?

একদিন প্রদীপ নিভিয়ে ঝলমলে আলোর নীচে এক সওদাগর পুত্তুরের হাত ধরে চললো সে এক আলো ঝলমল দেশে। সেখানে কেউ রূপকথা বলেনা, গুরুগম্ভীর মুখে খালি কাজের কথা বলে। মেয়েটির চলন বলন শিক্ষা দীক্ষা দীঘল চোখের সরল চাহনি তীব্র তীক্ষ্ণ শ্লেষে বিদ্ধ হয়।
তার চোখ টলটল করে, মনের গভীরে কি হয়,কেউ খোঁজ করে না।

মা গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ‘মানিয়ে নে মা!’
বাবা বলেন, ‘লোকে কি বলবে?’
তার কথা কেউ শোনে না।

খানখান চুরমার মন আর ক্ষতবিক্ষত ‘ভালবাসা’র অত্যাচারের পর এক স্তব্ধ রাতে.…..
নিস্তরঙ্গ জলাশয়ে কয়েকটি বৃত্ত রচনা করে মেয়েটি চুপিচুপি নিজেই চলে গেল জলের গভীরতার তত্ত্ব অনুসন্ধানে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।