সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে শম্পা রায় বোস (পর্ব – ৭)

আমার মেয়েবেলা 

বাবার প্রথম প্রেম

বাবার চাকুরি সূত্রে আমার শৈশব কেটেছে ফরাক্কায়। ফরাক্কা তখন একটু একটু করে গড়ে উঠছে। চারদিকে শুধু জল আর জল। মাঝে ছোট্ট এই জায়গাটাকে ব্লক আকারে ভাগ করা থাকত। একএকটা ব্লকে তিন থেকে চারটে রাস্তা। প্রতিটি রাস্তায় প্রায় একই রকমের কোয়ার্টার।। কোয়ার্টার এর সামনে আর দুপাশে এক ফালি জমি।। আর সেই জমিতেই সারা বছর ভোর নানা রকমের ফুল ফুটে থাকত।
আমার বাবার, বাগানের খুব সখ ছিল। সারা বছরই বাবা নানা রকমের ফুল নিজের হাতে লাগাত। কোয়ার্টারের সামনের জমিতে ফুল গাছ আর পাশের জমিতে সব্জির গাছ লাগাত।
একটা কোদাল ছিল বাবার। বাগানের মাটি কুপিয়ে ফেলত কত কম সময়ে। আমার ছিল একটা ছোট্ট খুরপি। আর আমিও ঐ খুরপিটা নিয়ে বসে বসে মাটি খুঁড়তাম। বাবার কাছে একটু বেশিক্ষণ থাকা হত এই আর কি।
মাটি ঝুরঝুরে হয়ে গেলে মাটিতে হাত ঢুকিয়ে বেশ একটা গর্ত করত। তারপর সার দিয়ে, জল দিয়ে গাছ পুঁততো। বাবার হাতে যেন যাদু ছিল। খুব ভাল গাছ হত বাবার হাতে। গোলাপ, চন্দ্র মল্লিকা, ডালিয়া, জবা, বড়ো টগর ছোট টগর বেল হলুদ গাঁদা লাল গাঁদায় আমাদের বাগান শীত গ্রীষ্ম বর্ষায় যেন সেজে থাকত। একটু সময় পেলেই বাবা গাছের পরিচর্যা করতে বসত।
চায়ের পাতা, খোলের সার দিত গাছে। তবে বাবা তার প্রিয় গাছটাকে সব থেকে বেশি যত্ন করত।
হ্যাঁ বাবার প্রথম প্রেম ছিল একটা গোলাপ গাছ। কী বড়ো বড়ো গোলাপ ফুল ফুটত! বাবা যেদিন প্রথম কোয়ার্টার পেয়েছিল,,, ঐ গাছটা এনে লাগিয়েছিল কোয়ার্টার এর বারান্দার খুব কাছে।
বাবা কখনও ফুল তুলত না। সব সময় বলত , গাছেই ফুল দেখতে বেশি সুন্দর লাগে। তাছাড়া ফুল ছিঁড়লে গাছের তো কষ্ট হয়। কত আত্মীয়তা একাত্মতা ছিল ঐ গাছটার সঙ্গে বাবার।
আমরা প্রথম যেবার কোয়ার্টার পাল্টালাম। বাবা তার একটা ডাল কেটে নিয়ে নতুন কোয়ার্টারের বাগানে লাগিয়েছিল। কী আশ্চর্য কিছুদিনের মধ্যেই দেখতে দেখতে ঐ ছোট্ট গাছটা বড়ো বড়ো ফুল দিতে লাগল।
আমি তখন সবে বড়ো হচ্ছি। মাঝে মাঝেই গোলাপ গাছটার খুব কাছে বসতাম। ফুলগুলো আমার মুখে নাকে ঠোঁটে ছোঁয়াতাম। অদ্ভুত একটা অনুরণন,,, একটা কেমন যেন ভাল লাগার অনুভূতি হত,,, কাউকে আপন করতে মন চাইত। একটা ভীষণ কাছের মানুষের স্পর্শ অনুভব করতাম। সেদিন বুঝতে পারি নি। পরে বুঝেছিলাম, ওটাই ছিল আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি ।
ভালবাসার মানুষটিকে কোনও দিন দেখিনি, মনে মনে কল্পনা করতাম এমন হবে অমন হবে। কিন্তু কে যে ছিল সেই স্বপ্নের প্রেমিক আজ পর্যন্ত বুঝতেই পারলাম না।।
আমাদের চারজনেরই খুব প্রিয় ছিল ঐ গোলাপ গাছ টা। বাবা আবার কলমও করত। অন্য গোলাপ গাছের একটা ডাল কেটে এই গোলাপ গাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে দিত। একটু গোবর দিয়ে লেপে দিত জোড়ের জায়গাটায়। কিছুদিনের মধ্যেই ওখান থেকে দারুণ একটা গাছ বেরিয়ে যেত। আর ফুলও দিত দারুণ একদম অন্য রকম।
মাঝে মাঝে পাড়ার কিছু দুষ্টু ছেলে সব ফুল তুলে নিয়ে যেত। বাগানের গেট টা খুলে দিত ইচ্ছে করেই। দুপুর বেলা কিংবা অনেক রাতে বা ভোরে গেটটা খুলে দিত আর গরু ছাগল ঢুকে সব গাছ খেয়ে চলে যেত। আমরা টেরই পেতাম না। তখন বাবার যে কী আপসোস! জানতাম কে বা কারা করত। কিন্তু বাবা কিছুতেই ওদের কিছু বলতে দিত না। বাবা বলত ছাড়,, বলে কী হবে? মানুষের চরিত্র পাল্টাতে পারবি? আজ বলবি কাল আবার করবে। আসলে যারা ফুল ভালোবাসে না তাদের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে কী হবে?
খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিল আমার বাবা। সহজে কারোর সঙ্গে কোনও রকম বিবাদে যেত না। আমার যে কি রাগ হত কী বলব! এই একটা ব্যাপারে আমি একদম বাবাকে সাপোর্ট করতাম না। আরে একটু তো ফোঁস করতে হয়? বাবার ভদ্রতাকে তো ওরা ভুল ব্যাখ্যা করছে! কী করা যাবে। বাবা যখন বারণ করেছে আর তো এগোনো যায় না।
খুব কষ্ট হত আমাদের। বাবা রোদের মধ্যে বাগানের কাজ করত। গাছগুলো কে কী যে ভালো বাসত! সেই সময় আমাদের ফুলহীন বাগানটা শ্মশানের চেহারা নিত। অন্যান্য ফুল গাছ গুলোও কেমন মুষড়ে থাকত।।
আবার কিছুদিন পর সব ঠিকঠাক । আমি সেই ছোট্ট বেলায় এই গাছগুলোর থেকেই শিখেছিলাম, জেনেছিলাম। ওদের থেকেই জীবন সংগ্রামের পাঠ নিয়েছিলাম বলা যায়—-‘ ওঠাপড়া তো জীবনের একটা স্বাভাবিক ঘটনা।। যত হোঁচট খাবে তত এগোবে।’
একবার আমরা দুদিনের জন্য দাদুর বাড়ি গিয়ে ছিলাম। এসে দেখি বাগানের গেটটা খোলা। সব গাছ ছাগল গরুতে খেয়ে গেছে। বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর ভাল করে গোলাপগাছটাকে দেখে বলল,,”হবে,,গাছটা বেঁচে যাবে। শিকড়টা তো মাটি আঁকড়ে এখনও গাছটা কে বাঁচিয়ে রেখেছে।কটা দিন সবুর কর। আবার ফুল হবে দেখবি।”
আমি চোখের জল মুছে বাবার কথা বিশ্বাস করেছিলাম।। আসলে বাবার কষ্ট হলে আমারও খুব কষ্ট হত। আমার আত্মা যেন সব সময় বাবার আত্মাকে ছুঁয়ে থাকত।এটা আমি অনেক ব্যাপারেই অনুভব করেছিলাম।
সেবার গাছটা যেন আরও বড়ো বড়ো গোলাপ, বাবা কে,আমাদেরকে উপহার দিয়েছিল। বাবার এই জেদ ,অধ্যাবসায় দেখে শিখেছিলাম ” দাঁতে দাঁত চেপে কীভাবে জীবনের লড়াইটা চালিয়ে যেতে হয়।
এরপর কত জায়গায় বাবা মার সঙ্গে তাদের প্রিয় গাছটা ঘুরতে লাগল। বাবা মায়ের প্রথম বৈবাহিক জীবনের প্রেমের স্মৃতি ছিল ঐ গোলাপ গাছটা। বিয়ের পর প্রথম কোয়ার্টারে এসে এক সাথে ভালোবাসার সাক্ষী স্বরূপ ঐ গাছটা ওঁরা লাগিয়েছিল তাদের সাধের ভালোবাসার বাগানে। সঙ্গে অবশ্য মায়ের প্রিয় রঙ্গনা গাছ। মা রঙ্গনা ফুল খুব ভালবাসত।
শেষ বয়সে বাবা তাঁর পিতৃভিটে রঘুনাথগঞ্জে চলে আসে। কিন্তু ঐ গাছটিকে আনতে ভোলে নি। চলে আসার আগে তার ডাল কেটে গোড়ায় মাটি দিয়ে খুব যত্ন করে নিয়ে
এসে লাগিয়ে ছিল একটা বড়ো টবে। না এখানে বাবা আর খোলা জমি পায় নি। আর কোদাল চালানোর ক্ষমতা ও ছিল না। ছোট্ট খুরপি দিয়েই সারাদিন ঐ গাছটার পরিচর্যায় মেতে থাকত। দুজনের ভাব বিনিময় হত। আমি অনুভব করতাম। কত যে যত্ন, ভালোবাসা ছিল ঐ গাছটার প্রতি!
আবারও শিখেছিলাম,,
যে কোনও পরিস্থিতিতে কাউকে ভালবেসে কাছে টানলে সে সাড়া দিতে বাধ্য।
কয়েক মাসের মধ্যেই আবার গাছটা ফুলে ভরে উঠল।
#####
এরপর একদিন বাবা কিছু না জানিয়ে আচমকাই চলে গেল,, না ফেরার দেশে।
তখন বাবার এমন কিছু বয়সও হয় নি। আসলে ভাই চলে যাওয়ার পর বাবা মা এক রাতে অনেকটা বুড়ো হয়ে গিয়েছিল।। তারপর রঘুনাথগঞ্জে চলে এল ওরা। ফরাক্কায় ভাই এর স্মৃতি ওদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। ফরাক্কার হসপিটালেই তো ভাই হয়েছিল।।
সন্টু চলে যাওয়ার পর একটু শান্তি পাওয়ার জন্য ঐ দুটো মানুষের যে কী ছটফটানি! উফ্,,,
আমি ভাইকে হারানোর যন্ত্রণা,,আমার মেয়েবেলার সুন্দর সুন্দর স্মৃতি সব নষ্ট হয়ে যাওয়ার কষ্ট ঢোঁক গিলে সহ্য করেছিলাম। শুধু ঐ দুটো মানুষ এর কথা ভেবে।
এক অসহায় মা এর আর্তনাদ,,,একজন সরল সাদাসিধে সৎ মানুষের শক্ত হাত, বন্ধু,, ভবিষ্যতের নির্ভরতা,, স্বপ্ন ছারখার হয়ে যাওয়ার কষ্ট দেখতে দেখতে,,, আমি যেন রাতারাতি অনেকটা বড়ো হয়ে গিয়েছিলাম।
মরে বেঁচে ছিল ওঁরা। মা রান্না বান্না কিচ্ছু করত না। বাবাও পাগলের মতো ঘরের মেঝেতে শুয়ে থাকত। সারাদিন শুধু মান্না দের গান,,, “সবাই তো সুখী হতে চায় তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয় না।”
বাবা রঘুনাথগঞ্জ এসে কিছুদিন চাকরি করেছিল। আহিরণ এ ট্রান্সফার নিয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই আর মন বসাতে পারল না। তখন আমারও বিয়ে হয়ে গেছে। আমি তখন ঘোরতর সংসারী। পরাধীন একটা জীবন। আসতেই পারতাম না বাবার কাছে। তখনও মোবাইল ফোন অতটা জনপ্রিয় হয় নি। বাবা ফোন করত ল্যান্ডে। শ্বশুড় মশাই রা ধরতেন। কাজের সময় বিরক্ত হতেন। বড়ো বাড়ি ফোন এলে ডাকতে ডাকতেই দশ মিনিট। অনেক সময় ফোনটা কেটেও যেত।। আসলে বাবার মন খারাপ হলেই আমাকে ফোন করত। কিন্তু মেয়ের শশুড় বাড়িতে যে যখন তখন ফোন করা উচিত নয় সেই বোধটাই বাবার ছিল না। একদিন চোখের জল মুছে বাবাকে ফোন করতে বারণ করেছিলাম। খুব অপমান করেছিলাম। তারপর থেকে আর ফোন করত না। আমিই সুযোগ সুবিধা বুঝে ফোন করতাম। আজ আমার কাছে দুটো ফোন কিন্তু ফোন করার মানুষ গুলোই আর নেই।
###
বাবা একদিন বলল আর চাকরি করতে ভাল লাগছে না। কি হবে? তোরও বিয়ে হয়ে গেছে। সন্টুও নেই। কী হবে টাকা দিয়ে । যা পেনশন পাব ওতেই চলে যাবে আমাদের।
ছাপ্পান্ন বছর বয়েসে বাবা ভি. আর. এস নিয়ে নিল।।
কিন্তু কত বড়ো যে ভুল করেছিল বাবা সেটা আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝেছিলাম। কিন্তু দূরে থেকে কীই বা করতে পারি।
চাকরি ছাড়ার পর আরো একাকিত্ব গ্রাস করল বাবাকে। সারাদিন পাগলের মতো ছটফট করত। মা সব সময় ঠাকুর পুজো নিয়ে মেতে থাকত।। নিজেদের বৈবাহিক জীবন বলে আর কিচ্ছু রইল না। এত অল্প বয়েসে দু দুটো জীবন শেষ হয়ে গেল। আমি কিচ্ছু করতে পারি নি। তখন আমার কিছু করার মতো ক্ষমতাও ছিল না।। আমাকে ভগবান শুধু দেখার জন্য রেখেছিল।।
মাত্র একষষ্টি বছর বয়েসে
বাবা চলে গেল,,, চলে গেল,,,, চলেই গেল,,,,কিচ্ছুটি বলে গেল না। একবারের জন্য কিচ্ছুটি জানানোর প্রয়োজন বোধ করল না।
“ঘুম পেয়েছে , এবার আমি ঘুমোব।” শুধুমাত্র এইটুকুই বলেছিল।
তারপর চোখটা আসতে আসতে বন্ধ করেছিল। আমি বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। সন্টু চলে যাওয়ার পর বাবা তো একটা দিনের জন্যও ভাল করে ঘুমোয় নি।
চোখটা বন্ধই করল। আর খুললই না।। এভাবে যে কেউ যেতে পারে,,, এভাবেও যে যাওয়া যায়,,,আমি সেদিন জানতে পারলাম। দেখলাম।
সেদিন আমার জীবনে আর একটা অভিজ্ঞতার পালক জোড়া লাগল।
“আমি এবার ঘুমোব”,,, সত্যিই বাবা ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমাকে বলল একটু কীর্তন গা তো। আমার বড্ড ঘুম পেয়েছে। আমি বললাম হ্যাঁ বাবা এবার তুমি ঘুমোও। কেন যে বলেছিলাম! আমি হরেকৃষ্ণ হরে রাম সুর করে গাইতে লাগলাম,,, একদম কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে,,,, বাবা সরকারি হসপিটালে ভর্তি ছিল তো। অন্য পেশেন্টদের অসুবিধা হতে পারে তাই,,,,
বাবার হেপাটাইটিস বি হয়েছিল। রঘুনাথগঞ্জ ছোট্ট শহর। কোনও চিকিত্সাই হয় নি।
বৃহস্পতিবার ২৭|১১|২০০৪ শেষ বারের মতো ফোন করে বলেছিল টয়লেট হলুদ হচ্ছে জানিস। বমি হচ্ছে কিচ্ছু খেতে পাচ্ছি না। তুই আসবি একবার?
বলেছিলাম কী করে যাব বাবা? তুমি একটা ডাক্তার দেখিয়ে নাও।। বাবা চুপ করে ফোনটা রেখে দিয়েছিল। ডাক্তার দেখায় নি। সোমবার হসপিটালে
ভর্তি করেছিল আমার খুরতুতো ভাই। মঙ্গলবার বার রাত বারোটা তেইশ,,,

১|১২|২০০৪,,,,,,
বাবা ঘুমের মধ্যেই একেবারের মতো চলে গেল।

বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে গোলাপ গাছটা কেমন যেন শুকিয়ে যেতে লাগল। বাড়িতে, বাবা মায়ের সংসারে ভালোবাসার আনন্দে, প্রেমের খুশিতে ঐ গাছটা যেন মাথা উঁচু করে দুপাশে দোল খেত। ফুলগুলো খুশিতে যেন নেচে নেচে উঠত। গাছের জীবন আছে ছোট থেকে বই পড়ে জেনে আসছি। কিন্তু সুখ দুঃখেরও যে ভাগী হয়। তা খুব কাছ থেকে জেনে ছিলাম।

আমরা গরমের সময় বারান্দায় রাতের খাবার খেতাম। গরম কাল মানেই লোডশেডিং। ছোট্ট মোমবাতি বা হ্যারিকেন এর আলোয় আমরা চারজন গল্প করতাম। সামান্য অতি সাধারণ খাবারই কী অমৃত মনে হত।। এক একসময় আমরা হয়তো চারজন খুব হেসে উঠেছি। খেয়াল করতাম গাছটাও কেমন দুলতে দুলতে গা ঝাড়া দিত। কিছু পাতা পড়ার শব্দ হত। ফুলগুলো ও নড়তে থাকত। পুরোনো বাসি ফুলের পাপড়ি গুলো ঝড়ে পড়ত ঝরঝর করে। কী সুন্দর ভাবে যে গাছটা তার উপস্থিতি আমাদের জানান দিত! সঙ্গে মায়ের রঙ্গনা গাছটাও,,,

সেই সাধের গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। মা পাগলের মতো কাঁদত। মা বিশ্বাস করত গাছটার মধ্যেই বাবা রয়েছে।। বাবা কোত্থাও যায় নি।
রঘুনাথগঞ্জের তিনতলা বাড়িতে মা তখন একা। আমি কলকাতায়। বাবার কাজ শেষ করে আমি চলে এসেছি।। মা কে আমার কাছে নিয়ে আসার প্রয়োজন বোধ করে নি কেউ।। কী যে অপরাধবোধ! ফিরে আসার সময় মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম আমি আছি মা। আমি থাকব। থেকেও থাকব আবার না থেকেও থাকব।। একটু সামলে নি। তোমাকে আমার কাছে রাখব।

চলে এসেছিলাম অসহায় মানুষটা কে একা ফেলে রেখে। বাস্তব বড়ো কঠিন,, বাস্তব বড়ো নির্মম,,, সেদিন বুঝেছিলাম। চোখের জল লজ্জায় লুকিয়ে রেখে স্বার্থপরের মতো চলে এসেছিলাম।
মাকে দেখব বলে দুই মেয়েকে নিয়ে
শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে থাকার মতো মানসিক এবং আর্থিক কোনও ক্ষমতাই আমার সেই সময় ছিল না।
মা এবার দিনরাত ফাঁকা বাড়িতে বাবার ঐ সাধের গোলাপ গাছটাকে নিয়ে মেতে উঠল।
তাই গাছটা কে মরে যেতে দেখে মা নিজেও যেন মরে যাচ্ছিল তিল তিল করে। গোলাপ গাছের পাশেই মায়ের রঙ্গনা গাছ।। সেও মনমরা। ফুলটুল দেয় না।
একদিন হঠাৎই মা গাছটা কে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদতে কাঁদতে প্রলাপ করতে লাগল। আজও সেই কথা আমার কানে বাজে। “আমাকে ছেড়ে যেও না। আমি তাহলে আর বাঁচব না। আমি যে আরও একা হয়ে যাব। যেও না তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না।”
না। সেই সময় আমি সেখানে ছিলাম না। পরে জেনেছিলাম।
####
সে বছর গাছটা মাত্র দুটো ফুল দিয়েছিল। মা একটা ফুল তুলে বাবার ছবির সামনে রেখে বলেছিল।” এই দেখ আমাদের গাছটা এখনও বেঁচে আছে। ফুল ও দিয়েছে। আমাদের ভালোবাসাকে এখনও কেমন বাঁচিয়ে রেখেছি বলো???,,,,,,,,
শম্পা রায় বোস

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।