সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে শম্পা রায় বোস (পর্ব – ২৬)

আমার মেয়েবেলা
ভাই হওয়ার পর আমার মধ্যে একটা দায়িত্ব বোধ জন্মেছিল। সেটা অবশ্য সবারই হয়। নতুন কিছু নয়। কিন্তু ঐ যে মা বলে দিয়েছিল ভাইকে দেখিস। সেটা আমার মনে এমন ভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে, তাই আর পাঁচ জনের থেকে আমি ভাইয়ের ব্যাপারে একটু বেশিই উদ্বিগ্ন ছিলাম। ও একটু অসুস্থ ছিল।
মাত্র সারে চার বছর বয়সে ওর রিউমেটিক আর্থারাইটিস ধরা পড়ে। ঐ রোগে আক্রান্ত রোগীর যে কী কষ্ট সেটা আমি খুব কাছ থেকে দেখে ছিলাম তাই জানতাম। হাতে পায়ের গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা হয়। টিপলেও আরাম হয় না। হালকা জ্বর হয়। ঠাণ্ডা লাগানো একদম বারণ।
যেদিন সন্টুর যন্ত্রণা হত আমরা কেউ খাওয়া দাওয়া করতাম না। অসম্ভব কষ্ট হত ভাই এর। হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলত মা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে,,,,বাবা আর সহ্য করতে পারছি না,,,, তুমি কমিয়ে দাও আমি না হলে মরেই যাব। অ্যাই দিদি এত তো পুজো করিস তোর ঠাকুরকে বল না কমিয়ে দিতে,,,,,,
বলেছিলাম সত্যিই আমি বলেছিলাম,,,, প্রানপণে ডেকেছিলাম ঠাকুরকে,,,,
এবার তো ওকে একটু রিলিফ দাও,,,,হল তো অনেক বছর,,,আর তো সহ্য করতে না পারছে ও,,,,না আমরা তিনজন,,,, আপনজনের কষ্ট,,,যন্ত্রণা দেখা যে কতটা অসহনীয় সেটা আমি জানি,,,, শারীরিক যন্ত্রণা আমার হতো না ঠিকই কিন্তু মানসিক ভাবে যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত আমি সবসময় ওর সঙ্গে সঙ্গেই থাকতাম। ওর আনন্দে,,ওর গানে,,ওর কবিতায়,,ওর লেখা নাটকে,,আবার নাটকের ডিরেকশনে,,এমনকি প্রেমেও। তখন যেমন ওর সঙ্গে ছিলাম ,,
ও চলে যাওয়ার পরও ওর সঙ্গে তেমনই ছিলাম,,,, এখনও আছি আর থাকবও আমৃত্যু,,,,
ও যে সব কথা বলত আমায়,,, আমিও বলতাম,,
আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। কত ধরনের আলোচনা হত আমাদের। শেষ দেখার দিনেও কত যে কথা বলেছিল! সেদিন বেশিরভাগ সময়টাই শুধু রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেছিল। সেই আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গ , ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে পৃথিবীর রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা শুনেছিলাম আমার বড়ো হয়ে যাওয়া ছোট্ট ভাই এর কাছে বসে। কী অবাক হয়ে গিয়েছিলাম আমি! কবে যে এতটা বড়ো, এতটা পরিণত হয়ে উঠেছিল বুঝতেই পারিনি।
এখন মাঝে মাঝে মনে হয় এই করোনা কালীন সময়ে ,,এই লক ডাউনে কী করত? কী ভাবত আমার সেই ছোট্ট ভাই!
একদম চুপ করে থাকার ছেলে তো ছিল না। এখনও ভুলে গিয়ে অনেক কথা বলে ফেলি। আসলে নিঃশব্দেও তো অনেক কথা বলা যায় তাইনা?