আন্তর্জাতিক || পাক্ষিক পত্রপুট || এ শম্পা রায় বোস (ধারাবাহিক)

তিরুপতি ভ্রমণ

রাত তখন সাড়ে তিনটে। ললিত রাগের উপর বাঁশির করুণ সুরের মূর্ছনায় আমাদের হোটেলের ঘরটায় তখন যেন একটা মায়া মায়া জ্যোৎস্না খেলা করছে। আমিই চালিয়েছিলাম ফোনে।
ক্লান্ত বিষন্ন রাতটা তখন যেন দু দণ্ড জিরিয়ে নিতে ব্যস্ত। শুধু ভোরের অপেক্ষা। মিঃ বোস বাথরুমে। মেয়ে ঘুমোচ্ছে। আর আমি যেন ভেসে ভেসে চলে যাচ্ছি দূরের ঐ পাহাড়ের চূড়ায়, যেখানে তিরুপতি বালাজি চোখ বন্ধ করে রত্নখোচিত সোনার বেদিতে দণ্ডায়মান।
আমরা সবাই মোটামুটি ৬ টার আগেই তৈরি হয়ে হোটেলের নিচে নেমে এলাম। নিচে প্রচুর চা, খাবারের দোকান। এক কাপ চা খেলাম। এদের চা টা খুব ভাল হয়। এরা বেশ খাদ্য রসিক। তাই সব খাবারই সুস্বাদু। অত সকালে বড়া,ধোসা,উত্তপম্ যত রকম দক্ষিণী খাবার আছে, সব রেডি। তুমি যা চাইবে তাইই পাবে।
আমরা বাঙালিরা তো আবার বেশি বুঝি। বিশেষ করে বাঙালি বৌরা,,
উপোসের মধ্যে থাকলে, তুমি যা যা চাইবে ঠাকুর সবগুলোই দেবেন। এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।সেই কারণে গ্যাসে মাথার যন্ত্রণা হলেও উপোস করেই ঠাকুর দর্শনে যাই,এবং যাবওওওও। এ ব্যাপারে কারও মতামত চলতে পারে না।
আমি আবার পঞ্চাশ শতাংশ কর্মে বিশ্বাসী তাই একদম উপোস না থেকে, চা এর সঙ্গে একটা বিস্কুটও খেলাম।
এবার হঠাত করেই চোখে পড়ল। একজন ফুলওয়ালি ডালায় করে ফুলের মালা বিক্রি করছে।
ওখানে মেয়েরা সবাই ফুলের মালা চুলে জড়ায়। এটা ওদের কাস্টমস্ । ছোট ছোট ডালায় সাদা বেলফুল, নানা রকমের রঙিন ফুলের মালা বিক্রি হয়। আমরা দুজন(বন্ধু মলি আর আমি) এই দুদিন প্রাণ ভরে মালা দিয়ে খোঁপা সাজিয়েছি।
যে মালা বিক্রি করছে তার চুলেও মালা জড়ানো,,, কী ভাল যে লাগে দেখতে! দক্ষিণে বেড়াতে আসলে এই ব্যাপারটা বেশ চোখে পড়ে।

যাইহোক আমরা দুজন খোঁপায় মালা জড়িয়ে, হাসিমুখে, বেশ আনন্দে উঠে বসলাম গাড়িতে।

আমরা একটা ইনোভা বুক করেছিলাম। তবে সরকারি বাস ও যায়। কোন ভাড়া লাগে না। ভাবা যায়? বিনা ভাড়ায় তিরুপতি দর্শন! অবশ্য সরকারি বাস ছাড়াও, প্রাইভেট বাসও আছে। ভাড়া ৫৪/৫৫ টাকার মতো (মনে রাখতে হবে এটা ১৮ সালের কথা। এখন ভাড়া বেড়ে থাকতে পারে। কত সেটা আমার জানা নেই)। এছাড়া গাড়ি তো আছেই। কোনও ফিক্সড রেট নেই। একটু দরটর করতে হবে। গড়িয়াহাট,, হাতিবাগান মার্কেটের মতো।
একটা ভীষণ জরুরী কথা বলে রাখি,,,মন্দিরের একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। ছেলে এবং মেয়েদেরকে ট্র্যাডিশনাল ড্রেসই পরতে হবে। না পরলে কিছুতেই মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।
মেয়েদের ক্ষেত্রে শাড়ি,সালোয়ার কামিজ,ঘাঘড়া এবং অবশ্য অবশ্যই দোপাট্টা।
ওড়না খুব ভাল করে মানে যে ভাবে নেওয়া উচিত,,সেভাবেই নিতে হবে, মাথায় ঘোমটা দিতে হবে। মাঝে মাঝেই লাইনে এসে ওখানকার মহিলা সিকিউরিটি গার্ড চেক করে যায়।

ছেলেরা,পাজামা পাঞ্জাবী,বা তেলেগু স্টাইলে সাদা ধুতি আর শার্ট। কিন্তু প্যান্ট শার্ট নৈব নৈব চ। মোটামুটি ফটো সেশন শেষ করে আমরা জয় বালাজি বলতে বলতে তিরুপতি দর্শনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলুম।

ক্রমশঃ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।