বন্দী তিনি আমার ঘরে
সিরােহিপতি সুরতান,
কী অভিলাষ তাঁহার পরে
আদেশ মােরে করাে দান।
…..…………..……………….”
( মানী, রবি ঠাকুর)
ভাতৃবিরোধে জয়লাভ করে এবং বৃদ্ধ পিতা শাহজাহানকে সিংহাসনচ্যুত ও নজরবন্দী করে ঔরঙ্গজেব 1658 খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন। তিনি আলমগীর পাদশাহ গাজী উপাধি নেন ।বিভিন্ন মুসলমান রাষ্ট্রদূত ভারতে এসে ঔরঙ্গজেব কে অভিনন্দন জানান ।ঔরঙ্গজেব রাজত্বের প্রথম ভাগ 1658 থেকে 1681 উত্তর ভারতে এবং দ্বিতীয় ভাগ 1681 থেকে 1707 দক্ষিণ ভারতে কাটান। প্রথম পর্বের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে যুদ্ধ, রাজপুতদের সঙ্গে যুদ্ধ এবং শিখ-জাঠ-বুন্দেলা- সৎনামী বিদ্রোহ। দ্বিতীয় পর্বের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা বিষয়ে এবং শিবাজী ও মারাঠাদের সঙ্গে সংঘর্ষ ।রাজ কর্তব্য সম্পর্কে ঔরঙ্গজেবের ধারণা ছিল প্রজাদের ধন ও প্রাণের নিরাপত্তা বিধান করা ।এছাড়া রাজার ওপর প্রধান কর্তব্য হল রাজ্য বিস্তার করা ও শত্রু নিধন করা ।প্রজাবর্গের আনুগত্য ও সহানুভূতি লাভের জন্য ঔরঙ্গজেব তাদের দেও করের পরিমাণ কমান। সুন্নি সম্প্রদায়ের আন্তরিক সমর্থন ঔরঙ্গজেবের সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল ।এই সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে সম্রাট শিয়া সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান নওরোজ নিষিদ্ধ করেন ।মুসলমান প্রজাবর্গের নৈতিক চরিত্র ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি লক্ষ্য রাখবার জন্য মুহতাসিব নামক একদল কর্মচারী নিযুক্ত করেন ।পুরনো মসজিদগুলি সংস্কার করেন এবং বহু মসজিদ নির্মাণ করেন।
1661 খ্রিস্টাব্দে বিহার প্রদেশের শাসনকর্তা দাউদ খাঁ পালামৌ অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং সেই বছরই মীর জুমলা বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন ।অসমের পশ্চিম সীমান্ত এবং গোয়ালপাড়া ও কামরূপ মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল কিন্তু অসম ও কোচবিহারের হিন্দু রাজারা প্রায়ই মুঘল সীমান্তে আক্রমণ চালাতেন ।মীরজুমলার নেতৃত্বে কোচবিহার ও অসম মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে যদিও মীরজুমলার মৃত্যুর পর এই রাজ্যগুলি মুঘলদের হস্তচ্যুত হয়। বাংলাদেশের পরবর্তী শাসনকর্তা শায়েস্তা খাঁর শাসনকালে চট্টগ্রাম মুঘলদের অধীনে আসার ফলে পূর্ব ও দক্ষিণবঙ্গ পর্তুগীজ জলদস্যুদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিল।
উত্তর পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে ছিল ইউসুফজাই, আফ্রিদি,খাটাক ইত্যাদি আফগান উপজাতিদের বাস ।এদের এলাকার জমি ছিল অনুর্বর ।আফগানিস্তান থেকে গিরিপথে যে ব্যবসায়ীরা আসত তারা প্রায়ই এদের কবলে পড়তো ।যুদ্ধ ও বলপ্রয়োগে এদের দমন করা যাবে না জেনে ঔরঙ্গজেব এদের অনুদান দিয়ে এবং ভারত ও কাবুলের মধ্যবর্তী অঞ্চলের শুল্ক আদায় করার অধিকার দেন। তা সত্ত্বেও উপজাতি গুলির আক্রমণ প্রায় চলত এবং ঔরঙ্গজেব আফগানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
ঔরঙ্গজেবের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত নীতি সাম্রাজ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হয়েছিল। প্রথমত, ক্রমাগত যুদ্ধের ফলে মুঘল রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উপজাতীয়দের মধ্য থেকে সেনা সংগ্রহ কঠিন হয়ে পড়ে ।তৃতীয়ত, দাক্ষিণাত্য থেকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সৈন্য ছড়ানোর ফলে শিবাজী গোলকুণ্ডা বিজাপুর কর্ণাটক প্রভৃতি অঞ্চলে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।
গোলকুণ্ডা রাজ্যে ব্রাহ্মণ মন্ত্রী এবং যথেষ্ট হিন্দু প্রভাব বজায় থাকা ঔরঙ্গজেব এর কাছে অসহনীয় ছিল। দাক্ষিণাত্যের বীজাপুর ও গোলকুন্ডায় শিয়া সুলতানদের তিনি মোটেই সুনজরে দেখেননি। মুঘল সেনাবাহিনীর রণ দক্ষতা বজায় রাখার জন্য যুদ্ধের প্রয়োজন ছিল। দাক্ষিণাত্য অভিযান সেই সুযোগ এনে দেয় ।পাশ্চাত্য দেশগুলোর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের উপকরণসমূহ বিজাপুরের বন্দরে উপস্থিত হতো ।বীজাপুর ও গোলকুণ্ডার ঐশ্বর্য অথচ রাজ্যদুটির ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা ঔরঙ্গজেব কে যেন অভিযানের আমন্ত্রণ জানালো ।বীজাপুর ও গোলকুন্ডা অধিকারের ফলে মুঘল সাম্রাজ্য এত বিশাল হয়ে পড়ে যে এক কেন্দ্র থেকে একজন শাসকের পক্ষে এই সাম্রাজ্য শাসন করা কঠিন হয়ে পড়ে। উত্তর ভারত বা দাক্ষিণাত্য কোথাও শৃঙ্খলা রক্ষা করা আর সহজসাধ্য হয় না ।দাক্ষিণাত্যের নতুন বিজিত রাজ্যগুলির থেকে বাদশাহের আয় বাড়েনি। উপরন্ত বেতন বাকি পড়ায় মুঘল সৈন্যদের মধ্যে প্রবল অসন্তোষ দেখা দেয় ।দাক্ষিণাত্য ঔরঙ্গজেবের দীর্ঘকাল অবস্থানের ফলে উত্তর ভারতে জাঠ, শিখগণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। জমিদার এবং আমীর ওমরাহগণ প্রাদেশিক শাসকদের কর্তৃত্ব অস্বীকার করে। দাক্ষিণাত্যে নতুন নতুন ওমরাহ ও জায়গীরদার এর উদ্ভব হওয়ায় জায়গিদারী প্রথায় নতুন নতুন সমস্যা দেখা দেয়।
ঔরঙ্গজেব ছিলেন গোঁড়া সুন্নি মুসলমান ।সুন্নি মুসলমানদের চোখে তিনি ছিলেন জিন্দাপীর। তার ধর্ম নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে দার উল ইসলাম বা ইসলামের ভূমি তে পরিণত করা। নিজেকে তিনি মনে করতেন ইসলামের একনিষ্ঠ সেবক ও প্রচারক রূপে ।হিন্দুদের ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক জীবনের ওপর তিনি আঘাত হানেন ও অমুসলমানদের উপর জিজিয়া কর পুনরায় স্থাপন করা হয় ।হিন্দুদের বহু মন্দির ধ্বংস করা হয়।
শাহজাহানের পুত্র আওরঙ্গজেব ক্ষমতায় বসেই হিন্দু নির্যাতনের জন্য আরও কঠোর নীতি ঘোষনা করলেন। তিনি জিজিয়া কর পুনঃ প্রবর্তন করলেন। উদয়পুর ও চিতোর অধিকার করে দুই’শ এর অধিক দেব মন্দির ধ্বংস করলেন। শিখ গুরু তেগ বাহাদুর আওরঙ্গজেবের হিন্দু বিরোদী নীতি অমান্য করেন এবং কাশ্মীরের ব্রাম্মনদের আওরঙ্গজেব প্রবর্তিত হিন্দু বিরোধী নীতি অমান্য করতে উপদেশ দেন। এ জন্য আওরঙ্গজেবের সম্মূখে উপস্থিত করা হল এবং মৃত্যুভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলা হলে তিনি ধর্ম ত্যাগ অপেক্ষা মৃত্যুই শ্রেয় বিবেচনা করলেন। সম্রাটের আদেশে ততক্ষনাত তাকে হত্যা করা হল। পাঞ্জাবের বর্তমান পাতিয়ালা ও মেওয়াট অঞ্চলে ‘সৎনামী’ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস ছিল। একজন মুসলমান সৈন্য একজন সৎনামী ভক্তকে হত্যা করলে সৎনামীরা বিদ্রহী হয়, ফলে আওরঙ্গজেবের বাহিনী সৎনামী হিন্দুদের প্রায় সকলকে হত্যা করেন।
এখানে লক্ষ করার বিষয় হল আজও মথুরায় গেলে দেখা যাবে যে, সাবেক মন্দিরের ধ্বংস বা ধূলিস্যাত করা হয়নি; শুধু তাকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। ঠিক তেমনি পূর্ববর্তী বিবরণে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে; ক্কিন্তু আজও কাশীতে গেলে দেখা যায় যে, ধ্বংস করার নামে তাকে শুধু মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে মাত্র। এসব ঘটনা ও তার বিবরণ থেকে এই সিন্ধান্তেই আসতে হয় যে, এই সব বিবরনে যেখানেই মন্দির ধ্বংস করার কথা আছে, সে সমস্ত ক্ষেত্রেই মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর বুঝতে হবে। এটিই নিয়ম, কেননা হজরত মোহাম্মদ মক্কার কেবলেস্বর মন্দিরকে ধূলিস্যাত করেননি, শুধু মূর্তিগুলো ভেঙ্গে দিয়ে এবং ছবিগুলোকে ফেলে দিয়ে কাবা শরীফ নামকরন করেছেন। এটি একটি সুন্নত। এই সুন্নত অনুসরন করা মুসলমান শাসকের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়ড়িয়েছিল। হিন্দু জনসাধারনকে বাধ্যতামূলকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করিয়ে তাদেরই মন্দিরকে ঘসে মেজে হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করে মসজিদের রূপ দিয়ে নও মুসলমানের সেখানে নামাজ শিক্ষা দেওয়া ও পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।
কাশীর বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দির এবং ১৬৭০ খৃষ্টাব্দে মথুরার বিখ্যাত কেশব রায় মন্দির ধ্বংস করা হল। এই সংবাদ বিদ্যুতবেগে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ল। উল্লেখিত উভয় মন্দিরের জায়গাতেই বিশাল দুই মসজিদ খাড়া করা হল যা আজও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং যে কেউ কাশী বা মথুরা ভ্রমনে গেলে অনেক দূর থেকেই তা দেখতে পাবেন
[R.C.Majumder, BVB. Vol.VII,p-265]
ঐতিহাসিক এ কে মজুমদার লিখেছেন, “মেঘ যেমন পৃথিবীর জল বর্ষণ করে ঔরঙ্গজেব সেই রকম সমস্ত দেশ জুড়ে বর্বরতা বর্ষন করলেন।”
মধ্য যুগে ভারতে হিন্দু প্রজা পীড়নকারী মুসলমান শাসন বর্ণনা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ইলিয়ট বলেছেন, “আমরা অবাক হব না যদি দেখি যে এই সব অত্যাচারী শাসকদের আমলে ন্যায় বিচার কলুষিত ও পক্ষপাত দুষ্ট অথবা যদি দেখি যে, অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচারের মধ্য দিয়ে সর্বত্র রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ ভাবে পুরুষের পুরুষাঙ্গ ও মহিলাদের স্তন কেটে ফেলা হচ্ছে অথবা যদি দেখি, যে সব রাজকর্মচারীকে রক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারাই দূবৃর্ত্ত, ডাকাতের সর্দার বা উচ্ছেদকারী হানাদার রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে।”
শিখ গুরু তেগ বাহাদুর হিন্দুদের ঔরঙ্গজেবের ধর্ম নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ডাক দিলে তাকে বন্দী করে দিল্লিতে আনা হয় এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আদেশ দেওয়া হয় ।তেগ বাহাদুর অসম্মত হলে তাকে হত্যা করা হয়। তেগ বাহাদুরের পর গোবিন্দ সিংহ গুরু পদে বসেন ।তিনি পিতার নৃশংস হত্যার প্রতিশোধ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। ফলে শিখদের সঙ্গে মুঘলদের প্রকাশ্য সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।গুরু গোবিন্দ সিংহ খালসা সংস্থাকে সামরিক সংস্থায় পরিণত করেন।
রাজপুত দের সম্পর্কে ঔরঙ্গজেব রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয় দেন ।অম্বরের রাজা জয়সিংহ কে শিবাজীর প্রতি মিত্রতা মুলক আচরণকারী সন্দেহ করে হত্যা করেন ।মারওয়ার রাজ যশোবন্ত সিংহের মৃত্যু হলে ঔরঙ্গজেব মারওয়ার মেবার দখল করে নেন এবং প্রায় দু’শত হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেন ।আকবরের সময় থেকেই মুঘল রাজতন্ত্রের প্রতি রাজপুতদের যে বংশানুক্রমিক সমর্থন ছিল ঔরঙ্গজেব এর ভ্রান্ত নীতির ফলে তা চিরতরে বিনষ্ট হয়।
উত্তর ভারতের রাজপুতদের মতো দক্ষিণ ভারতে মারাঠারা মোগল সাম্রাজ্যের প্রবল শত্রুতে পরিণত হয়েছিল ।ঔরঙ্গজেবের ধর্মান্ধতা ও হিন্দু বিদ্বেষের ফলে শিবাজীর নেতৃত্বে মারাঠারা উগ্র জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল ।দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা নিযুক্ত থাকাকালীন ঔরঙ্গজেব শিবাজীকে দমন করার চেষ্টা করেছিলেন। সম্রাট হওয়ার পর ঔরঙ্গজেব 1663 খ্রিস্টাব্দে নিজমাতুল শায়েস্তা খাঁকে শিবাজীর বিরুদ্ধে পাঠান ।এক রাত্রিতে শিবাজী অতর্কিতে শায়েস্তা খাঁর শিবির আক্রমণ করলে শায়েস্তা খাঁ কোনক্রমে দাক্ষিণাত্য ত্যাগ করেন ।ঔরঙ্গজেব তার এখানকার সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাপতি জয়সিংহ কে পাঠান শিবাজীর বিরুদ্ধে। শিবাজী মোগলদের সঙ্গে পুরন্দরের সন্ধি (1665 খ্রিস্টাব্দে )করতে বাধ্য হলেন। জয় সিংহের এর অনুরোধে ও বাদশাহের আমন্ত্রণে শিবাজী আগ্রা এলে বাদশাহ তাকে নজরবন্দী করে রাখলেন ।কিছুদিনের মধ্যেই শিবাজী কৌশলে পলায়ন করে নিজ রাজ্যে ফিরে যান।1670 খ্রিস্টাব্দে পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়। শিবাজী কঙ্কন, মাদুরা,মাজুলী পুরন্দর দূর্গ গুলি হস্তাগত করেন ।শিবাজীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শম্ভুজী সিংহাসনে বসেন। 1689 খ্রিস্টাব্দে অতর্কিত আক্রমণে তিনি বন্দী হন এবং ঔরঙ্গজেবের আদেশে তাকে হত্যা করা হয় ।শম্ভুজির কনিষ্ঠ ভ্রাতা রাজারাম মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়ে যান ।তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী তারা বাঈ এর নেতৃত্বে মারাঠাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলেছিল। দীর্ঘকাল ক্রমাগত যুদ্ধের ফলে মুঘল রাজ কোষ শূন্য হয়ে পড়ে এবং সেনাবাহিনীর দক্ষতাও বিনষ্ট হয়।
শাসক হিসাবে ঔরঙ্গজেব অত্যন্ত পরিশ্রমী কর্মনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল ছিলেন ।তবে তিনি ছিলেন অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় করনের পক্ষপাতি ।ফলে অধীনস্থ কর্মচারীদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা ও দায়িত্ববোধ নষ্ট হয় ।বাদশাহী আরম্বর ত্যাগ করে ঔরঙ্গজেব অত্যন্ত সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন ।ব্যক্তিগত ব্যয় নির্বাহের জন্য নিজ হাতে টুপি সেলাই করতেন ।মদ্যপান তিনি একেবারেই করতেন না ।পরিশ্রম করতে ভালোবাসতেন ।সাম্রাজ্যের সব বিভাগ নিজে তত্ত্বাবধান করতেন এবং সকল নির্দেশ নামায় নিজের স্বাক্ষর করতেন ।ইসলাম ধর্মের অনুশাসন তিনি কঠোরভাবে মেনে চলতেন ।ঔরঙ্গজেব ছিলেন বিদ্বান ও বিদ্যোৎসাহী। তিনি পারসিক ভাষায় যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন ।তার আমলে দিল্লি, তট্টা ,জৈনোপুর ও শিয়ালকোট শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। শিল্প ও সংগীত ও নৃত্যে তার বিরাগ ছিল, যদিও সংগীত সম্পর্কে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল ।মুঘল যুগে সরকারের পক্ষ থেকে যে বার্ষিক বিবরণী লিপিবদ্ধ করার প্রথা ছিল ঔরঙ্গজেবের আদেশে তাও বন্ধ করে দেয়া হয় ।তার রাজত্বকালের প্রধান ঘটনাগুলি গোপনে ছদ্মনামে লিপিবদ্ধ করে রাখেন একজন বিখ্যাত ব্যক্তি যিনি নিজেকে কাঁফি খাঁ নামে অভিহিত করেন।
যাক গে, এসব তো আর আমি দেখতে আসিনি। যে জানার সেই জানে