সমীপেষু

আপাতত এই অবধি

পদ আর পদমর্যাদা এই শব্দদুটি একে অপরের শত্রু। জবরদখল নামের একটা বোতলবন্দী বন্ধুত্ব — যেন বিষ। বন্ধু কখনও কাছে আসতে পারে না, যেমন তার দূরে যাওয়াও অসম্ভব। পদ কাছে আসে পদ দূরে যায়। আর মর্যাদা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করে যেন অন্ধ কানাই৷ অন্ধই তো! মর্যাদা কাউকে চেনে না, চিনে ফেললে মিলিয়ে যায়। তাই অচেনাকে মৌর্য সাম্রাজ্যের ক্যালিগ্রাফি করে ধরে আনা এই মর্যাদা। সম্মানের সঙ্গে মর্যাদার সম্পর্ক বাঙালির মতো। কাঁকড়ার টানাটানি এক্ষেত্রে একদম ম্লান। সম্মানের সঙ্গে যেই গাছ বাড়ে, অমনি পথিকের আমদানি বাড়তে থাকে, কোনদিন সেই গাছটাই রপ্তানি হয়ে যায় কোনো রাস্তা বানানোর জন্য। মর্যাদা রাস্তায় গাড়ি চড়ে ঘুরেফিরে ফাণ্ডা দেখায়। নইলে ডাণ্ডা তো আছেই। আমি কিন্তু ডাণ্ডাগুলির কথা বলছি।
টেকটাচটক আমাকে অনেক দিয়েছে। অনেক সহ্য করেছে। এক বছরের উপর একসাথে পথ চলেছি। বিনিময়ে আমি কিছুই হয়তো দিতে পারিনি। ভীষণ কঠিন সময়ে ঋষি, সুবীর আর আমি মিলে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম স্বপ্নের হাউসকে। রাজনীতি, কুকথা, বেইমানি আর লাগাতার তাদেরকে বড়দের সমর্থন আমাদের অবাক করেছিলো। আমরা ভেঙে পরিনি। আজ আমরা ৭ দিনে ১০ টা অনলাইন কাগজ প্রকাশ করি। ক্ষমতা রাখি। আমাদের সম্পাদকমণ্ডলী স্বতঃস্ফূর্ত। অলিখিতভাবে আমাকে প্রধান সম্পাদক বানিয়ে দিয়েছে ঋষি — আমার ডিরেক্টর সাহেব। যতভাবে স্বাধীনতা দেওয়ায় যায়, ততভাবে আমায় স্বাধীন রেখেছে ঋষি আজ অবধি। ওর মতো কলিগকে পাওয়া ভাগ্যের। ওর দেওয়া স্বাধীনতাই আমাকে স্বেচ্ছাচারী করে তুলেছে। কতটা স্বেচ্ছাচারী আমি হয়ে পড়েছি আর আমার ডিরেক্টর সাহেব আমায় কতটা প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে তার একটা জ্যান্ত হাতেগরম উদাহরণ টানি। আজ সকালে আমি আর ঋষি একটা বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। হঠাৎ ই আমি ওকে জানালাম রবিবারের কাগজটায় আমি আর সম্পাদনা করতে চাইছি না, ওটা সোমাকে দেওয়া হোক। ৯ সেকেন্ডের আলোচনায় প্রস্তাব সিদ্ধান্তে রূপান্তরিত হলো। স্বজনপোষণ তো স্বজনপোষণই! কিচ্ছু যায় আসে না, টেকটাচটকের জন্য খুনও করতে পারি। কারণটার নাম হলো বন্ধুত্ব, স্রেফ বন্ধুত্ব। ইকুয়েশন, সলিউশন, ইন্টারপিটেশন, রিপিটেশন এসব আমাদের মধ্যে এখনও অবধি নেই। আর সেই কারণেই যোগ্যতার মাপকাঠিতে সোমা চট্টোপাধ্যায় রূপমকে রবিবার সাহিত্য ZONE এর সম্পাদনার দায়িত্ব তুলে দিতে পেরে আমরা ঋদ্ধিমান। আড়ালে থেকে প্রায় ৮ মাস কাজটা শিখছিলো, কাজটা করছিলো। তাই যোগ্য ওকে চেয়ারটা দেওয়া ঋষির অলিখিত প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব। তাই এই সিদ্ধান্ত।
অতএব আপাতত টাটা। সাহিত্য ZONE এর পাতায় আর নিয়মিত দেখা হবে না। মাঝেমধ্যে দেখা অবশ্যই করবো কথা দিলাম। এই জার্নির আমার লেখা এটাই আপাতত শেষ সমীপেষু। সমীপেষু চলবে এবার থেকে শ্রী, মানে আপনাদের সোমার হাত ধরে।
মর্যাদা আর সম্মানের খেলাটা দেখলে তো! বন্ধুত্ব এক্ষেত্রে ভিক্ষা না করে বিশ্বব্যাংকের কাছে লোন চাইলো। আর আমাদের বিশ্বব্যাংক তো তোমরা — আমাদের লেখক লেখিকা আর পাঠক পাঠিকারা। ভালো থাকো, আনন্দে থাকো। আরও বড় খবর আছে নতুন বছরের শুরুতেই। এই তো আর কদিন, তারপর আরও বড় লড়াই
সমীপেষু, সুখে থেকো।

শাল্যদানী

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।