কবিতায় শুভ্রদীপ রায়

মৃতগন্ধী

মৃত্যুর গন্ধ পাই।এখনও পাই।এই কিছুদিন আগেও আমার ঘর ভরে গিয়েছিল সেই নীলাভ গন্ধে। শুনতে পাই দূরে কয়েকটা রাতজাগা কুকুর। কিছু একটা মারা যাচ্ছে। আমাদের সম্পর্ক নাকি আমাদের শরীর! শরীর- এই শব্দটা একটা কুহক যেন। যোগমুদ্রায় ফুটিয়ে তুলতে চাইছি দেহত্যাগের বিভঙ্গ। ব্যর্থ হচ্ছি কয়েক শতাব্দী ধরে। চেষ্টা!

ঘর ভরে যাচ্ছে হাসপাতালের গন্ধে। তীব্র ফিনাইলের সুবাসে আমার অন্তরতম ঘরে ফুটে উঠছে লাইল্যাক। সিগারেটের ধোঁয়ায় মেটাতে চাইছি সেইসব ট্রেইল। মায়া বাড়ছে।ফুটন্ত চুল্লিতে সাঁতলে নিচ্ছি নিজেরই খোলনলচে। পুড়ছি না।তবে কী মোক্ষ পেয়ে গেলাম!

বিস্মৃতির নদী পেড়তে পারলেই কি মুক্তি? কয়েক ঘরে বসত করে এখন এক অদ্ভুত মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে আছি।এখান থেকে সবই দেখা যায়। দৃষ্টি পরিষ্কার। তবুও বিহ্বল আমার চেতনা। বুঝতে চাইছি এই রোগের সম্ভাব্য নিরাময়। ডাক্তার বলছেন আপনি অলফ্যাক্টরি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন। মনে হয় অনন্ত এক রাস্তায় সেই একমাত্র হমসফর। আচমকা আসা বন্যায় সেই আমার একমাত্র খড়কুটো।

এই সব ভাবতে ভাবতে কয়েক শতাব্দী পেড়োল। এখন আমার নতুন শরীর,নতুন ঘর। অথচ গত রাত্রে প্রতিটা জানলা প্রতিটা দরজা কেঁপে উঠল সেই মৃত্যুর গন্ধে। আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছি তাকে আটকাবার।অবশেষে ভোররাতে ক্লান্ত হতেই বিছানা তার আশ্রয়ে নিল । চারিদিকে মনিটর, ঝুলন্ত নল আর একঘেয়ে বিপ বিপ বিপ বিপ…

মৃত্যুর গন্ধ পাই।হঠাৎ হঠাৎ সমস্ত ঘর ভরে  যায় সেই পুঁতিগন্ধে। দম আটকে আসে,মনে হয় হাসপাতালের ফাঁকা করিডোরে একা দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশ ঘিরে রেখেছে অজস্র লাশ।  দুবেলা নিয়ম করে সুগন্ধী আতরে ডুবে থাকি,অথচ মাথার ভেতর সেই মৃতগন্ধের চাষ। চারিদিকে দেগে দেওয়ার একটা খেলা চলছে,টের পাই। কিন্তু এতদিনে দাগাদাগি কাটাকুটির খেলা ফুরিয়ে  যাওয়ার কথা ছিল।হয়ত আমার মত সকলেই সেই মৃতগন্ধ বুঝতে পারছে। ভূতগ্রস্তের মত সবার চলন।তাও আমি ছিপ ফেলে বসে থাকি,  যদি এক দুটো জীবন উঠে আসে।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!