গল্পেরা জোনাকি তে সুতপা পূততুণ্ড

ইন্দু

ইন্দুলেখা পরিবারের সর্বময়ী কর্ত্রী৷সারাটা জীবন সংসার সংসার করেই চলে গেল।স্বামী কোনদিন বুঝতেই চায়নি তাকে। একান্নবর্তী পরিবার৷ বিয়ের পরপর শাশুড়ী মাতা বিছানায় পড়েন ৷ ছোট দেওর তখন সবে কলেজে ঢুকেছে৷ খুব বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। কিন্তু সংসারে কী সবকিছু নিয়ম মেনে হয়৷ ছোট দেওরকেও বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল৷ সরমা ইন্দুলেখার একমাত্র বোন I সে প্রচুর চেষ্টা করেছিল তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু সব চেষ্ঠা বৃথা যায়৷ পুরো ঘটনাটা জানত পদ্মা৷খুব ছোটবেলায় তার মা এখানে দিয়ে যায় কাজ করার জন্য ।

আজ সংসারে চাপে ভারাক্রান্ত ইন্দুলেখা ৷ছেলেমেয়েরা বিদেশে৷তারা তাদের মাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারে নি ৷ ইদানিং বিকেল হলেই সুন্দর পাট ভাঙা(১০০) শাড়ি ,হাতে রাগা ঘড়ি হাতে দিয়ে বেরোয়৷বয়স মনের ওপর প্রভাব ফেললেও তার শরীরে ওপর প্রভাব ফেলতে পারেনি৷ আর এই বায়রে বেরোনোটা ভালো চোখে দেখে না তাঁর স্বামী ৷

পুরুষ মানুষের ইগো সমস্যা থাকে খুব! তারা ইগোর খোলোশ ছেড়ে বেরোতে পারে না।
নির্মলেন্দুও তার বাইরে নয়!
ইন্দুলেখার কথা বলার ধরন সবাই পছন্দ করত,কথার ওপর দখল ছিল ভালো,কাজের মানুষ থেকে আত্মীয় স্বজন,এমন কি ছোট ভাই কমলেন্দুও বৌদি কে খুব পছন্দ করত!ইন্দুও দেওরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পাতিয়ে ছিল, কমলের কথাবলা ইন্দুকে আকর্ষণ করত,কমল ভালো কবিতা লিখত! ইন্দু সেই খাতা একদিন দেখে ফেলেছিল,কমল খুব(১০০) লজ্জায় পড়ে গিয়েছিল,সেই থেকে নতুন কিছু লিখলেই বৌদি পড়ে শোনানোর জন্য ছটফট করত! কবিতার মর্ম সবাই বোঝে না,ইন্দু ওর দাম দিত,কমল অপেক্ষা করে থাকত,কখন বৌদির সময় হবে।
দুপুরের দিকে ইন্দু পান মুখে দিয়ে ছাদে আচার তুলতে যেত,সেই সময় কমল কবিতা পড়ে শোনাত,ঐ সময়টুকুই ইন্দু লেখার একান্ত আপন ছিল!
একদিন নির্মল বাবু সেরেস্তা থেকে বাড়ি ফিরে ধুমপান করতে ছাদে যায়,গিয়ে হাসির শব্দ শোনে কমলের হাসি না? ও হাসতেও জানে? তাও আবার ইন্দুর সাথে খোশ মেজাজে!
নির্মল ভালো চোখে দেখে না! ইন্দু কে দুটো কথা না শুনিয়ে ছাড়ে না।
কমল দাদা কে ভয়(১০০) পায়,দাদার কথা শুনে নিজের ঘরে চলে যায়,ইন্দু কিছুক্ষণ স্বামী সেবা করে ঘরে আসে।
পদ্মা ইন্দুর চুল বেঁধে দেয় পরিপাটি করে,আলতা পরিয়ে দেয়,ইন্দুর সিঁথিকাটা চুলে চওরা সিঁদুর পরে,লাল জরির ফুল তোলা শাড়ি পরে নুপুরের ঝমঝম আওয়াজ তুলে সিঁড়ি বেয়ে স্বামীর ঘরে যায়,স্বামী নির্মল তখন সুখ নিদ্রা গিয়েছেন,ইন্দু পায়ে রসুন তেল মালিশ করে দেয়,স্বামী আধোঘুমেই কথা বলে ওঠে,আবার কি চাই গিন্নি? এইত সেদিন ছ গাছা চুরি গড়িয়ে দিলাম,ইন্দু বল্ল আহা আমি বুঝি শুধু গয়না চাই,ওতো তুমি না চাইতেই দাও,আমি আর কত পরব?
আমার অন্য আর্জি ছিল! আমি বাপের ঘরে থাকতে(১০০) গান শিখেছিলুম,আবার শিখতে চাই গো,ভাঙা হারমোনিয়াম টা না হয় সারাই করে দিও!
কী? তুমি এই বয়েসে গান গাইবে ভ্যা ভ্যা করে পাড়ায় আমাদের কত মান ইজ্জত আছে জানো? ইন্দু চুপ হয়ে যায়!
নির্মল বাবু বলেন বুঝেছি ঐ কমল তোমার মাথা চিবিয়ে খাচ্ছে! দাঁড়াও ওর একটা ব্যবস্থা করছি! বলেই নির্মলেন্দু পা টেনে নেয়,যাও এখন, বিরক্ত কোরো না,ইন্দু কিছু বুঝে ওঠার আগেই কড়া নাড়ার শব্দ! বৌ ঠাকুরণ!
পদ্মার গলা না?
ইন্দু তরিঘড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়!
সরমা এসেছিস? খুব ভালো হয়েছে,হ্যে রে ও বাড়ির খবর কি? মা কেমন আছে রে? আর বাবার কাশিটা সেরেছে?
পদ্মা আরে বৌ মনি দাঁড়াও ত একটু জিরিয়ে(১০০) নাও,এত পোশনো কইরলে দিদিমুনি উত্তর দেবে কেমনে?
সরমা, হ্যা রে দিদি সবাই ভালো আছে, বাবা কবিরাজি ওষুধ খেয়ে সুস্থ আছে,তুই কেমন আছিস বল,আমার পরীক্ষা শেষ,তাই চলে এলাম! বেশ জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে! তুই আমি আর কমলেন্দু, আর পদ্ম চা আর ভাজা বানিয়ে দেবে,কিরে তাস গুলো আছে ত?
কি রে জামাইবাবু কই?
ইন্দু, ঘরে আছে, যা…
সরমা মিষ্টি আর দৈ এর হাঁড়ি পদ্মর হাতে দিয়ে দিদির ঘরের দিকে পা বাড়ালো…
ইন্দু খাবার টেবিলে সব গুছিয়ে রেখে পদ্মকে দিয়ে সবাই কে ডেকে পাঠালো,যে যার চেয়ারে বসলো,খাওয়া শুরু হতেই নির্মলেন্দু কমলেন্দু কে জিজ্ঞেস করলো,এবার(১০০) কি করবে ভাবছো? ব্যবসা দেখবে না আরো পড়বে,
কমল, আপনি যা বলবেন দাদা।
সরমা,মানে কমল দা তোমার কোনো ইচ্ছা নেই? তুমিই ত বলেছিলে আর্ট কলেজে ভর্তি হবে?
নির্মলেন্দু, ওসব শিখে কি হবে? রোজগার হবে? কিছু?
ইন্দু,আচ্ছা এখন থাক না,
নির্মল, তুমি এসবের কি বোঝো? ক লিখতে ত কলম ভাঙে!
ইন্দু এই অপমানের জবাব দিল না,খাবার পরিবেশন করে রান্না ঘরে চলে গেল!ভেজা
চোখের কোণ দুটো শুধু পদ্ম দেখতে পেল!
বৌ ঠাকুরন তুমি এত চুপ করে থাকো বলেই কত্তাবাবু তোমায় পায়ে পেশে!
ইন্দু,চুপ কর মুখপুড়ি,যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা!
বিকেলে সরমা, কমল,(১০০) ইন্দু ছাদে উঠেছিল,কিন্তু ইন্দুর অনিচ্ছায় খেলা হলো না,সরমা বোঝালো কি করবি দি,এই জন্যেই আমি বিয়ে করতেই চাইনা,কমল গভীর দৃষ্টি দিয়ে সরমার চোখের দিকে চেয়ে রইল! সরমা দেখে বল্ল আপনিই দাদার দলেই নাম লেখাবেন মশাই,সব জানা আছে,পুরুষ চরিত্র।
কমল উত্তর না দিয়ে চশমার ফাঁক দিয়ে একবার দেখে নিচে নেমে গেল।
দিন তিনেক পর সরমার সাথে ওর জামাই বাবুর খুব তর্ক বেঁধে যায়,কমলের ভবিষ্যত নিয়ে, সরমা কমলের বিদেশে ল’ পড়তে যাওয়ার বিরোধিতা করে,কিন্তু নির্মলেন্দু নাছোড়বান্দা।
কমল বিদেশে চলে গেলে নির্মলেন্দু বেশ মনে মনে প্রশান্তি লাভ করে!
সরমা শান্তিনিকেতনএ পড়তে চলে যায়,নির্মলেন্দু(১০০) সেরেস্তার কাজ এ বেড়িয়ে যায়,সারাদিন শুধু পদ্ম ইন্দু আর অসুস্থ শ্বাশুড়ি।
পদ্মর মা ওর বিয়ে ঠিক করলে,পদ্মও চলে যায়,চোখের জল মুছতে মুছতে।
ইন্দু নিজেকে অনেক গড়ে পেটে নিয়েছে,ছেলে মেয়েদের দৌলতে,ইংরেজি বলতে পারে,কিটি পার্টিতে যায়,বয়েস বোঝা যায় না,বেশ টানটান চেহারা। নির্মলেন্দু নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে,সেরেস্তা চালায় এক বিশ্বাসী কাকা,মেয়ের লন্ডনে বিয়ে হয়েছে,ছেলেও বিদেশে পসার জমিয়েছে,ইন্দু কিটি পার্টি তে যায় ঠিকই,কিন্তু ভীড় এর মাঝে একা।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।