গারো পাহাড়ের গদ্যে এস এম শাহনূর (পর্ব – ৫)

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য শাহজাদপুর / কাচারি বাড়ি

‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে,
সব গাছ ছাড়িয়ে,
উঁকি মারে আকাশে।’
কবিতাটির সঙ্গে স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২৫ বৈশাখ ১২৬৮—২২ শ্রাবণ ১৩৪৮), পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশে ১৮৯০ সালে পূর্ববঙ্গে আসেন। এরপর টানা প্রায় ১০ বছর (১৮৯০-১৯০০) পূর্ববঙ্গের শিলাইদহ-শাহজাদপুর-পতিসরে জীবন অতিবাহিত করেছেন, গ্রহণ করেছেন নানা কর্মোদ্যোগ, প্রতিষ্ঠা করেছেন অনেক প্রতিষ্ঠান। জমিদারির কাজেই তিনি প্রথম শাহজাদপুরে আসেন, ১৮৯০ সালে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু স্মৃতিবিজড়িত শাহজাদপুর কাছারিবাড়ি। (রবীন্দ্রনাথ অবশ্য ব্যবহার করেছেন সাজাদপুর বানান) এটি অষ্টাদশ শতাব্দীতে ছিল নীলকরদের কুঠি (‘কুঠিবাড়ি’ বলে পরিচিত)।
১৯৬৯ সনে অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় ‘কাছারিবাড়ি’ ভবনটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।সেই থেকে বর্তমানে এটি রবীন্দ্র জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৮৪০ সনের আগে এই অঞ্চলটি নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারীর অংশ ছিল।১৮৪০ সনে শাহজাদপুর জমিদারি নিলামে উঠে।সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র তের টাকা দশ
আনায় এ জমিদারী কিনে নেন। সেই থেকে কাছারি বাড়িটিও জমিদারীর অংশ হয়ে উঠে। ‘মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনীতে পাওয়া যায় যে,১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ৯ জানুয়ারী যখন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রথম বিলাত যাত্রা করেন তার পূর্বেই সাহেবদের নীল কুঠি ঠাকুরদের হাতে আসে।কবি রবীন্দ্রনাথ এই কুঠি বাড়ির দোতলায় বসে সাহিত্য রচনা করতেন।'[১]

কাছারি বাড়িটি ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ৭ কক্ষ ও ৩১ দরজা বিশিষ্ট একটি দ্বিতল ভবন। নিচের তলাতে তিনটি কক্ষ, দোতালায় ওঠার জন্য একটি প্যাঁচানো সিঁড়ি নিচতলা থেকে উপরে উঠে গেছে।দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ রয়েছে।আছে একটি সিঁড়ি ঘর। নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ নীলকর সাহেবদের আদি অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

কবিগুরু শিলাইদহ ও পতিসরেই অধিকাংশ সময় অবস্থান করেছেন। কুষ্টিয়া থেকে এখানে মাঝে মাঝে আসতেন।অস্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। স্থায়ী ভাবে বাস করতেন শিলাইদহের কুঠি-বাড়ি ।

প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি পান। ১৮৯৭ সালে কবির বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি ভাগাভাগি করে দিলে কাকা জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুর, বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহ এবং কবি নিজে পতিসরের দায়িত্ব পান। এরপর তিনি আর শাহজাদপুরে আসেননি।
কাছারি বাড়িতে রক্ষিত অর্ডার বুক থেকে জানা যায়, জমিদারি দেখা শোনার কাজে কবিগুরু ১৮৯০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম শাহজাদপুর আসেন। ১৮৯৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত (প্রায় ৭ বছর) বিভিন্ন সময়ে তিনি এখানে এসেছেন।

শাহজাদপুরের বিচ্ছেদ স্মরণ করে কবি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত ‘যাচনা’ কবিতা।
১৩০৪ বঙ্গাব্দের ৮ আশ্বিন পতিসর যাবার পথে কবির নৌকা ভিড়েছিল কাছারি বাড়ির আঙিনায়। ভালবাসার শাহজাদপুর বিচ্ছেদ স্মরণে এই কাছারি বাড়ির আঙিনায় বসে সেদিন লিখেছিলেন,

“ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো, তোমার মনেরও মন্দিরে।
আমারও পরানে যে গান বাজিছে তাহার তালটি শিখো, তোমার চরণ মঞ্জিরে।”
এরপর আর কবির পদধূলিতে মুখরিত হয়নি গানের এই সখী রূপী কাচারী বাড়ির প্রাঙ্গণ।

শাহজাদপুর ঘেঁষে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। কুঠি বাড়ির সামনে দিয়ে বহমান করতোয়া আর বড়াল নদীর সংযোগ স্থাপনকারী শাখা নদীটি এখন ভরাট। অথচ একসময় এই নদী দিয়ে ‘চিত্রা’ ও ‘পদ্মা’ বোটে কবি যাতায়াত করতেন। এ নদীর রূপ সৌন্দর্য দেখেই একদিন রবীন্দ্রনাথ লিখেন,
‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে,
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।’
এখানকার যমুনা, বড়াল, করতোয়া, হুরাসাগর নদী- অনতিদূরে চলনবিল রবীন্দ্র সাহিত্যের বিশাল স্থান দখল করে আছে।

কবির লেখা ‘ছিন্নপত্র’ ও ‘ছিন্নপত্রাবলী’তে অত্যন্ত প্রিয় ও ভালোবাসার স্থান শাহজাদপুরের প্রতি গভীর আবেগ ও আন্তরিকতার প্রকাশ ঘটেছে। ১৮৯৪ সনের ৫ সেপ্টেম্বর শাহজাদপুর থেকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘ এখানে (শাহজাদপুরে) যেমন আমার মনে লেখার ভাব ও ইচ্ছা আসে এমন কোথাও না।’’ (ছিন্নপত্র- পত্র সংখ্যা-১১৯)।

ছিন্নপত্রাবলীর ১৪৯ নম্বর চিঠিতে কবি লিখেছিলেন, ‘এখানে (শাহজাদপুরে) যেমন আমার মনে লেখবার ভাব এবং লেখবার ইচ্ছা আসে এমন আর কোথাও না।’

এই চিঠিতেই তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘আমার এই শাহজাদপুরের দুপুর বেলা গল্পের দুপুর বেলা।মনে আছে ঠিক এই সময়ে এই টেবিলে বসে আপনার মনে ভোর হয়ে পোস্টমাস্টার গল্পটা লিখেছিলুম। আমিও লিখছিলুম এবং আমার চার দিকের আলো এবং বাতাস এবং তরুশাখার কম্পন তাদের ভাষা যোগ করে দিচ্ছিল। এই রকম চতুর্দিকের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিশে গিয়ে নিজের মনের মতো একটা কিছু রচনা করে যাওয়ার যে সুখ তেমন সুখ জগতে খুব অল্পই আছে।’

শাহজাদপুর সম্পর্কে ১৫০ নম্বর চিঠিতে কবি আরও লিখেছিলেন, ‘আমি এর মোহ থেকে কিছুতেই আপনাকে ছাড়াতে পারি নে। এই আলো, এই বাতাস, এই স্তব্ধতা আমার রোমকূপের মধ্যে প্রবেশ করে আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। এ আমার প্রতিদিনকার নতুন নেশা, এর ব্যাকুলতা আমি নিঃশেষ করে বলে উঠতে পারি নে।’

১৯৪০ সালে শাহজাদপুরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হরিদাস বসাকের চিঠির জবাবে কবি লিখেছেন,‘শাহজাদপুরের সাথে আমার বাহিরের যোগসূত্র যদিও বিচ্ছিন্ন তবুও অন্তরের যোগ নিবিড়ভাবে আমার স্মৃতির সঙ্গে জড়িত। আমার প্রতি সেখানকার অধিবাসীদের শ্রদ্ধা এখনো যদি অক্ষুন্ন থাকে তবে আমি পুরস্কার বলে গণ্য করব’’ (শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ-মোহাম্মদ আনসারুজ্জামান)।

✪ শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের বিশেষ
রচনা:
“সোনার তরী” কাব্যের ‘দুই
পাখি’, ‘আকাশের চাঁদ’, ‘লজ্জা’, ‘পুরস্কার’, ‘হৃদয়
যমুনা’, ‘বৈষ্ণব কবিতা’, ‘ব্যর্থ যৌবন’, ‘ভরা
ভাদরে’, ‘প্রত্যাখ্যান’ ইত্যাদি, চিত্রা কাব্যের চিত্রা, শীতে ও বসন্তে, নগর সঙ্গীত। চৈতালী কাব্যের যাত্রী,
তৃণ, ঐশ্বর্য, স্বার্থ, প্রেয়সী, নদীযাত্রা, মৃত্যু
মাধুরী, স্মৃতি, বিলয়, প্রথম চুম্বন, শেষ চুম্বন, শান্তি মন্ত্র, কালিদাসের প্রতি, কুমার সম্ভব গান,
মানসলোক, কাব্য, প্রার্থনা, ইছামতি নদী,
শুশ্রুষা, আশিষ গ্রহণ, বিদায়। “কল্পনা” কাব্যের নর
বিবাহ, লজ্জিতা, মানস প্রতিভা, বিদায়,
হতভাগ্যের গান, যাচনা, কাল্পনিক, সংকোচ।

✪ বিখ্যাত ছোট গল্প:
পোস্ট মাস্টার,
রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা,
ব্যবধান,
তারাপ্রসন্নের কীর্তি,
ছুটি,
সমাপ্তি,
ক্ষুধিত পাষাণ,
অতিথি।

এছাড়াও
চৈত্রালীর ২৮টি কবিতা,
ছিন্ন পত্রাবলীর ৩৮টি
পত্র,
প্রবন্ধ পঞ্চভূত এর অংশ বিশেষ,
বাংলা সাহিত্যের চিরকালের স্মরণীয় কাব্যনাটক বিসর্জন।

রচনা করেছেন বাঙালির প্রেম,সৌন্দর্য ও বেদনার শিল্পিতা স্মরণীয় কিছু গান। এসব গানের মধ্যে আছে ‘কেন যামিনী না যেতে জাগালে না’,
‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’,
‘যদি বারণ করো’,
‘হেরিয়া সজল ঘন নীল গগনে’,
‘ভালোবেসে সখি নিভৃত যতনে’ ইত্যাদি।

➤শাহজাদপুর বসবাসকালে তিনি একের পর এক রচনা করেছেন উজ্জ্বল সব সাহিত্যকর্ম—বললেন এই কথা, ‘পৃথিবীর অনেক জায়গায় বসে লিখেছি, কিন্তু সাজাদপুরের মতো লেখার প্রেরণা আমি আর কোথাও পাইনি।’
‘‘নদী ভরা কূলে কূলে, ক্ষেত ভরা ধান।
আমি ভাবিতেছি বসে কি গাহিব গান।
কেতকী জলের ধারেফুটিয়াছে ঝোপে ঝাড়ে,
নিরাকুল ফুলভারে বকুল-বাগান।
কানায় কানায় পূর্ণ আমার পরাণ’’
(ভরা ভাদরে- সোনার তরী)

➤কবির ‘ছেলে-ভুলানো ছড়া’য় শাহজাদপুরের তেলিপাড়ায় ছবি শিল্পিতা পেয়েছে।
‘খোকা যাবে বেড়ু করতে তেলিমাগীদের পাড়া।/ তেলিমাগীরা মুখ করেছে কেন রে মাখনচোরা।/ ভাঁড় ভেঙেছে, ননী খেয়েছে, আর কি দেখা পাব।/ কদমতলায় দেখা হলে বাঁশি কেড়ে নেব।’

➤বাংলা গদ্যসাহিত্যের ধারায় চিরকালের স্মরণীয় নির্মাণ ‘ছিন্নপত্র’ বাংলাদেশের এক মানসমূর্তি।
ছিন্নপত্র-এর ১৪৪-সংখ্যক পত্রে ‘অতিথি’ গল্পের প্রেক্ষাপট বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ শাহজাদপুরকে তুলে ধরেছেন এভাবে:
‘একটু একটু করে লিখছি এবং বাইরের প্রকৃতির সমস্ত ছায়া আলোক বর্ণ ধ্বনি আমার লেখার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। আমি যে সকল দৃশ্যলোক ও ঘটনা কল্পনা করছি তারই চারিদিকে এই রৌদ্রবৃষ্টি নদীস্রোত এবং নদীতীরের শরবন, এই বর্ষার আকাশ, এই ছায়াবেষ্টিত গ্রাম, এই জলধারা প্রফুল্ল শস্যের ক্ষেত ঘিরে দাঁড়িয়ে তাদের সত্যে ও সৌন্দর্যে সজীব করে তুলেছে।’

শাহজাদপুরের বাথানভূমির সঙ্গে জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথের নাম। গরু চরানোর মাঠের অভাবের কথা চাষিদের কাছে শুনে রবীন্দ্রনাথ বুড়িপোতাজিয়া ও রামকান্তপুর মৌজার প্রায় ১২০০ একর জমি গোচারণের জন্য লাখেরাজ দান করেন। সে জমিতে এখনো বাথান আছে, আছে শত শত গরু। এই বাথানভূমির একটা অংশে, ২০০ একর জমিতে গড়ে উঠবে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। রবীন্দ্রনাথ যে গোচারণের জন্য জমি দিয়েছেন, তা নয়—উন্নত ভালো জাতের ষাঁড় এনে গাভি প্রজননের মাধ্যমে উন্নত গোসম্পদ সৃষ্টির ব্যবস্থা করেছেন। এখনো সেই গাভির জাত শাহজাদপুরে রয়েছে, যে গাভির দুধ দিয়ে চলছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘মিল্ক ভিটা’।

➤শাহজাদপুর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘এখানকার দুপুর বেলাকার মধ্যে বড়ো একটি নিবিড় মোহ আছে। রৌদ্রের উত্তাপ, নিস্তব্ধতা, নির্জনতা, পাখিদের বিশেষত কাকের ডাক, এবং সুদীর্ঘ সুন্দর অবসর—সবসুদ্ধ জড়িয়ে আমাকে ভারি উদাস ও আকুল করে।’ (ছিন্নপত্র)। এই উদাস ও আকুল করা ভূপ্রকৃতিই শাহজাদপুর পর্বে রচিত রবীন্দ্র-সৃষ্টিশীলতায় নিয়ে এসেছে দার্শনিকতার ঋদ্ধি। শাহজাদপুর মানুষের প্রতি ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ করেছে কবি রবীন্দ্রনাথকে। সোনার তরী কাব্যের ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন:
‘এইখানে নির্জন-সজনের নিত্যসংগম চলেছিল আমার জীবনে। অহরহ সুখদুঃখের বাণী নিয়ে মানুষের জীবনধারার বিচিত্র কলরব এসে পৌঁচচ্ছিল আমার হৃদয়ে। মানুষের পরিচয় খুব কাছে এসে আমার মনকে জাগিয়ে রেখেছিল। তাদের জন্য চিন্তা করেছি, কাজ করেছি, কর্তব্যের নাগ সংকল্প বেঁধে তুলেছি, সেই সংকল্পের সূত্র আজও বিচ্ছিন্ন হয়নি আমার চিন্তায়।’

কাছারি বাড়ির নিচের তিনটি ঘর এবং উপরের চারটি ঘর রবীন্দ্রনাথের আলোকচিত্র ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। নিচের ৩টি ঘরই আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে।প্রথম ঘরে রবীন্দ্রনাথের নিজের এবং তার পরিবারের ছবি দিয়ে সাজানো। এখানে তার শৈশব এবং কৈশোরের ছবি সহ যৌবনের অনেক আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। দ্বিতীয় ঘরটিতে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন বয়সের ছবি এবং হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে তার সাক্ষাতের ছবি
দিয়ে সাজানো। উল্লেখযোগ্য ছবি হল তার ব্যবহৃত বোট পদ্মা, মহাত্মা গান্ধীর সাথে রবীন্দ্রনাথ,আমার শেষ বেলার ঘরখানি, পদ্মাসনে উপবিষ্ট রবীন্দ্রনাথ, বার্ধক্যে রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি। তৃতীয় ঘরটি রবীন্দ্রনাথের আঁকা বৃক্ষ রাজী, নৈসর্গিক দৃশ্য, উপবিষ্ট চিত্র,মুখ নিরীক্ষা, বিভিন্ন রকমের প্রতিকৃতি।

দ্বিতীয় তলার প্রথম ঘরে আছে কবির
ব্যবহৃত পালকি, চিঠি লেখার ডেক্স, কাঠের
আলনা, পড়ার টেবিল, দেয়ালে কবির বিভিন্ন সময়ে
তোলা আলোকচিত্র ও পাণ্ডুলিপি, জ্যামিতিক
নকশা ইত্যাদি। এর পরের ঘরে রয়েছে ড্রেসিং
টেবিল,শ্বেত পাথারের গোল টেবিল, টেবিল
বেসিন, কাঠের আলনা, দেবতার আসন, হাতল যুক্ত কাঠের চেয়ার, কবির ব্যবহৃত কাঠের বড় টেবিল। পরের ঘরে রয়েছে সোফা, হাতল যুক্ত কাঠের চেয়ার, কাঠের গোল টেবিল ইত্যাদি। এর পরের ঘরে রয়েছে
বিছানা, হাতল যুক্ত কাঠের চেয়ার ইত্যাদি।
এছাড়াও আরও আছে বিভিন্ন রকমের কেরোসিনের বাতি, মোম দানী, অর্গ্যান, চিনামাটির বাসনকোসন,
দেয়াল ঘড়ি, ব্রোঞ্জের তৈরি বালতি, রান্নার
পাতিল,ঘটি ইত্যাদি।

জাদুঘরে ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ২৮ ভাদ্রে লেখা শত বছরের পুরনো একটি চিঠি রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই চিঠি জাদুঘরটিকে সমৃদ্ধ করেছে। চিঠিটি নওগাঁ থেকে সংগৃহীত। ভবনটির পশ্চিমে বকুল গাছের গোড়ায় বৃত্তাকার বাঁধানো একটি মঞ্চ আছে। এটি ‘রবীন্দ্র মঞ্চ’ বলে পরিচিত।

২০১৮ সাল থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে দেশের ৩৫তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’-এর যাত্রা শুরু হয়েছে।

➤তথ্য ঋণ:
[১] শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ।। নরেশচন্দ্র চক্রবর্তী
দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা,জুলাই ১৯৮০ইং
[২] শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ প্রবন্ধ।। বিশ্বজিৎ ঘোষ
দৈনিক প্রথম আলো,৩ আগস্ট ২০১৮।

লেখক: কবি ও রবীন্দ্র জীবনী গবেষক।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।