কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সৈয়দ মিজানুর রহমান (পর্ব – ১)

অনন্ত-অন্তরা

(প্রথম খন্ড)
চির স্বপ্নের কায়া হৃদয়ে পোষণ করে চলেছে আজো তৃষ্ণার জল খুঁজে পাইনি । কতজনে কত পরিচয় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘড়ায় তোলা জলে সমুদ্রের মত বিশালতা খুঁজে পায়নি,আঁখি ভরে তবু হৃদয় জল শূন্য তৃষ্ণার আহাকার । এই অনন্ত আহাকার থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে চাইছে । কিন্তু পারছে কই- “কথা্য বলে না ধর্মের ঢোল আপনি বাজে” ফেসবুক,ইয়াহো,মেসেঞ্জারের মতো অনেক সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেশ সাড়া পড়েছে জনমনে, অনন্তের কৌতহল জেগে উঠলো যে ভাবা সেই কাজ বন্ধুরের সহযোগিতায় ঐ আইডিগুলি বানিয়ে শুরু করলো অবসর সময়ে ফেসবুকে বিচরণ লেখালেখি কমেন্ট লাইক একটু একটি করে ভাললাগা শুরু হলো । একটা সময় অধর্য হয়ে না দেখে এক চাটিয়া ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে শুরু করলো আবার বেগতিক কিছু মনে হলে আনফ্রেন্ড করতে সময় নিত না । একদিন ঘুম থেকে উঠতেই কেন যেন মনটা খারাপ লাগছিল কোন ভাবে মনকে স্বাভাবিক করতে পারছিল না কোথায় যেন কম পড়েছে সে নিজেও জানে না তবে কম যে পড়েছে সেটা নিশ্চিত তবে সেই সাথে জীবনের ঘানি টানার কাজ বেড় গেল
ফোনের পর ফোন এসে, অপ্রস্তুত মনে সেই চাপ সামলানো কতটা কঠিন তবু উদ্ধার করতে হতেছিল অতিরিক্ত সময়ে । কাজ শেষ বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে মনটাকে চাঙ্গা করতে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে চায়ের দোকানে বসলো । বন্ধুরা বেশ জমজমাট বিতর্ক করছিল, সারাদিনের পরিশ্রমের পর এই কথাগুলি যেন গজগজ করে কানে বিঁধছিল ঠিক নিতে পারছিল না সে । সঙ্কর কাছে এসে বলল কী খাবেন দাদা কিছু দেই? আমি বললাম অন্য কিছু না শুধু “সে-ই” চা নিয়ায় নিশ্চয় এতক্ষণে ভ্রু কুচকিয়ে ফেলেছেন! আমি খাঁটি গরুর দুধের চা বা কফি কাঁচাপাতি দিয়ে পান করতে সে-ই পছন্দ করি সেই থেকেই সে-ই নামে আমার পছন্দের চা বা কফি ওর কাছে পরিচিত ছিল । চা পান করতে করতে রাজনৈতিক ফ্রী লেকচার শুনতে লাগলাম গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, অতি বিপ্লবী, প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দেশে রাজাকারের ঠাই বেশ মুখরোচক লাগছিল কারণ যত ভারী কথা কাজে ততটা ভারী প্রমানহীন ছিল – উপায় ছিলনা না শুনে শুধু সে-ই চায়ের জন্য সহ্য করে শুনতে হলো চা শেষে ইশারায় বিদায় নিলাম । বসন্তের মুখরিত সন্ধ্যায় উজান হাওয়ার বুক চিতিয়ে ফাল্গুনের পরশ নিতে নিতে স্বপ্ন এলো মনে । বাসায় ঢুকেই
ভাল্লাগার ফেসবুকে হাজির হলাম- বন্ধুদের কে কে অনলাইনে আছে দেখতে দেখতে
একটি সবুজ বাতির দিকে আনমনে চোখ পড়ে যেতেই মনটা কেমন করে উঠলো নাম পড়ে বড় রোমান্টিক মনে হল নামটি, নাম তার অন্তরা !! এই চোখ দুটি ওখানেই
স্থির হয়ে সিক্স সেন্সের একটি অন্যরকম আলোড়ন হতেই সতিনাথ মুখোপাধ্যায়ের ঐ গান মনে পড়ে গেল “মরমিয়া তুমি চলে গেলে দরদিয়া আমার কোথা পাবো”
উতলা হৃদয়ে এলো বুঝি ফাগুন,
গুনগুনিয়ে যায় বলে কানে কানে
কী মধুর লগন এলো বুঝি আমার সনে
ওগো তুমি কি সেই যার অপেক্ষায় দিন গুনি!
অদেখা সংযোগ অনুরোধ খুঁজে দিলো মোর
সুখ নীড়ের ঠিকানা ।
ধাত্‌ সবুজ বাতি আর নামের প্রেমে পড়ে দেলাম বুঝি? সত্যি কি তাই? হায়রে দৈব কী ভাবছিস একা একা? এই এখানে ছবি দেখার সুযোগ আছে? তাইতো!! অমনি নামের ওপর লেফট্‌ বাটন ক্লিক ভেসে আসলো উৎকণ্ঠিত হৃদয় আর উদ্দীপ্ত চোখের সীমানায় কয়েকটি ছবি কিছু লেখা—চক্ষু ঘুরে দাঁড়ালো ঐ নিস্পাপ আঁখি পানে যেন স্নিগ্ধ ভোরের শিশির ফোঁটা মোহিত নিবিড় ঘুম- খুশীর অশ্রু গড়িয়ে গোরামুখের প্রাণ খোলা নির্লিপ্ত কমল সরস মিঠে হাসির পানে অপলক দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো- এলো চুলে কী মায়ায় বাঁধিল মোরে এক ঘুম নেশায় উঠিল ভেসে মনের প্রতিচ্ছবি ঐ নীলাব রূপ সাগরে সে নরম জল ছুঁয়ে দেখতে ভীষণ ইচ্ছে জাগে । সব মিলিয়ে তৃষ্ণার জলের বুকে অমৃত সুধা ।
হে বিধাতা একি করলে কী ধ্যানে দিলে মোরে মজিয়ে ফুলের সুগন্ধ হৃদয়ে পরাগ দিলে মেখে । মোহিত প্রাণ মোর যে যায় দিসাহারিয়ে মুকুলের নবীনত্বে আঁখি মোর জুড়িয়ে দিলে হৃদয়ে দোলা ।
ভাবছি ইনবক্সে নক করবো কিনা- যদি করি, কী লিখব? যদি উত্তর না দেয়! যদি অন্যকিছু মনে করে লম্পট ভেবে নাক সিটকায় । একটু ভয় ভয় লাগছে কিন্তু মন যে মানছে না মনে মনে এই কথা ভাবতে ভাবতে তন্দ্রা এসে মাথাটা টেবিলে নুইয়ে দিলো ক্লান্তি মোরে অসাড় করিল ঘুমের অজান্তে পরীর দেশে নিল, কী অপূর্ব রাজ্যে হাছনাহেনার মাদক গন্ধে সাদা লালা নীল বাহারী রঙের ফুলের বাগানে পরীবেশে সে যে ঐ দাঁড়িয়ে মৌনতায় এলো চুলে রূপসাগর পূর্ণ চন্দ্রে আলোর বিকিরণ জোস্নার স্নান হৃদয় উঠানে বাদ্যি বাজে প্রেম অনুসরণ । আমি দাড়িয়া আছি অবুজ বালকের ন্যায় তাকিয়ে আছি নির্মল দৃর্ষ্টিতে অপলক চক্ষু যেন নামে না!
যখন এসেছিলি তখন দেখা করেই যেতি তানা হলে আমার এই মিষ্টি মধুর স্বপ্নটা কেন ভেঙ্গে গেলি? আগন্তক নাকি তুমি নিজেই আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলে? আবার দৌরে টেলিবে চলে এলাম দেখি স্ক্রীন অফ হয়ে আছে মাউস ক্লিক করতেই চলে আসলো প্রোফাইলটা ওফ মনটা খারাপ হয়ে গেলে সবুজ বাতি নিভে গিয়েছে বলে ।
চায়ের বড্ড তেষ্টা পেয়েছে ওয়াটা হিটার কেটলিতে সুইজ অন করে কাপটা ধুয়ে আনতে আনতে জল গরম হয়ে গেল- এক মগ দেড় চামচ গোল্ড কফি সাথে কফি মেট ইচ্ছে মতো ঢেলে দিলাম টিং টং শব্দে ঘুটা কী খুসবো!! শীতের রাতে ধুঁয়া উড়া কফির মগে চুমুক দেবার মজাটাই আলাদা মুহূর্তে সতেজ আর চাঙ্গা করতে এর জুড়ি নেই । তবে সে-ই মজাটা আমি বানাতে পারিনা- সে যেন প্রেয়সীর স্বাদে রিনিঝির চুড়ির শব্দে অমৃত সুধা !! চুমুকে চুমুকে অধীর ভাবনা মধুর হয়ে উঠলো ফিরে তাকাতেই দেখি সবুজ বাতি জ্বলে উঠেছে আহা কী আনন্দ মন নেচে উঠলো তাড়াতাড়ি একটি ছবিতে লাইক দিলাম লিখলাম মায়াবী চোখে কী অম্লান মিষ্টি মুখে মধুর হাসি !! সাথে সাথে রেসপন্স এলো ধন্যবাদ – ইস বুকের মধ্যে খচ করে উঠলো মনে হল এই মাত্র দুজনের কথা হল । ইনবক্সে গেলাম লিখলাম হ্যালো- অপেক্ষায় অধীর- বুকের মধ্যে কে যেন হাতুড়ি পিটাচ্ছে ঢিব ঢিব শব্দ ঘেমে যাচ্ছি গরম কফিটা অসয্য লাগছে কিছু ভালো লাগছে না স্বাধহীন হয়ে ওঠেছে ঠোঁটে লেপ্টে থাকা কফি তড়াত একটি শব্দ নেমে এলো তার ছবিটি আমার লেখা বরাবর বুঝে নিলাম আমার লেখা দেখেছে সুতরাং আমার লেখাটা বনলতা সেনের পাখির বাসার মতো দুটি চোখ বুলিয়ে নিয়েছে । অপেক্ষা আরো গাঢ় হয়ে উঠছে নিরাশার বালুচরে কখন ঝরবে সুধা বৃষ্টি অঝরে ! প্রিয় প্রখ্যাত শিল্পী জগন্ময় মিত্রের তুমি আজ কতদূরে গানটি কান পেয়ে বুকভরে নিচ্ছিলাম প্রতীক্ষার দুয়ারে দাঁড়িয়ে ।
যে নারী মোর শয়নে স্বপনে জাগরণে
মায়াবী ছায়ারূপ শিকড় ধরে টানে
কী মায়ার জাদুতে আছো তুমি কতদূরে
এক জীবনের একই স্বপন হৃদয়ে অক্ষত লেখা
কী মায়া মরীচিকা আলো হয়ে দিলে মোরে
কী নেশায় পোড়ালে মোরে!!!!
আজ আমার মন বলছে এই বুঝি সেই নারী যে নারীর অমৃত বাঁধনে সেই
অজানা সময় ধরে বাঁধা পড়ে আছি ।

চলবে…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।