সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৯০)

রেকারিং ডেসিমাল

গোয়া। মাণ্ডভী নদী। আরব সাগরের আছড়ে পড়া ঢেউ।
বাচ্চাদের মা প্রথম আলাপেই প্রেমে পড়ে গেল গোয়ার সবকিছুর সঙ্গে।
পরিস্কার হাওয়ায় নোনা গন্ধ। নানান রকম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য।
কোনটা পাট পাট সিমেন্টের মেজের মত সমতল, কাছের মানুষজন বলে দেয়, এর ওপর গাড়ি চালিয়ে কত কত হিট হিন্দি ফিলিমের শুটিং হয়েছে। কোনটা ঝুরঝুরে বালির, ছেলে মেয়ে ওখানেই আলাপ হওয়া ছোটোদের সাথের বালিতে ঘরবাড়ি বানায়। দুরন্ত ভাই দৌড়ে এসে বালি ছড়িয়ে দিয়ে পালায় দিদিদের মাথায়। হাতাহাতি থামাতে মা বাবা ফিল্ডে নামেন থেকে থেকে। কোন দিকে পাথরের এবড়োখেবড়ো সমুদ্র তটে গর্জনে আছড়ে পড়ে ফেনিল সাগর। ভাই তড়াক করে বাবার ঘাড়ে উঠে পাখিদের মত পাদু’টো গুটিয়ে ফেলে। এইখানে সে নামতে রাজি না। গাড়ি চলে গোয়ার এদিক থেকে ওদিক।
ডোনা পাওলায় বাবা মা মুগ্ধ হয়ে মনে করেন, তাদের সেই প্রিয় সিনেমার জায়গা। কত মিষ্টি গান সব। প্রেমের পরাকাষ্ঠা।

হাম বনে তুম বনে, এক দুজে কে লিয়ে….
বিয়োগান্তক হিন্দি ছবির মত, সত্যিই এখানে দুই বিরহী সাগরে ডুবেছিল। সেই পর্তুগীজ প্রেমের নামেই এখানে মুর্তি ও রয়েছে। পাথুরে পাহাড় টিলা, খাড়াই সমুদ্র।

এখানে ওয়াটার স্কিইং চলছিল। ভাড়ার মোটর স্কি করে স্থানীয় ছেলেরা মাঝসমুদ্র অব্ধি নিয়ে যায় মানুষকে।
বাবা সাঁতার শেখেননি। তাই নামেন না।
দুই ছানার হাত ধরে দাঁড়ান পারে।

মাকে উৎসাহ দেন।

যাও না। জল ভালো বাসো তো।

এক গাল হেসে, মা ওড়নাটা কোমরে শক্ত করে বাঁধেন।

যাই তবে?

ক্ষুদ্র সাইজের বাঙালি ভাবিকে দেখে ঠোঁটে বেঁকা হাসি খেলে মোটর স্কিওয়ালার।

ভাবে এতো সরু এই স্কুটি স্কি ঢেউয়ের এক আছাড়েই কেঁদে কেটে তীরে ফেরাতে বলবে। পয়সা পকেটে রইল।

যত দূরে নিয়ে জিগেস করে, অউর যানা?
মা বলেন, হাঁ হাঁ চলো, অউর চলো।

দেখতে দেখতে খাঁড়ি ছাড়িয়ে বিশাল দিকহীন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় ওঠে নামে সরু পাটাতন থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে।

বাঙালি ডাক্তারনি সব ভুলে যায়।
পিছনে ঘর, বাড়ি, পরিবার, ছেলেমেয়ে… সব মুছে গেছে।
শুধু নিঃসীম আকাশ মাথার ওপর। কোন সীমা নেই। অনন্ত।
আর তার সাথে মিশে এক হয়ে থাকা যতদূর চোখ যায় ছাই ছাই জলের মাথায় সাদা ফেনার মুকুটে সাজানো সাগর।
কিনারা নেই। দিগন্ত নেই। কূলের চিহ্ন নেই।

নেশা লেগে যায় এ নারীর। মনে হয় ডুবে যাই এ অনন্তে।

গাড়িওয়ালার গলায় একটু সমীহ ফোটে।

ভাবি, অব লৌটনা। সাগরকে অউর অন্দর জানা ঠিক না হোগা।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে হাসেন মা।

ঠিক হ্য ভাইয়া, চলিয়ে ওয়াপাস।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।