সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৮১)

রেকারিং ডেসিমাল
সব কেনা হত। গয়না, চুড়িদার সেট বানানোর কাপড়, তাতে কখনো মেশিনে করা এমব্রয়ডারি, কখনও কাঁচ বসানো অপূর্ব গুজরাটি কাজ, আবার কখনো বাঁন্ধনি। বানানোর জন্যে ত রমেশদা আছেন। খুব ভালো কাপড় কিছু ক্ষেত্রে ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের মনোহর অবধি পৌঁছে যায়।
ব্লাউজ পিশ ও দেখা হত। সেই সবে শুরু হচ্ছে কলকাতায় ডিজাইনার ব্লাউজ, এই রকম করেই। কিন্তু সকল মহিলা মহলের, সে ভারি আনন্দের সময়।
ছোটদের নতুন জামা হবার আনন্দ। বড়দের তাদের নতুন জামা পরাবার আনন্দ। নতুন বিছানার ঢাকা, কুশন কভারে ঘর বাড়িতে নতুন রঙের ছিটে লাগানোর আনন্দ।
একেবারেই, প্রমীলা গোষ্ঠীর নিজস্ব আল্লাদ।
নতুন বৌ দেখত, কিছু কেনাকাটা করতে কত ভাবতে হয় গৃহিনীদের।
তার সরকারি চাকুরে মা, অবসরের পরেও পেনশন পান। তাঁকে টাকা চাইতে হবে বলে দ্বিধাগ্রস্ত হতে হয় না। কিন্তু এখানে ইচ্ছেমতো খরচ করা নির্ভর করে গৃহিনীর সংসারী সাশ্রয়ের পটুত্বর ওপর।
তাই, লীলার ভারি কদর।
সে প্রথমেই এক গাল হেসে বলে, লিয়ে লাও না গো। আমি ত পয়সা চাইছি না।
এই বাক্যের যে কি ম্যাজিক আকর্ষণ, যে মহিলা না শুনেছে, বুঝবে না।
আহা, কানের ভিতর দিয়া একেবারে মরমে চলে যায়।
বিজ্ঞ মানুষেরা নিজেকে এবং অন্য মহিলাদের মনে করিয়ে দ্যান বটে।
-ওরে, এইসব শুনিস না। পয়সা চাইনা মানে কি? হ্যাঁ?
ফিরি তে দেবে? কাঁচকলা।
না না, এত কিছু নয়। এই মেয়ে, সরাও তো।
লীলা আবার হাসে।
ও মা, দেখতে ত পয়সা লাগে না। দেখো তো সহি।
আর খাতা আছে ত। লিখে রাখো। দিও না, যত দিনে পারো কিছু কিছু দাও। আমি থোড়ি না তাড়া দিচ্ছি।
এখন বুড়ো ডাক্তারনি ভাবে, এই ছিল একখানা জলজ্যান্ত ক্রেডিট কার্ড।
গুজরাটের ব্যবসায়ী জেনেটিক প্রোটিন কি অবলীলায় ব্যবসায়ের গোড়ার কথা ক্ষুদ্র শিল্পের বীজ হিসেবে পৌঁছে দিত কলকাতার অন্দরমহলে, কোন মূলধন ছাড়াই।
তখনও, শহর কলকাতা ক্রেডিট কার্ড চোখে দেখেনি।
সে হাতে এল আরও বছরখানেক পরে।