বিয়ের তারিখ ঠিক হতেই এক দিন হবু শ্বাশুড়ি কনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সাথে আরও মানুষজন। আংটির মাপ, প্রণামী এটা ওটা নানান দরকারি কথা সবারই ছিল।
হবু বউ বলল, আমি লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়ব বিয়েতে।
আগের দু চারবারের দেখাশোনাতে শ্বাশুড়ি মা বিশেষ কিছু বলেননি।
আজ একটু নড়েচড়ে বসে, খুব গম্ভীরমুখে জোরের সঙ্গে বললেন, না।
মেয়ে একটু মুখ তুলে চাইল এবার।
সে জুনিয়র ডাক্তার, এবং ঠ্যাঁটা ডিবেটিয়ার, রীতিমতো বিদ্রোহকরার সাট্টিফিকেট পাওয়া আঁতেল।
অল-ইন্ডিয়া কলেজ ফেস্টের অনেক ইংরেজি বাংলা তার্কিকতার মেডেল তার মা সযত্নে তুলে রেখেছেন, নাচাগানার মেডেলের সাথে।
সে জবাব দেবে বলে তৈরী হয়েই হাসিসহ মুখ তুলেছিল।
ভদ্রমহিলা তার আগেই একটু অন্যমনস্ক ভাবে ভুরু কুঁচকে বললেন, আমি যে এমন ফর্সা বৌ নিলাম টুকটুকে লাল শাড়ি পরাব বলে।
এই একবারই ত বিয়ে…। না না, অন্য ব্যাপারে কিছু বলার নেই বিশেষ কিন্তু লাল বেনারসি..
ডাক্তারনি হঠাৎ এক ঝলক আলো জ্বলে ওঠার মত বুঝতে পারল, তার নিউ মার্কেট, নন্দন, আর্চিস গ্যালারি, স্কুপের আইস্ক্রিমের বাইরেও মহিলাদের একটা অন্য জগৎ সমান্তরাল ভাবে বহমান।
সেখানে এখনো জামাই বা ছেলের বউকে দেখানো এবং দেখাটা, জীবনের অন্যতম হাইলাইট।
এঁদের জীবনে সংসারের বৃত্তটুকুর বাইরে আনন্দ বা দুঃখের জায়গা কম।
সে পরীক্ষা করার টেবিলে যে শরীরদের শোয়ায়, তাদের এনাটমিটাই তার আঙুলের ডগায় ধরা পড়ে, বাকি জীবনের খবর টের পাওয়া যায় না।
খুব মায়া হল।
এই ছোটো লাল টিপ পড়ে গায়ে আঁচল টেনে থাকা অচেনা মানুষটির জন্য।
হেসে ফেলে নিজের মাকে বলল, আচ্ছা, লাল পড়ব না হয়।
মা খুব চিন্তায় ছিলেন।
তিনি জানেন, এরা টেরাকোটার গয়না আর ঢাকাই শাড়ি পড়ে বিয়ে করতে চাওয়া পাব্লিক, এবং মেয়ে তাঁর অতি ব্যাদড়া।
কি দাঁড়ায় দেখার জন্য, দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এইবারে হাঁফ ছেড়ে, রান্নার বৌকে চা বসাতে বলে ভিতরে এসে বসলেন।
হবু বউ, এই বার তোমরা কথা বলো, বলে ঊঠে পাশের ঘরে গেল।
আর সেই থেকে, অন্য কোন ব্যাপারে মতামত নিক না নিক, কোথাও যাবার থাকলে, শ্বাশুড়ি মাকে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি লাগাতো, কি পড়ে যাব, বলো শিগগিরই।
তিনিও কিছুদিন যেতেই টের পেয়েছিলেন এর ধাতটা।
তাই যে অনুষ্ঠানই হোক, একছড়া জুঁইফুল বা বেলির মালা বা এক ডজন গোলাপ বাড়ির বাজারের বিশাল ব্যাগের সঙ্গে নিয়ে তবে ঘরে ঢুকতেন বাজার- স্পেশালিষ্ট শ্বশ্রুমাতা।
তাঁর ছেলের মনে না থাকলেও তাঁর মনে থাকত, বউকে গয়না না দিলেও দুঃখী হয় না, কিন্তু ফুল পেলে বড় বেশী খুশী হয়।