সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৫৩)

রেকারিং ডেসিমাল

বাড়িতে এত বীরপুরুষ সব উপস্থিত। কি সব দশাসই চেহারা। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায় দেখ। মেয়েরাও কিছু কম যায় না। দিদার ভারি গর্ব ছানাদের নিয়ে।
সত্যিই পাশাপাশি দাঁড়ালে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। তেমনি গলার বাজখাঁই আওয়াজ।
কিন্তু,  ভুতের ভয় সবার ষোলো আনার ওপর আঠারো আনা।
হাসপাতালের দিকের ছোট ঘরে কেউ একা শুতে চায় না। নাকি দেয়ালের ওপারের একতলা বিল্ডিংটাই হাসপাতালের মর্গ ছিলো।
নতুন  ডাক্তার বউ বর টুরে গেলেও একাই এ ঘরে শোবে বলে।
সত্যিকারের মর্গে ঘুরে পড়াশোনা করে , আর ছেলেবেলা থেকে মড়া কেটে, তার মর্গভীতি গজাতে পায়নি।
আবার অন্যদিকে,  চোরের ব্যাপারে ও বাড়িতে নানান গল্প।
বাড়িতে পুলিশ, এয়ারফোর্স সব গিজ গিজ করলে কি হবে চোর এসে যখন তখন নাকি এটা ওটা নিয়ে ভাগলবা।
তাই সবাই তটস্থ হয়ে থাকে।
আর ভুত এবং চোর-ডাকাতের গল্প বলতে আর শুনতে কিইই ভালো বাসে সব্বাই।
রাতের খাবার টেবিলে, এঁটো হাত শুকিয়ে কড়কড়ে।
গল্প আর শেষ হয় না।
এদিকে একবার ছ ফুট লম্বা প্রায় চার ফুট চওড়া বরের জ্বর হয়েছে।
রাতের বেলা বাথরুম যাবে বলে উঠেছে বলে, বউ ও উঠেছে সাথে।
যদি মাথা টাথা ঘুরে যায়।
বারান্দায় এসে বেসিনে হাত ধুয়ে আর্তনাদ করে ওঠে রুগী।
ভুত ভুত, ওরে বাবা!
বউ তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসে।
কই ভুত ? খামোখা ভয় পাও কেন।
বারান্দার  গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচের উঠোন, ট্যাংকি দেখা যাচ্ছে।
ওই ত। সাদা কাপড় দিয়ে ঘোমটা টেনে বসে আছে।
বউ উঁকি মারে।
আরে ধুর বাবা। ও ত ছোট কাকুর লাগানো কি যেন বর্মি ফুল গাছের ঝাড়। পাতাগুলো হাওয়ায় দুলছে।
কি বলছ ?
জ্বরগ্রস্ত কর্তা গুঁড়ি মেরে নিচু হয়ে দেখে।
আচ্ছা। ভুত নয় বলছ ?
এইবারে হই হই করে চীৎকার।
চোর চোর, কে কোথায় আছ!!
বেশ। বেরিয়ে পড়ল সবাই যে যার দরজা খুলে।
সেজ কাকু ছোট লাঠি হাতে।
কই কই, কোথায় চোর?  ধর ব্যাটাকে।
 দাদুর ঘর থেকে হুংকার, কে চোর, ধরছিস না কেন?
সঙ্গে দিদার গলা, আহ চেঁচায়ো না। শুনতে দাও কি কয় অরা।
কাকি নাইটির ওপরে শাড়ি জড়ানো চোখে ঘুম।
কি হলটা কি। পটলা চেঁচাচ্ছে কেন।
দুই ননদ ঘরের ভেতর থেকে, দাদা সরে আয়, সরে আয়…
বউ গ্রিলের নিচের দিকের ফাঁক দিয়ে দৃষ্টি মেলে।
বর বলছে, চোর ট্যাংকের পাশে গুড়ি মেরে বসে আছে।
সেজ কাকু লম্বা টর্চ নিয়ে কোলাপ্সেবেল খুলে নিচে যেতে রেডি হচ্ছেন।
বউ ভালো করে দেখছে।
নিচে কলা গাছের পাতা। তার নিচে ছায়ায় অপরাজিতা গাছের লতারা পেঁচিয়ে উঠেছে। পুজো আসছে। তাই নীল ফুলেরা ফুটে উঠছে তাতে। হাওয়ায় দুলছে লতাপাতারা রাতের আরামের বাতাসে।
চার দিক শুনশান।
আচ্ছা, একেই বুঝি চোর বলেন বীরপুরুষরা।
রাত দুপুরে বেশ খানিক এডভেঞ্চার হল বটে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।