|| কালির আঁচড় পাতা ভরে কালী মেয়ে এলো ঘরে || T3 বিশেষ সংখ্যায় সোনালি

ব্যাসিলিকা

“লিক ইট অফ;লিক ইট অল অফফ”—
চার্চের ভিতরের আলোআঁধারি আর্চ দেওয়া সিঁড়ির তলায় ঘুরতে ঘুরতে ,হাস্কি পুরুষ কন্ঠের আর্ত স্বর শুনে এগিয়ে গিয়েছিল সঞ্চারী।
একটা জংধরা লোহার পাত লাগানো পুরোনো কাঠের দরজার ফাঁকে চোখ রেখে নিজের অজান্তেই শ্বাস টেনে নিয়েছিল লম্বা করে।
মোমবাতির আলোয় ফুটে উঠেছে একটা ঘামে ভেজা চকচকে চওড়া পিঠ,নীচের দিকে ঢালু হয়ে নামা সরু কোমর ,আরও নীচে সুগোল পিছনের খাঁজ ,পেশীবহুল এক জোড়া লম্বা পুরুষালি পা।মুখোমুখি একটা কাঠের চৌকিতে বসে আছে অলিভরঙা সুন্দরী ।একটু তেকোনা মুখের দীঘল চোখ জোড়া নিষ্পলক হয়ে আটকে আছে সামনের অনাবৃত পুরুষ শরীরে।কন্যার হাতে পলকাটা কাঁচের বাটিতে সোনালি মধু টলটল করছে।চোখ না সরিয়েই সে ডান হাতের আঙ্গুলগুলো চুবিয়ে দিয়েছে সেই সোনারং তরলে।তর্জনী আর মধ্যমার গড়ানো মধু সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির শরীরের মাঝবরাবর সরল রেখায় মাখিয়ে দিয়েই ,আস্তে আস্তে ঠোঁটের কাছে নিয়ে এল আঙুল ।লাল টুকটুকে জিভের ডগায় গড়িয়ে পড়া নেশা লেপ্টে যাওয়ার সঙ্গেই ভেসে এল আর্ত পুরুষ কণ্ঠ, “আহ মারিয়া …”
নিজের বুকের ঢিপ ঢিপ শুনতে শুনতে সঞ্চারী ভাবল, “মধু? কি উর্বর ভালবাসার মস্তিষ্ক রে …”
হঠাত ঝিমঝিম নেশা ধরানো এই দৃশ্যটা খানখান হয়ে গেল এক ধারালো অস্ত্রের ঝলকে।মূর্তির মত সুন্দর পিঠটায় বিঁধে গেল তীক্ষ্ণ ধাতব কিছু।গড়িয়ে পড়া
রক্তের ধারা,সামনে বসা মেয়েটির ভীত আতঙ্কিত মুখের তীব্র আর্তনাদের মধ্যেই উলটে গেল ঘরের মোমবাতিদান।ঘর অন্ধকার।
আচমকা শুনশান নিস্তব্ধতার মধ্যে ফিরে এসে চমকে উঠল সঞ্চারী।চারদিকে হতভম্ব হয়ে তাকাতেই দেখল, আধবুড়ো পাদ্রী হেঁটে আসছেন এক পাশের থামের কোণা থেকে।
তিনি বললেন,“দেখতে পেলে বুঝি? ওঃ অনেকেই পায়।পাপ কি আর চাপা থাকে?নরকেই জায়গা হওয়া উচিত এই সব ব্যাভিচারীদের।তবু ত চার্চের মধ্যে মৃত্যু , তাই…”
গলার স্বরটা ভাল লাগল না সঞ্চারীর।দুটো মানুষ ভালবাসছিল বলেই এমন হিংস্র হয়ে উঠছে এনার গলার আওয়াজ?যিশাস না বলেছেন প্রেমের, ক্ষমার ধর্ম প্রচার করতে?
তবু এ ভদ্রলোকের পাশে পাশেই ্পা চালিয়ে এই সিঁড়ির তলার অন্ধকারটা থেকে বেরিয়ে যেতে চায় সঞ্চারী।পৌঁছোতে চায় বাইরের আলোয় ।চলতে চলতেই বলে, “ব্যাভিচারী বলছেন কেন? ভালবাসা কি অপরাধ?”
হাত তুলে থামিয়ে দ্যান ফাদার।
“থামো হে। যা জানো না তাই নিয়ে কথা বল কেন?বলেছিল সুইসাইড ।কিন্তুরআসলে ত পুরোনো লাইট হাউস থেকে বৌটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল ছোকরা।এক মাথা কোঁকড়া চুল,রোগা মতন সেই যে মেয়েটা ।হ্যাঁ, খুব বদমেজাজি ছিল বটে ;পাওলো অন্য কারো দিকে তাকালেও আঁচড়ে কামড়ে চেঁচিয়ে অস্থির করে ফেলত।তা, অন্য কারো দিকে তাকানোই বা কেন?”
চটপট পা চালাচ্ছিল সঞ্চারী।লম্বা লম্বা আর্চের তলার অন্ধকার যেন ফুরোচ্ছেই না, উফফ।
তবু কৌতূহল না চাপতে পেরে মুখ ফেরায়।
“কিন্তু মারল কে?”
কি বিশ্রী খিকখিকে হাসি বুড়ো পাদ্রীর।
“কেন? সিস্টার জোসেফিন? সেতো বরাবর পাওলোর জন্য ফিদা।ভেবেছিল বৌটা মরে যেতেই পাওলো বুঝতে পারবে যে একেবারে মনপ্রাণ দিয়ে তাকে পাবার জন্যই অল্টারে বসে রোজারিতে জপ করে চলেছে রোজ।কিছু যিশাসের জন্য নয়।পাওলো একবার তার দিকে চোখ তুলে তাকালেই চার্চ থেকে এক দৌড়ে পালিয়ে যেত।
কিন্তু পাওলো তো কোন দিন টের ও পায়নি।উলটে মারিয়াকে এই চার্চেই ডেকে এনেছিল গ্রামের সবার চোখ এড়িয়ে নষ্টামি করার জন্য।”
এত বুকভাঙ্গা কষ্টের কথা এমন রেলিশ করে বলছেন ভদ্রলোক,বড্ড রাগ হয়ে গেল সঞ্চারীর।বাইরের পিলারঘেরা মোমবাতি জ্বালানোর জায়গাটা দেখা যাচ্ছে একটু দূরেই।দাঁড়িয়ে পড়ল সঞ্চারী।
“থামুন তো।কে মেরেছে সে ত দেখাই গেল না। শুধু শুধু বদনাম করছেন চার্চের কোন মেম্বারের নামে।প্রমাণ আছে কিছু? এটা নিশ্চই অনেক অনেক দিন আগের ঘটনা?” 
“ছিল তো প্রমাণ।ছিল বৈকি।জোশেফিন নিজের মুখে কনফেশান করেছিল যে।আর আমি ঐ কনফেশান বক্সে দাঁড়িয়েই তক্ষুনি বলে দিয়েছিলাম , ঘাড় ধরে চার্চ থেকে বের করে দেব।অনেক দিন তক্কে তক্কে থেকেছি।পাওলোর বিয়ের দিন থেকে দেখেছি, ওর নজর আঠার মত চিপকে আছে ছোকরার গায়ে।তখনই ত—
তীব্র তীক্ষ্ণ কন্ঠ ক্রমশ উপরে উঠতে থাকে।
“ তখনই ত ঐ ধারালো স্কুয়ারিং এর তারটা দিয়ে আমায় এ ফোঁড় ও ফোঁড় করে বেরিয়ে চলে গেল, দ্যাট কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার।অথচ তারপর কত কত বছর চার্চের সবাই জানল ও ভারি ভক্তিমতী সন্ন্যাসিনী।কেউ টের পেল না।
আ ব্লাসফেমী ইউ নো? আ শিয়ার ব্লাশফেমী…”
নিষ্ফল আক্রোশে উচ্চারিত শব্দের মধ্যেই একটু একটু করে মুছে যাচ্ছিলেন ক্ষমাহীন ফাদার।
ক্রশের সাইন আঁকতে আঁকতে দৌড়ে বাইরের রোদে এসে দাঁড়িয়ে দরদর করে ঘামতে থাকল সঞ্চারী।
“ওহ যিশাস!”
  

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।