আজ এতদিন পরেও সেবারের শীতের কথা মনে পড়লে সারা শরীর শিউরে উঠে।দিন টা ছিলো পৌষ মাসের মাঝামাঝি।যদিও পঁচিশে ডিসেম্বরে যাবার কথা ছিলো কিন্তু সেদিন ভীড় টা একটু বেশীই হয় তাই আর কি!তো সে যাই হোক বন্ধুবান্ধব মিলে গিয়েছিলাম বনভোজন করতে সেবার আদিনায়।আমাদের সাথে রাঁধুনি ও কাজের কয়েকটি মেয়েমানুষনও নিয়ে গিয়েছিলাম।ওখানে গিয়ে নিজেদের পছন্দমতো একটা জায়গা বেছে নিয়েছিলাম আমরা।রাঁধুনিরা যখন রান্না করতে ব্যস্ত,আমরা তখন এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।
গাড়ী নিয়ে মসজিদের দিকে গেলাম সকলে মিলে।কিরকম যেন একটু ভয় ভয় লাগছিল আমার।সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে একটা অদ্ভুত আওয়াজে আমি চমকে উঠে জড়িয়ে ধরি সুমনকে।সুমনের বুকে আমার মুখ টা অনেকক্ষণ ধরে চেপে রেখেছিলাম ভয়ের সাথে।কিছুক্ষণ পরে সুমন আলতো করে আমার চিবুকে হাত টা দিয়ে তুলে বলে,”কি হ’লো কিসের এত ভয় তোর?আরে আমি তো আছি তোর পাশে সবসময়।আমি যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো সুমনের কথা শুনছিলাম।তারপরে সম্বিত ফেরায় সুমনের বুক থেকে মুখ টা সরিয়ে ফেলি লজ্জায়।
সুমন বলে উঠলো,” কি এমন হলো যে,এত্ত লজ্জা পেয়ে গেলি!আরে এটা তো হওয়ারই কথা ছিলো।তুই শুধু আমার,হ্যাঁ হ্যাঁ শুধুই আমার। আমি তোকে যে ভালোবাসি তুই বুঝিস না! নাকি বুঝতে চাস না!”
এর উত্তরে আমি কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে চুপ করে চেয়ে থেকেছিলাম অনেকক্ষণ।আমার চোখের সামনে একটা তুরি বাজিয়ে আমার নিস্তব্ধতা ভেঙে বললো,”কি হলো বলো তোমার কি উত্তর!তোমার উত্তরের ওপরে নির্ভর করবে আমার বেঁচে থাকা আর না থাকা।তোমাকে ভালোবাসার আগে আমি বুঝতেই পারিনি,ভালোবাসার এমন শক্তি আছে যার কাছে মৃত্যুও তুচ্ছ মনে হয় ।”আমি শুধু সুমনের মুখে আমার হাত দিয়ে বলেছিলাম,”কি এমন আমার আছে যে,আমার উত্তরের ওপরে তোমার তিলে তিলে গড়ে তোলা জীবন কে শেষ করে দেবে!!”
উত্তরে সুমন শুধু বললো,”ও তুমি বুঝবে না। বলো না প্লিজ তুমিও কি আমাকে ভালোবাসো?হবে আমার জীবণ সঙ্গী !”আমি বলেছিলাম,আমার সময় চাই।সুমন যেন জেদ করছিলো বাচ্চাদের মতো।সেদিনই উত্তর দিতে হবে ব’লে আমার হাত জোর করে ধরে থাকে।আমি খুব কষ্ট হলেও নিজেকে ছাড়িয়ে চলে গেছিলাম।অনেক টা এগিয়ে পেছন ফিরে দেখি,সুমন আর সেখানে নেই।আমি নিজেকে আর সামলাতে না পেরে,ছুটে গিয়ে সুমনের নাম ধরে অসহায়ের মতো চিৎকার করেছিলাম অনেকক্ষণ।তারপরে পেছন থেকে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,”আমি উত্তর পেয়ে গেছি সোনা You Love Me Also Madam.”এই বলে আমার কপালে একটা পবিত্র চুমূ দিয়েছিলো।আমার সারা দেহ কাঁপছিলো ওই মূহুর্তে।
যাইহোক এর পরে পিকনিকের জায়গায় গিয়ে খেতে বসেও কিছুই খেতে পারি নি।জানি না সেটা উত্তেজনায় নাকি চিন্তায়!এর পরে আমাদের ফেরার পালা।সুমন আমায় বারবার অনুরোধ করেছিলো ফিসফিসিয়ে ওর গাড়িতে যাবার জন্য।আমি সেদিন লজ্জায় রাজী হইনি।তারপরে শুরু হয় আমাদের বাড়ি ফেরার পালা।সুমনের গাড়ী টা আমাদের গাড়ীর সামনে ছিলো।হঠাৎ ঘটে গেলো একটি দুর্ঘটনা,পেট্রল ভর্তি গাড়ীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় সুমনের গাড়ীর।সুমনের গাড়ী মূহুর্তের মধ্যে ভস্মীভূত হয়ে যায়।আমি সেদিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম মাস খানেক।আজ এতবছর পরেও প্রতি শীতেই সুমনের মুখের কথা টা বাজে একই ভাবে আমার কানে,”আমি উত্তর পেয়ে গেছি সোনা।You Love Me Also Madam.”