মার্গে অনন্য সম্মান শেখ হাসমত আলী (সেরার সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার
পাক্ষিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৮
বিষয় – প্রয়োজনে প্রিয়জন
তারিখ – ২১/০৮/২০২০

প্রিয়জন

হারু চ্যাটার্জি ও মিতা চ্যাটার্জী বয়স্ক দম্পতি। একমাত্র ছেলে ওয়াসিংটনে থাকে ‌খবর এলো হারু বাবুর নাতনীর ২২ শে মার্চ জন্মদিন পালন হবে।হারু বাবুর শরীরটা ইদানিং ভালো যাচ্ছে না প্রেশার সুগার টা খুব বেড়েছে সঙ্গে কিডনির সমস্যা দেখা দিয়েছে ‌। উনারা ভেবে ঠিক করলেন মিতা দেবী একাই যাবেন ‌অতো ঝক্কির সফর হারু বাবু করতে পারবেনা।এক সপ্তাহের মধ্যে ফিরবেন। কাজের মেয়ে আলেয়াকে খাবার ও ঔষধের ব্যাপারে বুঝিয়ে দিয়ে যাবেন।
মিতা দেবী রওনা হবার পরদিন লকডাউন আরাম্ভ হয়ে গেল। দূরত্বের কারণে ফোনে যোগাযোগ করা গেলোনা যোগাযোগ হলেও কথা কিছু বুঝতে পারা যায় না। তারপর আবার আমফান ঝড় এসে হাজির হলো। আলেয়ার বাড়ি দূরের এক বস্তিতে। খবর এলো তার ঘর ভেঙে গেছে।সে হারু বাবুর থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাড়িতে গেল কিন্তু লকডাউনের কড়াকড়ির জন্য ফিরতে পারলোনা।
এদিকে হারু বাবুর খাবার শেষ হতে চলেছে ফ্রিজে যে শুকনো খাবার ছিল তাও শেষের পথে। ঠিক সময়ে ঔষধ খাবার না খেয়ে হারু বাবু দূর্বল হয়ে পড়লো। তিনি ভাবলেন মৃত্যুর দিন গোনা ছাড়া রাস্তা কিছু নেই।
একদিন উনি শুয়ে শুয়ে দেখলেন বাড়িতে চোর ঢুকেছে এরং বিদেশি জিনিসপত্র আলমারি থেকে নিয়ে চোর পুঁটলি বাঁধছে। উনি উঠার চেষ্টা করছেন কিন্তু উঠতে পারছেন না চেঁচামেচি করার চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেনা। তারপর দেখলেন চোর একটা ছুরি নিয়ে এগিয়ে আসছে হঠাৎ কে যেন ধাক্কা দিলো উনি চোখ খুলে দেখলেন আলেয়া সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার কপাল ও কুনুই থেকে রক্ত ঝরছে।হারু বাবুর দুঃস্বপ্ন ভেঙে গেল।
হারুবাবু – কি হয়েছে তোমার এরকম অবস্থা কেন ?
আলেয়া – আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না বাবু মশাই ওরকম কতো চোট লাগে আবার নিজেনিজেই ভালো হয়ে যায়। ঘরে মায়ের ব্যবস্থা করে দেবার পর আপনার জন্য কিছু শুকনো খাবার আর কাঁচা বাজার করে আনছিলাম পুলিশের তাড়ায় রাস্তায় পড়ে গিয়ে সামান্য ছোঁড়ে গেছে ও সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনার তো কদিন ঠিকমত খাওয়া হয়নি ঔষধ সময় মতো খেয়েছেন কিনা তাও জানিনা একটু বসুন আমি চা করে আনছি।
হারু বাবু বসে বসে ভাবতে লাগলেন।এই মেয়েটা বিধর্মী বলে কেউ কাজে নিচ্ছিলো না।আমারও খুব একটা সম্মতি ছিল না কিন্তু মিতা বলেছিলো সব মানুষই ভগবানের সৃষ্টি।জাত ধর্মের ভাগ তো মানুষ ই করেছে।কাজে লাগালে আলেয়া কেই লাগাবো না হলে দরকার নেই।
এই মহামারীর বাজারে নিজেদের লোকও মুখের দিকে তাকায় না এই বিধর্মী মেয়েটা আমার প্রয়োজনে জোম আর আমার মধ্যে দেওয়াল হয়ে মাতৃস্নেহে আমাকে রক্ষা করছে !
আমি নিজেই ভাবতে পারছিনা কে প্রিয়জন কে প্রয়োজন !
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।