সরল পুরুষ গঙ্গাচরণ, একটু যেন সেকেলে।
যৈবনে তার মন দুলেছে, নিতম্বেরই ঠমক দোলে।
কোনক্রমে পাশ দিয়েছে,
“সব নারীই বোন”, মা বলেছে,
তবুও যে তার মন ফেঁসেছে, লম্বা বেণীর চুলে।
অপেক্ষাতে পথের ধারে, বকুলতলে, পুকুর পাড়ে।
জপতে থাকে সেই নাম, একটু হাসি দেখার তরে,
তাকায় না কেউ ফিরে,
অশ্রু গড়ায় চোখ চিরে,
মনপাখিটা শূন্য নীড়ে, তাকিয়ে থাকে আকাশপারে।
লম্বাবেণীর দয়া হলো, সোহাগ ভ’রে কাছে এলো।
গঙ্গা সাথে ‘সই’ পাতালো, গঙ্গা যেন প্রাণ পেলো।
হাঁদারাম গঙ্গাচরণ,
মরমে তার হলো মরণ,
লম্বাবেণী যমুনা রাণী, মন দিলো আর মন নিলো।
কেউ জানে না মনের কথা, ছলচাতুরী রসিকতা!
মন নিয়ে মন করছে খেলা, মূলধন তার বাকপটুতা।
গঙ্গাচরণ বিভোর প্রেমে,
যমুনা প্রেমে বলছে ঘেমে,
“থাকবে আমার সব জনমে, তুমিই আমার প্রাণের মিতা।”
মুচকি হাসে যমুনা রাণী, খেলায়, খেলে, গঙ্গারামে।
বোঝে না সে তার চাতুরী, স্বপ্ন দেখে জ্যোৎস্না যামে।
বেশ কটা দিন ফাগুন রঙে,
চলল’ সোহাগ কথার ঢঙে
পেখম ছেড়ে সাজল’ ফিঙে, গঙ্গা-চোখে অশ্রু নামে।
কালবোশেখীর বিষম কোপে, ভাঙলো সুখের নীড়।
যমুনার দেওয়া বরমাল্য, দুলছে গলে নাম সুবীর।
ভেঙে পড়া চালাটাতে,
ঝুলকালির কুলুঙ্গিতে,
নতুন ক’রে দীপ জ্বালাতে, সূর্য যে তার হলো নিবিড়।
সরল হিয়া খেলার পুতুল, ইচ্ছে মত খেলিয়ে তারে,
ফেলল ছুড়ে সেই বিদুষী, পাতের থেকে আস্তাকুঁড়ে।
ঠমক চালের নূপুর বাজে,
নিঠুর হিয়া রুদ্র সাজে,
মিলিয়ে গেল কোন সে লাজে, কাঁদছে স্মৃতি নদীর পাড়ে।
গঙ্গা আজও বুক পেতে রয়, পথ ক’রে দেয় নিজের কোলে!
গাঁয়ের স্বাদ হারিয়ে গেছে, অহংকারে ঝোলে-অম্বলে।
মাটির টানে নতুন ক’রে,
আবার নতুন ছাউনি গড়ে,
খেয়াল রাখা মনে করে, সাপ যেন না থাকে গলে।