“এই শ্রাবণে আষাঢ়ে গপ্পো” বিশেষ সংখ্যায় শম্পা কর্মকার

বিচারের আশায়

সেদিন কল্যাণী থেকে ফিরতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল।।। একে লক ডাউন সবে একটু শিথিল হয়েছে।। বৃষ্টি ও পড়ছে ভালোই।। ডাক্তার দেখাতে গিয়ে এতো টা দেরী হয়ে যাবে আগে জানা ছিল না।। বেশ অন্ধকার ছিল রাস্তায়।। ও আমার পরিচয় দেওয়া হয় নি।। আমি একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী।। কলকাতা তে দোকান আছে। আর থাকি ব্যারাকপুর। পায়ের অসুবিধা হাওয়ায় কল্যাণীতে ডক্টর এর কাছে যাই নিয়মিত।। সে দিন রোগী বেশি থাকায় আমার একটু রাত হয়ে গিয়েছিলো.. গাড়ির মধ্যে ড্রাইভার এর পাশে বসে একটু ঝিমুনি চলে এসেছিল.. হটাৎ দেখি একটা লোক রাস্তার মাঝ খান দিয়ে হেঁটে চলেছে.. আমার ড্রাইভার গাড়ির স্পিড কমিয়ে দেয়.. কিন্তু একটা লরি লোক টা কে পিষে দিয়ে চলে গেলো.. একটা আওয়াজ আর একটা চিৎকার… আমি স্তব্ধ হয়ে ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বললাম.. ড্রাইভার চাইছিল না থামাতে.. কিন্তু আমি জোর করায় সে বাধ্য হল।।নামলাম…. কিন্তু কোথা ও কাউকে দেখতে পেলাম না… কোথায় মৃত দেহ… কিছু তো নেই… তাহলে…. ভালো করে চারিদিকে তাকিয়ে একটা ছোটো ঘুমটি দোকান চোখে পড়লো.. এগিয়ে গেলাম..দেখি একজন কালো চাদরে মুখ ঢাকা লোক।। জিজ্ঞাসা করলাম এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে আর একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থেকে সব কথা বললাম ও।। হঠাৎ আমার ড্রাইভার চিৎকার করে উঠলো, “দাদা তাড়াতাড়ি চলে আসুন”।। ঘুরে তাকাতেই দেখি একটা থেতলানো শরীর আমার পায়ের কাছে আর কোথায় সেই দোকান.. হাত তুলে দূরের একটা কুঁড়েঘর নির্দেশ করছে।।। দৌড়ে চলে আসি গাড়ির কাছে।।। তারপর এগিয়ে যাই সেই বাড়িটির দিকে।।। কৌতুহল আজ তাড়া করেছে আমায়.. ভাবছি এর শেষ কোথায়.. কেনো আমি এই সবের সামনে আজ… দরজায় টোকা দিলাম.. একজন মহিলা বেরিয়ে আসলেন… আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওই রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনার কথা কিছু জানেন.. আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললেন,” বিচারের আশায় প্রহর গুনছে আমার স্বামী.. পারবেন দিতে বিচার”.. আমি তো একজন সাধারন মানুষ… কিসের বিচার আমি করতে পারি….” জানি কেউ পারবে না, কারণ নেই তো কোনো প্রমাণ”… মদ্যপ ড্রাইভার আর তার হেল্পার টা বেকসুর খালাস পেয়ে গেল, আর আমাদের একমাত্র রোজগারি মানুষ টা চলে গেলো…” কথা বলতে বলতে শুনলাম এক্সিডেন্ট এক্সিডেন্ট… আবার এগিয়ে গেলাম রাস্তার দিকে.. দেখি একটা ট্রাক উল্টে পড়ে আছে.. ড্রাইভার আর তার হেল্পারটা সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে।। তাদের দেহ টা কি ভাবে বের করা হবে.. পুলিশ কে খবর দিতে হবে সেই নিয়ে কিছু মানুষ কথা বলছে.. আর আমি দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে সেই মানুষ টা কালো কাপড়ে মোড়া.. রক্ত ঝড়ছে..” বিচার পেলাম নিজেই শাস্তি দিলাম” বলে সেই কুটিরের দিকে মিলিয়ে গেল।। “ও দাদা বাড়ি তো এসে গেল এবার নামুন” ।। ড্রাইভার এর ডাক।। হকচকিয়ে দেখি এবার ঘরে ঢুকতে হবে।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।