ফোন কেটে দিলাম কারণ মনে হচ্ছে আমার ফোনও ট্যাপ করা আছে । হয়তো ঘরের মধ্যে কোনো গোপন ক্যামেরাও বসানো আছে । শরীরের মধ্যে কোনো মাইক্রোচিপ জাতীয় জিনিস ঢুকিয়ে দেওয়ায় এদের পক্ষে অসম্ভব নয় ।আর বাল্মীকিকে যদি এরেষ্ট ও করা হয়ে তাতে কি লাভ হবে? শত্রুপক্ষরা জানতে পারবে । শ্রেয়ান এখনও ওদের কব্জায় যদি ওর কোনো ক্ষতি করে? কিংবা যদি আমায় হামলা করে? তবে quarko না পাওয়া পর্যন্ত আমার বিরাট ক্ষতি ওরা করবে না । কেবল হুমকিই দিয়ে যাবে । কিন্তু আর্যমকে পুরো ব্যাপারটা জানানো ভীষণ প্রয়োজন । নিজেকে খুব অসহায় ফিল করছি । নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি । এখন দেখছি সর্ষের মধ্যেই ভুত । আমি ড্রয়িংরুমে ফোন হাতে নিয়ে এইসব ভাবছি এমন সময় সদর দরজায় কিছু কিছু নড়তে দেখে ঘাবড়ে গেলাম । দেখলাম না ভয়ের কিছু নেই । দরজার ফাঁক দিয়ে খবরের কাগজ গলিয়ে দিয়ে গেল । হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল । আমি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেরিয়ে কাগজওয়ালা রবিকে দেখলাম সিঁড়ি টপকে লাফিয়ে লাফিয়ে নামছে । আমি ওকে পিছু ডাকলাম । ও ঘুরে দাঁড়ালো । বললাম “ভাই কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?একটা ফোন করতে দেবে তোমার ফোন থেকে? দেখনা কি একটা অফার সার্ভিস প্রভাইডার নিজে থেকে শুরু করে দিয়ে মোবাইলের সব ব্যালেন্স কেটে নিয়েছে । একটা জরুরি ফোন করবো করতে পারছি না । যা কল চার্জ লাগবে আমি দিয়ে দেব ।”রবি জিব কেটে বলল “ছিঃ ছিঃ কি যে বলেন স্যার নিন না করুননা । আপনি ফোন করে ফোন টা আপনার কাছে রাখুন । আমি সব কাগজ দেওয়া শেষ হোল ফোনটা আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাব ।”রবি চলে গেলে আমি সিঁড়ির চাতালে দাঁড়িয়ে আর্যমকে ফোন করলাম ।ওকে খুব সংক্ষেপে আমি খুব বিপদে আছি । আমার ফোনে ফোন করতে পারছিনা । বাইরে কোথাও লুকিয়ে দেখা করতে চাই । ও বলল বেলা ১১টার সময় যেন আমি প্রিন্সেপ ঘাটের মেন গেট দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকের প্রথম ল্যাম্প পোস্টের নীচে চলে যাই । সেখানে একটা হাওয়াই চটি পড়ে থাকবে । চটিটা যত নম্বর সাইজের হবে ততো নাম্বারের নৌকোয় যেন উঠে পড়ি । ফোন কেটে দিলাম ।
ড্রয়িংরুমে বসে আছি রবির অপেক্ষায় আমি যে সোফায় বসে আছি তার ডানদিকে কয়েকফোঁটা রক্ত লেগে । জল দিয়ে রক্তের দাগ মোছার চেষ্টা করেছে খুব আবছা হলেও সম্পূর্ণ ওঠেনি ।দাগগুলো থেকে কাল রাত্রের ঘটনার একটা যুক্তিগ্রাহ্য ধারণার চেষ্টা করলাম। সোফাটা ঠিক আমার ঘরের দরজা বরাবর সদর দরজার দিকে মুখ করা একই সরোলেখায় । মানে কেউ সদর দরজা দিয়ে ঢুকে আমার ঘরের দিকে আসতে গেলে সোজা পথে ওই সোফাটা কাটিয়ে আসতে হবে । রক্তের দাগ সোফায় যেভাবে লেগেছে তা দেখে মনে হচ্ছে রক্ত ফিনকি দিয়ে পড়েছে । কারণ রক্তের ফোটার দাগ গুলো একটা সরল লেখার প্যাটার্ন এ তৈরি হয়েছে । তারমানে ধারালো কোনো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে । সম্ভবত কেউ মেন দরজা খুলে আমার বেডরুমের দিকে এগোচ্ছিল । পেছন থেকে এসে সেই আগন্তুকের গলার নলিটা এক কোপে কেটে দেওয়া হয়েছে । আমি যে আর্তনাদ শুনেছি তা কয়েক সেকেন্ড মাত্র । বাল্মীকি রাতে কিচেনে শোয়ে । যেটা ঠিক মেইন দরজার পাশেই । আমার বেডরুমের দিকে আগন্তুককে আসতে দেখে কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে পেছন থেকে আঘাত করা খুবই সম্ভব । এক্ষেত্রে মনে হচ্ছে মার্ডার ওয়েপেন ভোজালিটা যেটা আমি বাল্মীকির পুটলিতে দেখেছি । ভোজলিতে কোনো রক্তের দাগ ছিল না । না থাকাই স্বাভাবিক । খুন করার চিহ্ন রাখবে এমন বোকা আর কে আছে? রবি এসে আমার কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে গেল । মোবাইল থেকে আগেই আর্জমার ডায়াল্ড নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছিলাম । কলচার্জ অফার করলাম কিন্তু নিলো না। বাল্মীকি বাজার করে ফিরে এলো । একেবারে নির্লিপ্ত মুখ । আমিও নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করলাম ।