কিছু একটা স্বপ্নের মধ্যে চলছিল
অট্টহাসি । মা জোর ধাক্কা দিয়ে আমাকে তুলে দিয়ে বললো, “পরে পরে মরার মতো ঘুমোচ্ছিস, অঞ্জলি কি তোর শ্বশুর এসে দিয়ে আসবে? “আমি ধড়মড়িয়ে উঠে জিজ্ঞাসা করলাম, “কটা বাজে মা? শুরু হয়ে গেছে বুঝি অঞ্জলি?দৌড়ে ব্রাশ করে চান করে, আলমারি থেকে একটা লালপাড় শাড়ি নিয়ে ছুটে মার কাছে গিয়ে বললাম, “নাও পরিয়ে দাও তো এবার “। মা বিছানায় বসে কাছে ডেকে বললো, “এইতো আমার ছোট্ট দুগ্গা” জাপ্টে জড়িয়ে আদর করলো আমায়। আমিও অনেক্ষন মায়ের কাঁধে মাথা দিয়ে আদর খেলাম। তারপর ঝটপট শাড়ি পরে অঞ্জলি দিতে গেলাম। যথারীতি মাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে একটু বন্ধুদের সাথে বেরোনোর প্ল্যান করলাম। ম্যাডক্স স্কোয়ারের রাস্তার কিছুটা আগে ঘটলো এক ঘটনা। একটা ছেড়া জামা পড়া পাগল বছর চল্লিশের হবে। হাত দিয়ে আমার রাস্তা আটকালো। মুখে বলে চলেছে, “মারে তুই এলি কেন চলে যা, চলে যা ওরা তোকে আবার ভাসান দিয়ে দেবে যে।” আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো তুইও বাড়ি যা তোকেও ভাসান দিয়ে দেবে ওরা।” আমি ঠিক ওনার কথার মানে বুঝতে না পেরে সামনেই এক পানের দোকানওলাকে জিজ্ঞাস করলাম, “উনি কি বলছেন “। পান ওলা বললো, “গতবছর ওর মেয়েকে কয়েকটা গুন্ডা ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছিলো সেই থেকে উনি এরম পাগল হয়ে গেছেন। গরিব মানুষ সুবিচার পায়নি। ” আমার কিরকম একটা মনে হল আর আমি গন্তব্যস্থলে গেলাম না। দৌড়ে বাস ধরে সোজা বাড়ি গিয়ে বেশ অনেক দিনের আগের নিউস পেপার বের করে দেখলাম, “হ্যাঁ এটা তো গত বছরের ঘটনা, মেঘনা তো ধর্ষণ হয়েছিল আমার কলেজের বন্ধু। পানের দোকানের লোকটাও ওই নামটাই বললো মেঘনা কুন্ডু। ছাদে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়েছিলাম কিরম অষ্টমী তা এলো মেলো লাগছিলো। হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে উঠল। এক বুড়ি মা ভিখারি তার ঝুলি নিয়ে কিছু চাইছে। আমি অনেকটা চাল নিয়ে ওনার ঝুলি ভোরে দিলাম। বললাম, “এভাবে ভিক্ষা করলে কি সুবিচার পাবো বুড়ি মা?” বুড়িমা বললো, ” দুগ্গা দুগ্গা “। আমি মার কাছে গিয়ে বললাম,” দুগ্গা মাকে অঞ্জলি তো দিচ্ছি কিন্তু মা কতো তো রাস্তার দুগ্গা ভাসান হয়ে যাচ্ছে, তারা সুবিচার পায়না এই পুজো করে লাভ কি মাগো “। মার দু ফোটা জল শুধু আমার গালে এসে পড়লো। আর ঢাকের আওয়াজ যেন আরো জোরালো হয়ে বাজতে থাকলো. সব বিচার কান্না অবসাদ না পাওয়া হারিয়ে যাওয়া সব যেন মিলে মিসে একাকার হয়ে গেল। আমি দূর থেকে দুগ্গা মার প্রাণহীন মূর্তি টা দেখতে থাকলাম।