সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৩৫)

পঁয়ত্রিশ

নতুন একটা মোবাইল কিনলাম। আগের নাম্বারটা পেলাম না। বোধহয় কয়দিন পর পাওয়া যাবে। তাই আমার মাথায় ঘুরছে যে লুলিয়াকে নতুন নাম্বারটা দেওয়া জরুরি। শ্রেয়ানের অপহরণকারীরা যদি কোনো মেসেজ দিতে চায় এরপর তাহলে আমার ফোনেই ডাইরেক্ট দিতে পারবে। এখনও পর্যন্ত ওরা একবার ফোন করেছে আর লুলিয়াকেই করেছে। ওরা যদি আবার লুলিয়াকে ফোন করে তাহলে লুলিয়া আমার নাম্বারটা দিতে পারবে। কাল লুলিয়া এখান থেকে যাওয়ার পর থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত ওরা আর ওকে ফোন করেছে নাকি তা অবশ্য জানিনা। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যবশত লুলিয়ার ফোন নাম্বারটা আমার কাছে নেই। হঠাৎ মনে হল আমি যখন হসপিটালে ছিলাম তখন যদি ও বাল্মীকি দিয়ে থাকে। ওকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম। না ওর কাছেও নেই। তাহলে একবার ঘুরতে ঘুরতে ওর বাড়ি গিয়ে দেখা করে আমার নাম্বারটা দিয়ে আসবো?খাটে শুয়ে শুয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভাবলাম। তারপর ভাবলাম সময় নষ্ট করে লাভ নেই। হালতু থেকে লেক গার্ডেন্স, ঢাকুরিয়া হয়ে, বেশ ভালোই ইভনিং ওয়াক হবে। হাঁটলে আমার মাথায় খোলে। লেকে পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে নেমে এলো। লেকের সুন্দর হাওয়ায় বেশ সতেজ লাগছিলো। হাঁটছি আর ভাবছি জগা কি সত্যি মারা গেছে? নাকি পুরোটাই সাজানো? কিসের জন্য এতসব ঘটনা ঘটছে? সুদূর জার্মানি থেকে কিছু লোক ভারতে এসে কিসের উদ্দেশ্যে এসব ঘটাচ্ছে? শুধু জার্মান না তাঁদের সঙ্গে কিছু এদেশীয় বিভীষণ আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু এসবের পেছনে আসল উদ্দেশ্যটা কি? কিসের জন্য এতোগুলো লোক হন্নে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে? মূল্যবান জিনিস কিছু? গুপ্তধন, হীরে, জহরত? যাই হোক তার সঙ্গে আমার বাবাও যুক্ত। কিন্তু এইসব ধনসম্পদের সঙ্গে আমার বাবার সম্পর্ক থাকতে পারে একথা আমার বিশ্বাস হয়না। তাহলে কি কোনো আবিষ্কার বা ফর্মুলা জাতীয় কিছু? তার সম্ভাবনাই বেশি। ডঃ চোঙদার সেটাই আমায় পাস অন করতে চেয়েছিলেন হয়তো। বাবার আবিষ্কার উত্তরাধিকার সূত্রে আমাকে দিতে চেয়েছিলেন হয়তো। উনি জানতেন আমি মেনসার মেম্বার ছিলাম। ক্রিপ্টোগ্রাফি আমার সাবজেক্ট এটা মনে হয় উনি জানতেন। তাই না না ধরণের ধাঁধার মাধ্যমে আমাকে কিছু হদিশ দিতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা উনি আর আমি দুজনেই কলকাতায় থাকা সত্ত্বেও আমাকে সরাসরি জানিয়ে গেলেননা কেন? উনি বোধহয় ভেবেছিলেন আমাকে হস্তান্তর করার সময় এখনও আসেনি। ওনার যে এতো তাড়াতাড়ি মৃত্যু হবে তা নিশ্চয়ই ভাবেননি। এইসব ভাবতে ভাবতে লেক স্টেডিয়ামের কাছে পৌঁছে গেলাম।
মানুষ চেনা রাস্তায় বেহুঁশ হয়ে এগিয়ে যেতে পারে। লেকের বুদ্ধমন্দিরের পর থেকে আমার কিন্তু কিছুই খেয়াল নেই। আমি বা দিকের রাস্তা ধরলাম লেকগার্ডেন্সের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ পেছন থেকে একটা বাচ্চা ঘটি গরম নিয়ে আমার আগে এসে দাঁড়ালো। অনেক কাকুতি মিনতি করে একটা ঘটি গরম ঠেকালো। আমি হাতে মোরা কাগজের ঠোঙা তা নিয়ে ওকে দাম দিয়ে দিলাম। ছেলেটা পেছনে ফেলে আসা রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলো। আমি একটু সামনে এগোতেই পেছন থেকে কেউ ডাকলো, “কাকু ও কাকু “। আমি পিছনে ফিরে দেখলাম ওই ঘটি গরম বেচা বাচ্চাটাই আমায় ডাকছে। ও তখন প্রায় দুশো মিটার দূরে। রাস্তায় বেশ ভালোই আলো আছে। বাচ্চাটা চিৎকার করে বললো, “ঠোঙাটা ফেলবেন না কাকু “। বলেই ছুট মারলো। আমার বিদ্যুৎ চমকের মতো মাথায় এলো তাহলে কি কাগজের ঠোঙায় কোনো মেসেজ আছে?

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।