আবদার কৌশল করে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত একাই নীচে নেমে এলাম । ওর কাছ থেকে চাবি নিয়ে ডঃ চোঙদারের ফ্ল্যাটে বেডরুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলাম । এখন ভাবছি আগের বার আমার ঘরের ভিতরে সব কার্যকলাপ, ঘড়ি ঘুরিয়ে টাইল সরিয়ে ডাইরি বের করা, লুলিয়া আড়ি পেতে লুকিয়ে দেখেনি তো? ওর তো আমার ওপর নজরদারি করারই কথা। বেডরুমের দরজা তা আবার খুললাম তারপর ছেড়ে দিলাম লক হয়ে গেল । দরজাটায় অটোমেটিক ডোর ক্লোজিং সিস্টেম করা আছে। আর কোনো কি – হোল নেই ডঃ চোঙদার নিজের প্রাইভেসি নিয়ে খুব সচেতন ছিলেন। যাই হোক তার মানে লুলিয়া আমার কার্যকলাপ দেখতে পারেনি। এবারেও পারবে না যতক্ষণ না দরজা খুলে ভেতরে ঢুকছে। আমি মিনিট দশেক ডঃ চোঙদারের খাটে বসে ডাইরি টস খুলে পাতা উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলাম। উনি গল্প আকারে কিছু ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন । শুরু তে লিখেছেন ওনার শৈশব নিয়ে। চট্টগ্রামে জন্ম ওখানেই স্কুলে পড়া । বেশিক্ষন পড়া যাবে না। ইতিমধ্যে মিনিট দশেক পিকর হয়ে গেছে । খাটে উঠে আবার ঘড়িটা ঘোড়ালাম । টাইল উঠে এলো । আমি ডায়েরিটা খপের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম । তারপর লুলিয়ার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকলাম । দরজা খুলে বেরিয়ে এসে নকল উত্তেজনা দেখিয়ে লুলিকে ডাকতে লাগলাম বারবার । সঙ্গেসঙ্গে লুলিয়া হুড়মুড়িয়ে নেমে এলো কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে করতে । আমি ওর হাত ধরে দৌড়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে চলে এলাম । হাত দেখিয়ে সরানো টাইল এর ভেতর ডায়েরি তা দেখলাম । লুলিয়া উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল “এটা কি?” আমি খোপ থেকে ডায়েরি বার করে ওকে দেখলাম আর নিজেও প্রথম বার দেখার ভান করলাম। লুলিয়াও দারুন অভিনেত্রী সেটা এখন আমি বুঝে গেছি। আমি বললাম “এই ডাইরিটাই বোধয় জট খুলে দেবে । থ্যাংক ইউ লুলিয়া । কারণ তোমার সাহায্য ছাড়া এটা একা উদ্ধার করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না । দারুন মাথা খাটিয়ে বের করেছো যে রামকৃষ্ণের হাতের মুদ্রার মধ্যে রহস্যের সূত্র আছে । ঘড়িটার কাঁটা গুলো প্রথমে ৬ টায় নিয়ে গিয়ে বড় কাঁটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে ৫ টা বাজাতেই ফ্লোর এর টাইল টা উঠে এলো। আর ভেতরে দেখতে পেলাম এই ডাইরিটা । লুলিয়া সত্যি তোমাকে তারিফ করতে হয় । এবার বোধয় শ্রেয়ান কেও ফিরিয়ে আনতে পারবো “। কথাগুলো বলেই আমি লুলিয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু আমি জড়িয়ে ধরেও যখন মনে মনে ভাবছি বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছি কিনা, তখন লুলিয়াও বেশ উৎসাহিত হয়ে আমাকে আঁকড়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চেপে ধরলো । লুলিয়ার যে আলিঙ্গনে আগে শরীরে শিহরণ খেলে যেত এখন আর তা হচ্ছে না বরং এখন বুঝতে পারছি আমাকে টোপ ফেলে গেথে ফেলছে ভেবে খুব খুশি । আমাকে আরও বসে রাখার জন্য ও আমাকে ডঃ চোঙদার এর বিছানায় বসিয়ে দিলো এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ধরে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো । শ্রীমতি লুলিয়া দেবী কি করতে চলেছে বুঝতে পেরে আমি তিড়িং করে লাফিয়ে উঠে বললাম “লুলিয়া প্লিজ কিছু মনে করো না আমার হাতে সময় খুব কম ডায়েরিটা পড়ে তাড়াতাড়ি রহস্য সমাধান করতে হবে । তা না হলে সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে । তোমার ভালোবাসার দাবিটা পরে মিটিয়ে দেব”। লুলিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে বললো ” হ্যা সেই ভালো । তুমি আগে এই জরুরি কাজ টা মিটিয়ে নাও । সমাধান হলে আমাকে জানিয়ো “। আমি ডায়েরি নিয়ে বেরিয়ে এলাম ।
ট্যাক্সি তে বাড়ি যেতে যেতে মনে মনে হেসে বললাম ‘শ্রীমতি ছলণাময়ী, আমার কাজ হাসিল হয়ে গেছে। ডাইরি টা সঙ্গে করে নিয়ে আসতে চাইছিলাম’। সিচুয়েশন এমন তৈরী করেছিলাম যে লুলিয়া ও বলে উঠল ” হ্যাঁ তুমি বরং ডাইরি টা বাড়ি নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় পড়ো । কিছু পেলে আমাকে জানিও ” । আমিও বোকার মতো জিগেছে করে ছিলাম ” ডাইরি টা পড়লে নিশ্চয় কিছু পাব বলো? ” লুলিয়া ও উচ্ছল হয়ে বলেছিলো “নিশ্চই বাবে । আমার মন বলছে নিশ্চই পাবে ” । কথা মনে পড়তেই হেসেউঠলাম। তোমার আবার মন! তোমার মনে তো একটা কথাই ঘুরপাক খায় । কি করে কি ছলা কলায় আমাকে বশে রাখবে । দেখতে দেখতে রাত ৮ টা বেজে গেল । লুলিয়ার সব কথা মনে আসতেই মন টা ভারী হয়ে উঠল। লুলিয়ার শরীর ও মন দুটোরি আকর্ষণ ছিল । কিন্তু এখন মনের টান টা আলগা হতেই বোধহয় আমার মন টা ভারী হয়ে উঠেছে । সত্যিকারের ভালোবাসা ভেবে যেমন মন টা উদ্বেলিত হয়েছিল, পরে তা নকল বোঝার পর তেমনই বিতৃষ্ণা হচ্ছে । ছল চাতুরী করে অর্ক চৌধুরীকে বস করা যাবে না । মন কে মিথ্যে বুঝিয়ে লাভ নেই । কারণ যেই শরীরের সব আমার দেখা, সেখানে সিজারের দাগ না থাকা আমার মনকে বুদ্ধির শাসনে কাবু করার জন্য যথেষ্ট ।