সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৬৪)

চৌষট্টি

বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে । আমি আর ABC দুজনেই এখন হাম্বার্গ ইউনিভার্সিটির প্রফেসার ও রিসার্চ সায়েন্টিস্ট । দুজনেরই বেশ নাম আর যশ হয়েছে । হঠাৎ এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। আমার কাছে সিটি হসপিটালে থেকে তিনটে লোককে পাঠানো হল তাঁদের মধ্যে কিছু কমন রোগ সৃষ্টি হয়েছে। চামড়ার রোগ, মুখের ভেতর ঘা, পেট খারাপ, খিদে কমে যাওয়া এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতাও দেখা দিয়েছে। তার চেয়েও খারাপ ব্যাপার হল তিনজনেরি রক্ত বমি, নিম্ন রক্তচাপ ও ও সঙ্গে জন্ডিস ধরা পড়েছে । হসপিটালে জন্ডিস ভেবেই চিকিৎসা চলছিল।
কিন্তু রোগীদের মধ্যে আরেকটা উপসর্গ দেখা দেয় । চোখের করনিয়ায় কপার ডিপোজিট দেখা দেয় ।যাকে ইংলিশে ‘Kayser Fleischer Ring’ বলা হয়, যা কিনা শরীরে অতিরিক্ত কপারের কারণে হয়ে । সবরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে রোগীদের শরীরে জিংকের পরিমান খুব কমে গেছে এবং কপারের পরিমান খুব বেড়ে গেছে। কিন্তু কি কারণে ধরতে না পেরে, হসপিটাল থেকে আমাদের ডিপার্টমেন্টে কেসগুলো পাঠানো হয়েছে । তাঁদের আশঙ্কা নতুন কোনো ভাইরাস মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছে । আমি প্রথমে কেসটাকে কপার পয়জেনিং ভেবেছিলাম । কিন্তু শরীরের সব রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা দেখলাম শরীরে কিছু ফরেন বডি প্রবেশ করেছে । প্রথমে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া জাতীয় কিছু ভেবে পরীক্ষা শুরু করলাম । কিন্তু অনেক অনুসন্ধান করে বুঝলাম যে শরীরে বা রক্তে যে ফরেন বডি কণিকা গুলি ঢুকেছে তা পরজীবী নয় । সেগুলো নেহাতই আমার অজানা কোনো কেমিক্যাল এলিমেন্ট বা কম্পাউন্ড । লোকগুলির অবস্থার অবনতি হচ্ছিলো একজন তো প্রায় মারা যাওয়ার উপক্রম । তখন আমি সিটি হসপিটালেট ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করি যে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করে একবার চান্স নেবো । অদ্ভুত ভাবে আমাদের ভাবনা সার্থক হল । লোকটি বেশ দ্রুত সেরে উঠতে লাগলো । বাকি দুজনকেও একই ট্রিটমেন্ট করে ভালো করে তোলা হল । কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রে এই রোগটিকে শনাক্ত করা গেল না ।
আমার বায়োকেমিস্ট্রির ব্যাখ্যাতেও এর সমাধান পাইনি ।
মেডিকেল জার্নালে এই ঘটনা ও তার চিকিৎসা সম্মন্ধে রিপোর্ট বার হয়। কিন্তু রোগটি অজানাই থেকে গেল। তবে এই রোগের কোনো পুনরাবৃত্তিরো কোনো খবর পাওয়া যায়নি । লোক তিনটের খবর নিয়ে জানতে পারি তাঁদের মধ্যে আরেকটা মিল রয়েছে । তাঁদের তিনজনের জীবিকা একই । তারা তিনজনই ইতালির কোয়ারীতে কাজকরে । তারা ড্রিলিং এর কাজে ট্রেনিং প্রাপ্ত প্রফেশানাল কোয়ারী এক্সপ্লরার । ইতালিতে এক প্রজেক্টের কাজ শেষ করে, দীর্ঘ একবছর পর সপ্তাহ খানেক আগে জার্মানিতে ফিরে এসেছে। যাইহোক আমার জ্ঞান ও বিদ্যায় ঘটনাটার ব্যাখ্যা খুঁজে না পাওয়ায় আমি আমি ABC এর সাথে আলোচনা করি । ওকে সব ঘটনা জানাই যে আমি নিশ্চিত যে ওই ফরেন পার্টিকেলের শরীরে প্রবেশের গোলে ওদের ঐরকম রোগ দেখা দেয় । আমি মাইক্রোস্কপে সেই পার্টিকেলের মলিকিলার স্ট্রাকচারও দেখি DNA বা RNA হেলিক্স না পেয়ে । একেবারে অপরিচিত তার গঠন । আমার জানা কোনো মৌল বা যৌগের গঠনের সঙ্গে মিল নেই । কিন্তু বায়ো কেমিস্ট্রির সূত্রের সঙ্গে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি কনট্রাডিক্ট করছে, সেটা হল যদি ওই অজানা পদার্থের জন্য শরীরে এবনর্মালিটি দেখা দেয় তাহলে ওই পদার্থের উচিত ছিল শরীরের অন্য কেমিকাল এর সাথে রিএক্ট করা । ঠিক যেমন অক্সিজেন ও হিমোগ্লোবিন রিএক্ট করে অক্সিহিমোগ্লোবিন তৈরি করে ।কিন্তু এই ক্ষেত্রে ওই তিনজনের এরম. কিছুই হয়নি । অজানা পদার্থের পার্টিকেল গুলি শরীরে ইনসলিউবিল অবস্থায় পাওয়া যায় । আমি ABC কে ওদের রক্তের রিসার্ভ স্যাম্পেল দি ওর সুবিধার্থে । তাছাড়া পরীক্ষা নিরীক্ষা আবার সব কথোপকথনের রেকর্ড ও দিয়ে দিই । আমি ব্যাপারটা নিয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে, পুরো বিষয়টার দায় ABC র ওপর চাপিয়ে দিলাম । সত্যি বলতে কি, লাভ কিছু হবেনা এমনতাই আশা নিয়ে ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।