সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৪০)

চল্লিশ

১।
সম্বিত ফিরে পেতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগলো আমার। বুকটা আমার ধক ধক করছে। কিছুটা ইতস্তত করে লুলিয়াকে পাঁজাকোলা করে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। বুকটা ওঠা নামা করতে দেখে বুঝলাম শ্বাস প্রশ্বাস চলছে চলছে, তার মানে বেঁচে আছে। প্রথমে তো ভেবেছিলাম ও বেঁচেই নেই। এখন শ্বাস প্রশ্বাসের অস্তিত্ব দেখে মনে বেশ বল পেলাম। তাছাড়া শরীরে কোনো ক্ষত চিহ্ন নেই। রক্তক্ষরণও হয়নি। দাঁড়িয়ে থেকেই ওর পালস রেট দেখলাম। নর্মালই মনে হল। মুখের ওপর এক গুচ্ছ চুল এসে পড়েছিল। সেগুলো সরিয়ে কপালে হাত রেখে দেখলাম জ্বর নেই। তাহলে কি হল মেয়েটার? ঘুমন্ত মুখটায় শিশুর মতন সরলতা দেখে মেয়ে হয়। মুখটা শিশুর মতো মনে হলেও নগ্ন দেহটা তো শিশুর মত নয়। দৃষ্টিটা দেহের কাছে এসে থমকে যায়। চোখ ফেরানো যায়না। যে অনির্বচনীয় সৌন্দর্য চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে আছে সেই সৌন্দর্য উপভোগের মধ্যে মগ্ন হয়ে থাকতে চায় মন। জঙ্ঘা, উরু, কোমর, বক্ষ, আয়ত দুটি চোখ, কোনো অংশেই যেন কোনো ত্রুটি নেই। নগ্ন বক্ষের উপর দৃঢ় ভাবে বেড়ে ওঠা দুটি সুন্দর ও নিটোল স্তন গর্বোদ্ধত হয়ে শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে নির্দিষ্ট ছন্দে ওঠানামা করছে। বুকের রক্ত যেন ছলাৎ করে উঠল। ভিতরের পুরুষসত্ত্বা যেন বাঁধন হারা উদ্দাম হয়ে ওঠে। অবশেষে শিক্ষার অনুশাসনে তাকে দমন করে সম্বিত ফিরে পাই। যে নারী অসহায় এখন, যে নারীর গোপন যৌবন সম্ভার কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বেআব্রু হয়ে পড়েছে, তার প্রতি এই মনোভাব কুরুচিকর। সম্বিত ফিরে পেয়েই মনে হল ওর সম্ভ্রম বজায় রাখার জন্য কিছু একটা করা উচিত। এদিক ওদিক তাকিয়ে খাটের এক প্রান্তে ভাঁজ করে রাখা একটি চাদর দিয়ে ওর শরীরটা ঢেকে দিলাম। এবার মনে হল একটা ডাক্তার ডেকে আনা উচিত। কিন্তু আবার ভাবলাম ডাক্তার মানে তো লেডি ডাক্তার পাওয়া যাবে না, পুরুষ ডাক্তারি পাবো। সে ডাক্তার এসে চাদর তুলেই দেখবে। না না চিন্তা লুলিয়ার সম্ভ্রম অন্যের কাছে নষ্ট হতে দেওয়া যায়না। ঘরে একটা ওয়ার্ডরোব খুলে দেখলাম অনেকরকম জামা কাপড়। সেখান থেকে একটি নাইটি খুঁজে বার করলাম। নাইটি টা পড়াতে পারলে ভালো হয়। কিন্তু ভয় পাচ্ছি, নিজেকেই ভয়। শোওয়া অবস্থায় নাইটি পড়াতে গেলে ওর ওপর ঝুকে খুবই ঘনিষ্ট হতে হবে। তখন কি আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো? প্রায় নিথর হয়ে পরে থাকা সামলা রঙের যে দেহ অসাধারণ গ্রিক ভাস্কর্যের মতো দেখায় অনাবৃত অবস্থায়, তাকে আবার অনাবৃত করতে সাহসে কুলোচ্ছে না। নগ্ন নারীদেহ আমি আগেও দেখেছি সম্ভোগ করেছি কিন্তু এ দেহ অসাধারণ একদম অসাধারণ। তাছাড়া সে নারী সম্ভোগে তাদেরও সমর্থন ছিল। কিন্তু এই নারী তো অসহায়, সমর্থন বা বিরোধিতার অবস্থায় নেই। মনকে শক্ত করে আর্ত মানুষের সেবা করছি ভেবে কোনোরকমে নাইটিটা পরিয়ে দিলাম। এইবার আমি নিশ্চিন্ত হয়ে ডাক্তার দেখতে পারি। বেরোতে গিয়ে ভাবলাম আচ্ছা চোখে মুখে একবার জলের ছিটে দিয়ে দেখলে হয়না? তাতে যদি কোনো কাজ হয়? তারপর নাহয় ডাক্তার ডাকা যাবে যেই ভাবা অমনি সেই কাজে লেগে গেলাম। আমার শুধু একটাই আশা যে লোক গুলো পেছনে লেগেছে তাঁদের যদি একজনকেও ধরা যায় তালে দলটা ভাঙা যাবে। আমার মন বলছে লুলিয়ার এই অবস্থার জন্য ওরাই কেউ দায়ী। ও হয়তো তাদের দেখেছে।
২।
লুলিয়ার চোখে মুখে দু তিনবার জলের ঝাপ্টা দিলাম। একটু যেন নড়ে উঠল। এবার আমার মনে সাহস এলো, তাহলে আরো একটু অপেক্ষা করে দেখা যাক। মুখের ভিজে ভাবতে রুমাল দিয়ে মুছিয়ে দিলাম। এবার দেখি চোখ ব্ন্ধ অবস্থায় ঠোঁট দুটো নড়ছে। কি যেন বলতে চাইছে বিড়বিড় করে। মুখের কাছে কান পাতলাম। অস্পষ্ট ভাবে মুক্তি চাওয়ার কথা বলছে। এবার আমি অবাক হলাম। সাউথ ইন্ডিয়ান হয়েও অবচেতন মনে কেন বাংলা বলছে? অবচেতন মনে মানুষ তার মাতৃভাষাই বলে থাকে যাইহোক কলকাতাতেই মানুষ হওয়ার জন্য এটা হতে পারে ধরে আর বেশি মাথা ঘামালাম না। তবে কিসের থেকে মুক্তি চায় ও? আস্তে আস্তে সুন্দর টানা টানা চোখ দুটি মেললো। বললো, ‘জল জল’। আমি জলের জগ থেকে জল ঢেলে গ্লাস এ করে ওর ঠোঁটের কাছে ধরলাম। ধীরে ধীরে সবটুকু জল খেলো। জল খেয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বোধহয় চিনতে পারলো। জিজ্ঞাসা করলো “তুমি? “আমি বললাম, “এখন কেমন বোধহয় করছো? কি হয়েছিল তোমার? ও কোমরের ওপর থেকে দেহের অংশ তুলে আমার সাহাজ্যে বালিশে হেলান দিয়ে বসলো। বললো “এতো টেনশানএ আছি। সকাল থেকে রান্না করছিলাম। স্নান করে বেরোতে গিয়ে মাথাটা ঘুরে যায় তারপর কিছু জানিনা “।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।