সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৮৫)

পঁচাশি

পুনিত এখন হসপিটালে । মাথায় মেজর ইনজুরি, তেরোটা সেলাই পড়েছে । প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে
।সালাইন চলছে । সেন্স চলে এলেও ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে । তা নাহলে প্রচুর যন্ত্রনা সহ্য করতে হবে ।সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত ডাক্তার কিছু বলতে পারছে না । ইন্টারনাল হ্যাম্যারেজ যদি না হয়ে থাকে তাহলে চিন্তার কিছু নেই। আমি এখন বসার ঘরেই বসে আছি। বেতালদাও এসেছেন ।অনিকেতের অপেক্ষা করছি আমরা । লুলিয়া এখনও ঘুমোচ্ছে । ওর জন্য বাড়িতেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।লুলিয়াকে দেখে ডাক্তারবাবু বলেছেন যে সিম্পটমস দেখে মনে হচ্ছে গ্যাস পয়জনিং । খুব সম্ভবত গ্যাসটা কার্বনমনোঅক্সাইড । আমি এবার বুঝতে পারছি আমি আর পুনিত যে গ্যাসটায় মরতে বসেছিলাম হয়তো লুলিয়াকেও কোনো অজ্ঞাত কারণে আটকে রাখা হয়েছিল । কোনো ক্রমে ও পালিয়ে বাঁচে আর সোজা আমার কাছে চলে আসে । কিন্তু ও যখন পালিয়ে আসতে পেরেছে তালে ওকে বেশিক্ষন গ্যাস চেম্বারে থাকতে হয়নি । কারণ বিষাক্ত গ্যাস ওর মধ্যে প্রতিক্রিয়া করার সময় পায়নি ।তবে ওই ডাক্তার বলে গেছেন, “বাড়িতেই অক্সিজেন চলুক, যে ওষুধ লিখে দিলাম যদি কাজ করে তাহলে তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে ।তানাহলে ওকে হসপিটালে ভর্তি করতে হবে ।”গত রাতে রামদার চেম্বারে আমি কিছুক্ষনের জন্য জ্ঞান হারালেও পুলিশ যখন আমাদের এসে উদ্ধার করলো তখন আমার জ্ঞান ফিরে এসেছে। পুনিত যে জিনিসটা আমার হাতে দিয়ে বোতাম টিপতে বলেছিলো সেটা আসলে একটা ট্রান্সমিটার । ব্যাপারটা জেনেছিলাম আমাদের উদ্ধার করতে আশা একজন পুলিশ এর থেকে । রামদার ডেরায় ঢোকার আগে পুনিত যখন দুজন পুলিশের সঙ্গে কথা বলছিলো । তখনি ও কি করতে চায় জানিয়ে ওদের হাতে তখনি ট্রান্সমিটার সেন্সরটা দিয়ে রেখেছিল । উদ্দেশ্য ছিল যদি আমাদের কোনো বিপদ হয় তাহলে আমরা সংকেত পাঠাবো । ওরা তখন আমাদের অবস্থা বুঝে আমাদের উদ্ধার করতে চলে আসবে । সত্যি সত্যি বাস্তবে হয়েওছিল তাই । আমরা যখন চেম্বারে বন্দি হয়ে গেছিলাম পুনিতের কথা অনুযায়ী সেই খৈনির ডিব্যের মতো জিনিস টা টিপেছিলাম অজ্ঞান হওয়ার আগে । আমাদের সিগন্যাল পেয়েই পুলিশ দুজন চলে আসে এবং আমাদের খুঁজে উদ্ধার করে । ওরা বলছে ওরা আসে পাশে কাউকে দেখতে পায়নি ।আমাদের নিশ্চিত বিপদের মধ্যে ঠেলে ওরা বোধহয় লুকিয়ে পড়েছিল । তবে আমার বিশ্বাস ওরা আমায় অন্তত মরতে দিতো না । সময় মতো ঠিক উদ্ধার করে নিতো ।
অনিকেত এসে পড়েছে । বেতালতা ও অনিকেত দুজনকেই আমি একইসঙ্গে ডেকেছি। বাল্মীকি না থাকায় আমি চা বানিয়ে নিয়ে এলাম । বাল্মীকিকে যে তুলে নিয়ে গেল, এটা পুলিশে ডায়েরি করা উচিত কিনা ভাবছি । কিন্তু পুনিতের কথা মতো পুলিশই ওকে তুলে নিয়ে গেছে ।তাই আপাতত ব্যাপারটা চাপা থাক । চা টা খাওয়ার পর আমি বলতে লাগলাম বিগত কয়েকদিন ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি । তবে সব বলিনি । ধাঁধার সঙ্গে যেগুলো প্রাসঙ্গিক সেগুলোই বলেছি । আমার কথা শুনতে শুনতে বেতাল দা ও অনিকেত ও বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠেছে । আমি বললাম, “আমি সংক্ষেপে কিছু কথা বললাম আপনাদের। এবার আপনারা যদি কিছু সাহায্য করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়ে “। অনিকেত বলল,” আচ্ছা ফোল্ডার গুলো একবার দেখতে পারি? তার সঙ্গে ভেতরের সিম্বলগুলোউ? “আমি বললাম, না সরি অনিকেত আমি এগুলো তোমায় দেখাতে পারবো না । কারণ তাতে তোমার যে কাজটা করতে হবে, সেটা করতে অসুবিধে হবে । তোমার সব ভাবনা চিন্তাগুলো বায়াসড হয়ে যাবে ।”অনিকেত হতাশ হয়ে বলল,”ধাঁধা নাপরে সমাধান করবো কি করে?”আমি বললাম,”ব্যাপারটা হল তোমাকে আপাতত সমাধান করতে হবে না ।তোমার ইঞ্জিনিয়ারিং নলেজটা আমার কাজে লাগবে “। অনিকেত বলল,”কিন্তু কিভাবে এটা সম্ভব হবে?”আমি ওকে অপেক্ষা করতে বলে লুলিয়ার ঘর থেকে ওর ছেলের আলফাবেট গুলো নিয়ে টেবিল এ রাখলাম । বললাম,”অনিকেত তুমি যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ো তালে ইঞ্জিনিয়ারিং আর ড্রয়িং সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান আছে । তুমি আমাকে ইংরাজীর সব আলফাবেট এর এবং 0 থেকে 9 পর্যন্ত এই দশটি ডিজিটের বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ভিউ কেমন হবে তা ছবি একে দেবে । আমি আসলে বলতে চাইছি ইঞ্জিনিয়ারিং এর পরিভাষায় টোপ ভিউ, সাইড ভিউ, থার্ড অ্যাঙ্গেল ইত্যাদি যে কয় রকমের ভিউ হয়ে তুমি একে দেবে । খুব তাড়া তারি দরকার । পারবে তো?”অনিকেত বলল, “সিওর “।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।