সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৮২)

সোনা ধানের সিঁড়ি

১১৯

আমরা দীপাবলি বা দেওয়ালি কিছুই বলতাম না। জানতামই না এসব কাকে বলে। আমাদের গ্রামে ছিল কালীপুজো। যদিও কোনো পুজো নিয়েই আমার আলাদা কোনো আদিখ্যেতা ছিল না। যে বাড়ির বাবা মা ভক্তির চূড়ান্ত, শুধু তাই নয় যজমানি করে যাদের সংসার চলে সেই বাড়িতে জন্মে আমি হয়ে গেলাম একেবারে ভিন্ন প্রকৃতির। তবে অবশ্যই পুজো নিয়ে আমার একটা আনন্দ ছিল যদিও এই আনন্দের সঙ্গে ঠাকুরের প্রতি ভক্তি বা ঠাকুরকে মেনে চলার কোনো সম্পর্ক নেই।

সন্ধ্যেবেলা দুয়ারে বাতি জ্বললে আমার আজো খুব ভালো লাগে। কালীপুজোর সন্ধ্যেবেলা সবাই দুয়ারে জানলায় ছাদে বাতি জ্বেলে দিত। তখনও আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ আসে নি। তাই বাতির আলোর একটা আলাদা মাধুর্য ছিল। গোটা গ্রামটা বাতির আলোয় একটা অন্যরূপ ধারণ করতো। যদিও সেই সময় আরও একটা বড় আকর্ষণ ছিল শব্দবাজি। আজকের মতো সেই সময় কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। কিন্তু বাজি কোনোকালেই আমায় টানতো না। আমি ভয় পেতাম। সবাই যখন বাজিতে মত্ত আমি তখন সারা পাড়া ঘুরে বেড়াতাম একা একা। বাতি জ্বলা দেখতাম। অন্য একটা উদ্দেশ্যও ছিল। যে বাতিগুলো হাওয়ায় নিভে যেত সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে তুলে হাতে নিয়ে নিতাম। নিভে যাওয়া বাতি তোলার সময় পাশেরটাকেও ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিতাম এবং সেটিকেও হস্তগত করতাম।

বাড়ি ফিরে আসতাম বেশ কয়েকটি আধপোড়া বাতি নিয়ে। কি আনন্দ যে হতো! মনে হতো যেন আমার হাতে অনেককিছু আছে। কত সামান্য জিনিস নিয়ে কী বিরাট আনন্দ হতো।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।