সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব – ৭)

হারিয়ে যাওয়া একলব্য

ক্ষতি হলেও তা সামান্য হবে। আসলে প্রশ্ন হচ্ছে তখন যদি বলতো কর্ণ বাঁচাও, আমি নিশ্চয়ই যেতাম। আমার যথেষ্ট ক্ষমতা দিয়ে আমি তাদের বাঁচাতে পারতাম।বিবেক বলে ভীমকে বিষ খাওয়ানোর সময় তো তুমি তিলে। অন্যায় হয়েছে কতবার, তুমি তো কোনদিন প্রতিবাদ করনি। কর্ণ বলছে, আমিতো আমার সত্য পথে চলেছি। আমি আমার দৃষ্টিতে কোনো অন্যায় করিনি। তখন বিবেক বলছে, তুমি তোমার সামনেই তো দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ হয়েছে। কর্ণ বলল,বারবার একই কথা কেন স্মরণ করাও।আমি তো বলেছি বন্ধুর কোন কাজে আমি বাধা দেব না। স্বপ্নে জাগরণে বিবেকের সঙ্গে কথা বলে কর্ণ।বিবেক আবার খোঁচা মারে,কর্ণ তুমি এতবড় বীর হয়েও নীচকাজে বন্ধুকে সাহায্য কর।তুমি এতবড় দানবীর হলেও বস্ত্রের জোগান তুমি তো দিতে পারতে।কর্ণ বলে,আমি বিধাতার বিধি লঙ্ঘন করতে পারি না। আমি শুধু পারি নিজেকে নিঃশেষ করে অপরকে ভালোবাসতে পারি।
একলব্য অবহেলিত সমাজের প্রতিনিধি
একলব্য সমাজের সেই মানুষগুলোর প্রতিনিধি যারা শুধুমাত্র সমাজের বিধিনিষেধের জন্য দমে থাকার মানুষ নন। যত বাধাই আসুক তা যেন তাদের লক্ষ্য অর্জনের স্পৃহা আরও বাড়িয়ে দেয়।একলব্য হলেন পৃথিবীর সমাজের পিছিয়ে যাওয়া সমাজের প্রতিনিধি, যারা জাতিভেদ প্রথা বর্ণাশ্রম প্রথায় পিছিয়ে পড়েছে তাদের দেবতা হলেন একলব্য। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি শূদ্র হলেও জন্ম পরিচয় হতে পারে না তার আসল পরিচয় এবং তিনি শ্রেষ্ঠ ধোনির দল হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছিলেন।
বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ বিহীন একলব্য চারটা আঙুল নিয়ে আবার শুরু করেন তীরন্দাজি বিদ্যা অস্ত্রশিক্ষা শুরু করতে কঠোর সাধনায় গহীন অরণ্যে তিনশ মধ্যে ছড়িয়ে দেন এই অস্ত্রবিদ্যা এর ফলে তার একটা দল তৈরি হয় সেই দলের প্রতিবাদ এবং ধীরে ধীরে বিরাট গঠন করে তিনি তাদের অস্বীকার করলেন।
একলব্য চারটি আঙুল নিয়ে শুরু করেন কঠোর সাধনা।একাগ্রচিত্তে,সরল মনোভাবে তিনি শুরু করেন অস্ত্রচালনার সাধনা।গুরুকে স্মরণ করে এই সাধনায় তিনি সিদ্ধিলাভ করেন।চারটে আঙুলের সাহায্যে তির চালিয়ে তিনি দলপতি হন নিজের গড়া দলের।শূদ্রের বংশে বীরের অভাব নেই।তাদের একত্র করে অস্ত্রশিক্ষা দিতে শুরু করেন।শিষ্যমহলে তিনি গুরুদেব রূপে শ্রদ্ধা অর্জন করেন।
কিন্ত এই একাগ্র সাধকের পরিণতি মহাভারতের অন্য অনেক চরিত্রের মতই করুণ। তিনি এক পর্যায় কৃষ্ণের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। রাজা কৃষ্ণ তাকে পাথরাঘাতে হত্যা করেন। এক ধারণা অনুযায়ী, রাজা জড়-সন্ধের মিত্র, শিশুপল, চেদি রাজ্যের রাজপুত্র, তার হবু পত্নী কৃষ্ণের সাথে পালিয়ে গেলে একলব্য, জড়সন্ধ আর শিশুপল তাদের তাড়া করেন। ক্রোধান্বিত কৃষ্ণ পাথর দিয়ে আঘাত করে একলব্যের খুলি গুঁড়ো করে ফেলেন। করে বললেন কি দুঃখ দক্ষিণাচরণ বলুন আমি দিতে প্রস্তুত আমি প্রাণ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত তখন দ্রোণাচার্য বললেন তোমার বুড়ো আংগুল বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ আমার প্রয়োজন তুমি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ গুরুদক্ষিণা দাও হতে পারবেনা কিন্তু দ্রোণাচার্য জানতেননা সাধনায় সবকিছু সম্ভব হতে পারে। দ্রোণাচার্য এত বড় হয় কেন তার সঙ্গে কতটা ছাড় করলেন তিনি দেখা পেয়ে বললেন এতদিন তো তোমার অস্ত্রশিক্ষা সমাপ্ত হয়েছে এবার গুরুদক্ষিণা দেবার পালা গুরু দ্রোণের কাছে নিগৃহীত একলব্য তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ছাড়াই তার অনুশীলন চালিয়ে যান। কালক্রমে মহাভারতের শেষভাগে যখন কুরু পান্ডব্দের মধ্যে মহারণের সূচনা হয়, তখন তিনি কৌরবপক্ষে যোগ দেন। কারন গুরু দ্রোনাচার্য ও পান্ডুপুত্র অর্জুনের প্রতি তার মনে তীব্র ক্ষোভ দানা বেধেছিল, কেননা অর্জুনকে শ্রেষ্ঠ ধনুর্বীর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি গুরুদক্ষিণা হিসেবে চাওয়ার মত নিষ্ঠুরতম কাজ করেছেন গুরু দ্রোণ।একলব্য মনে মনে ভাবেন, আমি গুরুদেবকে এত শ্রদ্ধা করি তবু গুরু দ্রোণাচার্য আমাকে ফেরত পাঠালেন। তিনি সন্তানস্নেহে আমাকে দেখতে পারলেন না। আমি শূদ্র বলে, জাতপাত হিসেব করে, কারও মূল্যায়ন করা কি উচিত। আচার্য এত বড় পন্ডিত হয়েও কেন শুধু জাতপাতের জন্য আমাকে বর্জন করলেন। আমার অস্ত্রশিক্ষা, আমার কর্ম কি আমার পরিচয় নয়। সেই সময়ে দ্রোণের থেকে প্রত্যাখ্যাত কর্ণও তার প্রতি সমব্যাথী ছিলেন।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।