গুচ্ছকবিতায় সুদীপ ঘোষাল
১| চন্দ্রাবলীর সংসার
আমাদের জ্যোৎস্না রাতের ঘর
দুজনে দুজনের দেহে আলো মাখাই
মন জুড়ে ক্যাপসিক্যামের আদর
আলুপোস্ত আর মুগের ডালে রসনা তৃপ্ত
ঝাল লাগলে জলের স্নেহ মাখি…
ওপাড়ে যে কুটীর দেখা যায় গোলাপ ঘেরা
তার পাশ দিয়ে বয়ে চলে ছোট নদী
শ্রমিকের ঘাম ধুয়ে দেয় উদার কুলুকুলু স্রোত
ওটাই আমাদের শীতল আশ্রয়ের আদর
সবুজ মনে মাঠে কাজ শেষে ফেরে যখন
ঈশানীর হাওয়ায় দোলে প্রতিক্ষারত চাঁদমুখ
খুশির হাওয়ায় জেগে ওঠে রাঙা সূর্যের রোদ…
চন্দ্রাবলীর পরিশ্রমের ঘাম চেটেপুটে খায়
খিদের পাতে…
২| অন্তর্জলি
বটবৃক্ষের ছায়ায় আগুন দুটি ঠোঁট
তিলে তিলে বর্ষ শেষে নিভৃত আলো
গোপন রেখেছে তবু বেহালার তান..
ঋতু জুড়ে অঙ্ক হিসাব দিন-ক্ষণ
মিলে যায় রসিকের যত রসায়ন
পরাণ পথিক জানে পথ নির্বাচন
মাটির প্রতিটি বিন্দু ঘেরা বিবর্তন
অন্তর্জলির হিম পরশ অন্তিম আসন
নিরপেক্ষতার স্বাদ আনে মৃত্যুর শাসন
৩| কবিতা জীবন
গ্রীবা ঘুরিয়ে আঁচল তোলে সময়, নদীজীবনের বারবেলা,চক্রাকারে ঘোরে ধুলোখেলা
ম্লান স্মৃতি খেয়াল খুশি স্বপ্নে জড়ায় মায়া,দুটি পাখি মুখোমুখি শান্ত মগ্ন দুপুর
রংচটা হেমন্ত-বিলাসে, একা অলসে এক ঝলক বসন্ত হাওয়া আবির ফাগুন ছায়া
সবুজে ভিড়ে নবীন অপুর নয়ন, স্মৃতি ছুঁয়ে স্বস্তি চয়ন, হলুদ পাতার মর্মরে
উত্তর বাতাসে লম্বা ছায়া,এখনও কাঁদে দিদির মায়া, আরণ্যক হাওয়া
ফিরে যায় কথার পিঠে কথা অতীত আয়না ব্যথা
লেখে জীবন কবিতা রোজ স্বপ্ন দেখা শ্যামলবরণ গাথা
৪| পান্ডুলিপি
অনন্ত প্রবাহে,শ্রীরামকৃষ্ণ -আশীষে
কূপমন্ডুক জীবন-পান্ডুলিপির উত্তরণ
ছাইভস্ম গঙ্গায় ভাসার আগে…
মৃত্তিকা-হৃদয় জাগে আলোয়
আনন্দে বালক সময়, কর্পূর-প্রাণ, নাচে
চঞ্চল, রঙীন অহঙ্কারী ফিতে-জীবন পোড়ে
বিস্তৃত আদিগন্ত গোলক গালিচায়। এবার
মাটিমাখা হোক শরীর, চন্দন-আঘ্রাণে
জ্যোৎস্নার মোহময় কুমারী নিশি বরণে
নাচে মনরাধা, মোহনবাঁশির সুরে
সাধনার সংযম-শিকলে তৃপ্ত আজ
জীবনের অতৃপ্ত ছৌ..