সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব – ২৫)

তান্ত্রিক পিসেমশাই ও আমরা দুজন 

৩৭

পিসেমশাই ভয়ংকর ভৌতিক কাহিনীও বলেন। তাকে অনেক জায়গা যেতে হয়। সেইজন্য তার স্টক ফুরোয় না। পাশপর বাড়ির অজয় আজ তার মোটর বাইকের চাবিটা খুঁজে পাচ্ছে না। সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খোঁজার পরে দেখলো একটা লোক দোতলার ঘরে সিলিং ফ্যানে ঝুলছে। তার পকেট হাতড়ে খুঁজে পেলো বাইকের চাবিটা। আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে। আজকে রিয়াকে নিয়ে মায়াপুর যাবে। গতকাল রিয়াকে সন্টুর বাইকের পিছনে দেখে পাগল হয়ে গেছিলো। মরতেও গেছিলো। আজ চাবিটা নিয়ে ছুটে চলেছে রিয়ার কাছে। সন্টুর আগে তাকে পৌঁছতে হবে প্রেমিকার কাছে। আজ বেশ হাল্কা লাগছে নিজের শরীরটা। অজয় মনে মনে ভাবলো,প্রেম বেশ জটিল ব্যাপার। রিয়াকে আজ গাড়িতে চাপিয়ে বেশ মজা করে ঘুরে বেড়াবে। মানুষ ছাড়া গাড়িটা চলতে দেখে অনেকে ভয়ে পালিয়ে গেলো। রিয়া আর সন্টু দেখলো,বাইকটা ছুটে আসছে তাদের দিকে ঝড়ের গতিতে…পিসেমশাই বললেন, আমার ঘরের জানালা থেকে আরোহীবিহীন মটর সাইকেল দেখেই বুঝেছিলাম, মালে গিঁট আছে…
আমার ফোনটা বেজে উঠল। কানে ঠেকাতেই কর্ণ বিদারক কান্না। এই শুনছো, আমি স্টেডিয়ামে আছি। তুমি চলে এস। পিসেমশাই বললেন, প্রেম করতাম তখন আদৃজার সঙ্গে। তড়িঘড়ি স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখি অনুপমের কোলে আদৃজা। অনুপম দৃশ্য।
কি রে তোর রমার খবর কি? অনুপম কুকুর দাঁত বের করে বললো, আমি আদৃজাকে ভালোবাসি।রমা আমার অবসরের সঙ্গিনী। ভ্যালেনটাইন্স ডে তে সত্যিটা জেনে যা। আদৃজা আমায় মোবাইলে কল করে ডাকলে কেন,আমি বললাম আদৃজাকে। তাকে আমি ভালোবাসতাম। আদৃজা কোনদিন আমাকে সত্যিটা বলে নি। আদৃজা বললো, তুমি একবার বললে আমার মা বাবা রাজী হবে আমাদের বিয়েতে। আমি অনুপমকে বিয়ে করতে চাই। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো, তাহলে এইটুকু স্বার্থত্যাগ করতে পারবে না? প্লিজ আমার জন্য, প্লিজ… আমি সম্মতি দিয়ে আদৃজার বাড়ি গেলাম। বাড়ি গিয়ে কাকিমা আর কাকুকে ডেকে বললাম, অনুপম ভালো চাকরি করে। আদৃজার বিয়েটা ওখানেই দিন। আমার কথা শুনে কাকু আর কাকিমা কাঁদতে শুরু করলেন। আমি বললাম, কি হলো। কাঁদছেন কেন? কাকু বললেন, ওরা দুদিন আগে আমাদের বলেছিলো। কিন্তু আমরা রাজী না হওয়ায় ওরা নিজেরাই বিয়ে করেছে আর…
আর কি? বলুন? আজ ওরা দুজনেই শান্তিতে শুয়ে আছে শ্মশানে। বিয়ে করলো তো মরল কেন?
কাকু বলল, আমাদের শাস্তি দেবে বল, এরা তো আচ্ছা আহাম্মক, আমি একটা টোটো ভাড়া করে শ্মশানে গেলাম। তখন ইলেকট্রিক চুল্লিতে সব শেষ। হঠাৎ চুল্লীর ওপারে আদৃজাকে দেখতে পেলাম।সিঁদূর ঢেলে সিঁথি সাজানো । দারুণ লাগছে । ঠিক মা মা ভাব। সে বলছে, কি গো। আমার বাবা মা রাজী হলো অনুপমের সঙ্গে বিয়েতে? হবে না জানতাম । এবার আমরা ভালভাবে সংসার করব। আত্মার মিলনে আমাদের সংসার।
আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না,আমি নিজেইম।আর আদৃজার প্রশ্নের আমি কোনো উত্তর খুঁজে পেলাম না…এই ভৌতিক ঘটনাটি আজও আমি ভুলতে পারি নি…পিসেমশাই চোখ মুছে বললেন, তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমি মহাতান্ত্রিক হব। তারপর আর বিয়ে করি নি। এখনও প্ল্যানচেট করলে রাতে আদৃজা আসে, কথা বলে।রতন বললো, এই হলো আসল প্রেম। তাহলে..,রতন খুব বেয়াড়া। দেহ সম্পর্কের কথা জানতে চাইছিলো। আমি বললাম, যতই হোক পিসেমশাই হন আমাদের। আদৃজাকে আমরা পিসি বলতাম। সেই থেকে পিসেমশাই বলি এনাকে। আসল নামটা কেউ জানে না ভাই।
পিসেমশাই বললেন, স্বপ্ন হল ধারাবাহিক কতগুলো ছবি ও অবচেতন মনের চিন্তার সমষ্টি যা ঘুমের সময় মানুষের মনের মধ্যে আসে। ভূতেরও হতে পারে।
রতন জিজ্ঞেস করে, স্বপ্নে ভূত দেখলে পালাতে পারি না।
পিসেমশাই বলেন, ভূত সম্পর্কে বা অন্য কোন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করলে তা মনের এক গভীর স্তরে মজুত থাকে। এগুলো নিছক কল্পনা হতে পারে, অবচেতন মনের গোপন কথা হতে পারে, বা অন্য কিছুও হতে পারে, বয়স অনুযায়ী ভাগ করা বেশ কষ্টকর। সাধারনত মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, তবে সবগুলো মনে রাখতে পারে না।স্বপ্নের অর্থ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন লোক ভিন্ন ভিন্ন মতামত পোষণ করেছে যা সময় এবং বিষয়ের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছে। অনেকেই স্বপ্ন সম্পর্কে ফ্রয়েডের মতকে সমর্থন করেন যে স্বপ্ন মূলত মানুষের গোপন ইচ্ছে এবং আবেগগুলির বিস্ফোরণ ।
রতন বলে এক এক সময় দেখি কেউ আমাকে তাড়া করেছে। আমি এক পা এগোতে পারছি না। আঠার মত আটকে যায় পা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।