সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব – ৬)

হারিয়ে যাওয়া একলব্য

অধিরথ ছিলেন মহাভারতে বর্ণিত ধৃতরাষ্ট্রের সারথি। বাহিনীর প্রধান ছিলেন।তিনি এবং তার স্ত্রী রাধা কুন্তীর কানীন পুত্র কর্ণকে লালন-পালন করেন। তিনি সারথী হওয়ায় এবং কর্ণ তাহার পুত্র বলে পরিচিত পাওয়ায় কর্ণের আরেক নাম ছিলো সুত পুত্র।
অধিরথের পিতার নাম সুহত্র। তিনি ছিলেন বিচিত্রবীর্যের সারথি। বিচিত্রবীর্যের দ্বিতীয় স্ত্রী অম্বালিকার সাথে মিলনে সুহত্রের ঔরসে অম্বালিকার গর্ভে অধিরথের জন্ম হয়। কিন্তু অম্বালিকা লোকলজ্জায় তাকে ত্যাগ করে এবং সুহত্ৰ তখন তাকে লালন-পালন করেন।
কুন্তি কর্ণের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। কর্ণ বললেন,রাজমাতা, আমার কাছে কেন? কি চান বলুন মাতে।কুন্তি বললেন যে তুমিও আমার পুত্র। আমার কুমারীকানীন পুত্র।তাই আমি তোকে যমুনার জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম। কর্ণ বললেন,এতদিনে যুদ্ধ শুরুর আগে নিজের পুত্রদের কল্যাণের জন্য আমার কাছে এলে মা।আরও আগে আসতে পারতে মা।তুমি আজ পরিচয় দিচ্ছ তুমি আমার মা, জননী। তুমি কুমারী অবস্থায় আমাকে ভাসিয়ে দিয়েছো, সে তো তোমার অপরাধ নয়। সমস্ত সমাজ কুমারীর পুত্রকে মেনে নেবে না। তাহলে তুমি ঠিকই করেছো। কিন্তু এক্ষেত্রে তোমার কতগুলো ভুল আছে।
কুন্তি বললেন আমি যুদ্ধ চাইনা বাবা, আমি ছয় পুত্রকে ফিরে পেতে চাই। আমি তোকে রাজ বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে এসেছি। আমি সকলকে পরিচয় দেব, কর্ণ আমার বড় ছেলে। সে কুমারী অবস্থায় জন্ম নিয়েছিল বলে আমি তাকে আনতে পারিনি। কিন্তু আজ তাকে আমি ফিরিয়ে আনতে চাই।
কর্ণ বললেন তা আর সম্ভব নয় মা। যুদ্ধ তো অবশ্যম্ভাবী। তুমি যদি আগে আসতে মা। তুমি তো জানো আমার পালিত পিতা তোমাদের সারথি, তুমি জেনেশুনে এত দেরী করলে কেন মা? আরো আগে যদি আসতে এ যুদ্ধ হয়তো হতোই না।কুন্তি বললেন, আরেকবার ভেবে দেখ বাবা, তুই ফিরে চল, তুই পান্ডবদের মধ্যে বড়ভাই। তুই যদি বুঝিয়ে দুর্যোধনকে বলিস, দুর্যোধন তোর কথা শুনবে। দুর্যোধন তোর পরম মিত্র। তাকে বুঝিয়ে বললে যুদ্ধ বন্ধ করা যেতে পারে। আমার আসার কারণ ছয় পুত্রের জীবন বাঁচানো।এ জন্যই আমি এসেছি শান্তির বাণী নিয়ে।আমি পাঁচ পুত্রের জন্য আসিনি হে পুত্র। আমি এসেছি আমার বড় পুত্রের জীবনের জন্য, আমার ছয় পুত্রের জন্য, আমার বড় পুত্রকে আমি নিয়ে যেতে চাই।
কর্ণ বললেন, সেটা কি করে সম্ভব? না বল তুমি, আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই যুদ্ধ শুরু হবে, আর এই অবস্থায় যুদ্ধ কি বন্ধ করা সম্ভব? কুন্তি বললেন তাহলে তুই তোর ভাইদের কি হত্যা করবি? কর্ণ বললেন, কোন ভয় নেই মা। একমাত্র অর্জুন ছাড়া আমি আর কাউকে আঘাত করব না। কিন্তু অর্জুন আমার পরম শত্রু।আমার বন্ধুর শত্রু আমারও শত্রু। কুন্তি বললেন,কিন্তু সে যে তোর ভাই।কর্ণ বললেন,তোমার পঞ্চপাণ্ডব থাকবে।যুদ্ধে হয় আমি না হয় অর্জুন, দুজনের একজন মরব।একজন পুত্র কে হারাতে হবে তোমায়।

কুন্তি বললেন, আমি বড় আশা করে এসেছি বাবা, রাগের কথা বলিস না। তুই আর একবার ভেবে দেখ, দুর্যোধনকে তুই যদি বুঝিয়ে বলিস, এযুদ্ধ থামানো যাবে। তোর কথা সে ফেলবে না। আর যুদ্ধ থেমে গেলে তুই পান্ডবদের মধ্যে থাকবি বড়ভাই হয়ে। পান্ডবরা তোকে স্বীকার করে নেবে নিশ্চিত। পান্ডবরা ধার্মিক, ধর্মপরায়ণ ছেলে আমার, তোকে বড়ভাই ধ বলে মেনে নেবে। তুই এই যুদ্ধ বন্ধ কর বাবা।
কর্ণ বললে, যখন আমাকে স্বয়ম্বর সভায় সূতপুত্র বলে অপমান করল দ্রৌপদী, তখন তো তুমি চুপ করেছিলে, তখন তো তুমি প্রতিবাদ করতে পারতে মা। কুনৃতি বললেন, কি করে বলব আমি।কি করে পারব গোপন কথা প্রকাশ্যে স্বয়ম্বর সভায় বলতে। কর্ণ বলে, আমি কি করতে পারি তার জন্য। আমার জন্মের জন্য আমি তো অপরাধী নই।তাহলে আমি কোনদোষে দোষি বল মা।
কুন্তি বললেন,তোমার কোন দোষ নেই বাবা,তুমি,বীর,দানবীর।তুমি পৃথিবীর বুকে অমর হয়ে থাকবে চিরদিন।

কর্ণের বিবেক বলছে, অভিমন্যুকে মারার সময় তুমি তো সেপানে উপস্থিত ছিলে, তখন তুমি তখন তো প্রতিবাদ করতে পারতে। কর্ণ বলছে, সেটাও সত্যি। কিন্তু পাণ্ডবরাও অন্যায় ভাবে অনেক কাজ করেছে। সেহেতু আমি আমার বন্ধুর পক্ষে আমার কর্তব্য সমাপন করেছি। আমি মনে করি আমি সঠিক পথে আছি এবং সঠিক পথেই চলছি। যারা উপস্থিত ছিল তাদের উদ্দেশ্যে দ্রৌপদী বাঁচাতে বলেছে।আমাকে উল্লেখ করে কিছু বলে নি।তাহলে আমি দোষি হব কেন? আর আমি সবসময় জানি পাণ্ডবরা সত্যের পথে আছে তাদের পরাজয় হবে না।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।