তিথি দুরু দুরু বুকে অরণ্য, বিবেক আর সোমাকে নিয়ে আসছে তার বাড়িতে ।তার বিশাল ছাদে অনেক সময়ই বন্ধুরা আসে, আড্ডাও বসে ।কিন্তু আজ ব্যাপারটা অন্যরকম ।ঠাকুমা তার বন্ধুরা এলেই তাদের সঙ্গে আলাপ জমাতে আসে তাদের ঠিকুজি কুষ্ঠি জানে , ছড়া কাটে,গান গায় ,বাংলাদেশে ঠাকুমা র কি কি ছিল গল্প শোনায় ,আবার আচারও খাওয়ায়।ঘরে ঢুকেই বারান্দায় দেখে ঠাকুমা বসে আছে ,হাঁটুতে মোক্ষম ব্যথা, আজ নট নড়ন চড়ন।তিথি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।যাক বাঁচা গেছে বুড়ি ছাদে উঠতে পারবে না ।তাড়াতাড়ি করে দলবল নিয়ে ও ছাদে উঠে গেল, আর ঠাকুমাকে বলে গেল ,এখানেই থেকো ,একটু বাদে রাখী আর পম্পা আসবে উপরে পাঠিয়ে দিও।
রাধুদা দুবার ছাদে এসে লুচি, আলুর দম, চা ,কাগজের কাপ প্লেট দিয়ে গেছে ।বাংলা ব্যান্ড নিয়ে তখন জোরদার আলোচনা চলছে ।সবে ইয়া বড় একটা লুচির টুকরো মুখে দিয়েছে তিথি এই সময়ে দেখে ঠাকুমা এসে হাজির ।
কিগো বাছারা তোমাদের সাথে পরিচয় করতে এলাম, তোমারা নতুন এসেছো কিনা! এই সময়ে কাউকে কোনো সুযোগ না দিয়ে অরণ্য বলে বসলো ঠাকুমা আমি অরণ্য ইসলাম,সালাম ঠাকুমা।ঠাকুমার চোখ গোল হল,তিথির মাথা ঘুরতে লাগলো ।ঠাকুমা জিজ্ঞাসা শুরু করলো হ্যাঁ বাবা তোমার আদি বাড়ি কি বাংলাদেশে?
না না ঠাকুমা বাংলাদেশে কেন হবে! আমরা তো পশ্চিমবঙ্গেই থাকি বংশ পরম্পরায় ।
ঠাকুমা বলতে শুরু করলো জানো আমি বকুল ফুল পাতিয়েছিলাম আমিনাকে।আমাদের দুর্গা দালানে আমরা পুতুলের বিয়ে দিতাম ।দেশটা ভাগ হয়ে গেল আর আমার বকুল ফুল হারিয়ে গেল।ঠাকুমার চোখের কোণে জল ।ওরা চারজনে ঠাকুমা কে জড়িয়ে ধরলো ।
তিথি ভুলে গেছিল ঠাকুমা রাডক্লিফ লাইন জানে না ,বিভাজনের রেখা আর বকুল ফুলের দুঃখ, হারানো ঘরবাড়ির ব্যথা ঠাকুমা বুকে পুষেছিল কিন্তু ঘৃণা পোষেনি।
ঠাকুমা গান ধরেছে, ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে ‘………
নিচে তখন মা শাঁখ বাজিয়ে সন্ধ্যে দিচ্ছে ,ঠাকুমা গান থামিয়ে জোড় হাত করে ইষ্ট দেবতাকে প্রণাম করছে ।ঠাকুমাকে তখন সর্বংসহা ধরিত্রীর মতো দেখতে লাগছে ।