ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় শ্রীপর্ণা ঘোষ (ছোটগল্প)

পরি 

এখন হসপিটালে কেউ আসে না। কারণ কেউ অসুস্থ হলে পরি তাকে সুস্থ করে দেয়। তাই মানুষ এখন বেশি বেশি করে অসুস্থ হয় যাতে পরির দেখা পায়।
একটা ছেলে ছিল। ছেলেটার নাম আকাশ। আকাশ রোজ রাতে পরিদের দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। কিন্তু যেই একটু রাত হয় তার ডান চোখের পাতা বাঁ চোখকে বলে, ‘ আর পারছিনা ভাই, এবার ঘুমাতে যাই।’ বাঁ চোখ বলে, ‘ চ ভাই আমারো ঘুম পেয়েছে।’
চোখের পাতারা যখন ঘুমাতে যায় তখন আকাশও ঘুমিয়ে পরে। আর তার পরি দেখা হয় না। একদিন সে ঠিক করল ইচ্ছে করে অসুস্থ হবে, তাই সে ভোরবেলা ঠান্ডার মধ্যে গায়ে জল ঢালল। অমনি তার সর্দি হয়ে গেল। রাত্রিবেলা সে অপেক্ষা করল। কিন্তু পরিকে দেখতে পেল না।
একসময় তার সর্দি ঠিক হয়ে গেল, তবু সে খুশি নয়। সে মাকে বলল, ‘ মা কালকে রাতে পরিরা আসেনি,তবু আমার সর্দি ঠিক হল কি করে? ‘ মা বলল, ‘ তুই ইচ্ছে করে অসুস্থ হয়েছিস তাই পরি আসেনি।’ তখন সে বুঝল যে সত্যি অসুস্থ হলে পরি আসে।
একবার আকাশের খুব জ্বর হল। বাবা মা চিন্তায় পড়ে গেল। সে রাতে অপেক্ষা করে রইল, পরিদের আসার জন্য। কিন্তু সেদিন রাতেও পরি এল না। সে সারা রাত ভাবল, আমি তো সত্যি সত্যি অসুস্থ হলাম তবু পরিরা আসছে না কেন!
সকালে মা বলল, ‘ তোর তো জ্বর বাড়ছে তাই তোকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।’ আকাশ বলল, ‘ না আমি কিছুতেই যাব না।’ মা বলল, ‘ হসপিটালে পরি থাকে। সেই পরি তোর জ্বর ঠিক করে দেবে।’ সে বলল, ‘ তাই? তাহলে আমি যাব।’ বাবা মা তাকে হসপিটালে নিয়ে গেল।
হসপিটালে রাতে এমন জ্বর বাড়ল যে আকাশ মাঝে মাঝে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল। তার যখন একটু একটু জ্ঞান আসছিল সে দেখছিল, তার কাছে পরি এসেছে। পরি কী সুন্দর! সাদা ধবধবে তার ডানা। তার সাদা মুকুটের মধ্যে দু’একটা পাথর। তার জামাটাও সাদা। পরি তাকে ওষুধ খাওয়াচ্ছে। বার বার দেখে যাচ্ছে। ইঞ্জেকশান দিচ্ছে।
ক’দিন হল আকাশ সুস্থ হয়ে উঠেছে। সে মনে করছে সে পরির জন্য সুস্থ হয়ে উঠেছে। সে তার মাকেও বলেছে, ‘ মা আমি পরিকে দেখতে পেয়েছি। পরি আমাকে ঠিক করে দিয়েছে।’ সে যখন হসপিটাল ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছিল তার মা তাকে বলল, ‘ ডক্টর আন্টিকে টা টা করে দাও।’ আকাশ যেই পিছন ফিরে দেখতে গেল, দেখল, কোথায় ডক্টর আন্টি! সে দেখল পরি তার মতো একটা ছেলেকে নিয়ে হসপিটালের ভেতরে উড়ে গেল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।