T3 || ১লা বৈশাখ || বিশেষ সংখ্যায় সুদীপ ঘোষাল

একটি বাড়ি ও বিক্রয়ের সমস্যা

আমার বন্ধু অনিল সেটেলমেন্ট বিভাগে কাজ করে। সবসময় জমি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি।আর আমি বিষয়ি লোক নই। এসব কিছু জানি না বুঝি না। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে অনিল আমাকে জ্ঞান দেয়। অবশ্য ছাত্র হিসেবে আমি মন্দ নয়।

বাড়ি বিক্রি করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা সত্যিই হল যে বেচতে গেলে ছাগল আর কিনতে গেলে পাগল। প্রথমে একজন খরিদ্দার এলেন। তিনি বাড়ি দেখলেন, পছন্দও হল কিন্তু তার একটি শর্ত আছে। প্রথমে একটা এগ্রিমেন্ট হবে যে আমি বাড়িটা কেনার জন্য দু লক্ষ টাকা আ্যাডভান্স দিলাম। বাড়ির মোট মূল্য পঁচিশ লাখ। বাকি টাকা রেজিস্ট্রির সময় দেওয়া হবে। আর ছয়মাসের মধ্যে বাড়িটি অন্য কোথাও বিক্রি করা যাবে না।
মানে ব্যাপারটা হল এই দু লাখেই মহাশয় বাড়িটি দখলে রাখবেন এবং গৃহকর্তাকে হয়রানি করে মারবেন। বন্ধু সঞ্জয় বললেন, দরকার নেই ওরকম এগ্রিমেন্টের। নগদ টাকা দাও বাড়ি নাও। জোঁকের মুখে নুন পড়লে মুখটি যেমন বিকৃত হয়ে যায় ঠিক তেমনিভাবে ক্রেতা মহাশয় গাত্রত্থান করলেন।
আবার কিছুদিন পরে আর একজন ক্রেতা এলেন।তিনি বললেন, আমি আপনার বাড়ি দেখিয়ে লোন নেব এবং অন লাইনে টাকা ট্রান্সফার করে দেব। এবারও রাজী হলেন না আমার স্ত্রী। তিনি বললেন শহরে ফ্ল্যাট প্রতারণার নানা দিক। এক ফ্ল্যাট বহুবার বেচা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাট শেষ করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা হয়না, চলে টালবাহানা। জমির ছাড় না দিয়েই তৈরি হয়ে যাচ্ছে ইমারত। বিজ্ঞাপন ও বিক্রয় পুস্তিকাতে যে সব সুযোগ সুবিধার কথা ফলাও করে লেখা থাকে, বহুক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। বেআইনি জমিতে তৈরি হচ্ছে ফ্ল্যাট, ক্রেতা জানতেই পারেনা। তাই বাড়ি কেনার আগে দেখে নিন সম্পত্তির বিক্রেতা, নির্মাতা, মালিক কারা? জমির মালিকানা ঠিক আছে কিনা। বিক্রেতার স্বত্ব যাচাই করুন সার্চিং করাতে ভুলবেন না। যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে চুক্তি দেখে নিন। প্রয়োজনে আসল দলিল দেখতে ভুলবেন না। পরচা অথবা BLRO অফিস থেকে জমির চরিত্র সম্পর্কে খোঁজ নিন। সম্প্রতি দেওয়া খাজনার রসিদের কপি সংগ্রহ করুন, দেখে নিন খাজনা বিক্রেতার নামেই জমা পড়েছে কিনা।

পুরসভার অধীনে হলে দেখে নিতে হবে তা বিক্রেতার নামে মিউটেশন করানো আছে কিনা। জমি বাড়ি কেনা-বেচা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইনে এসমস্ত দিকগুলি নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকলেও তা থেকে গেছে আইনের পাতাতেই। ফলে অসাধু প্রোমোটার চক্রের পাল্লায় পড়ে সর্বস্বান্ত হতে হয় বহু মানুষকেই। হয়ে যায় অন্ধকূপে ঝাঁপ দেওয়া। মাথার ওপর ছাদ জোগাড় করতে গিয়ে মাথার ওপর ভেঙে পড়ে আকাশ।আমার মিউটেশন করা নেই। কিন্তু পাঁচ হাজার খরচ করতে পারলে মিউটেশন হবে।

অনলাইনে বাড়ি বিক্রির এই সম্ভাবনাময় বাজার ধরতেই ঝাঁপাচ্ছে কমনফ্লোর ডট কম, হাউজিং ডট কম, মকান ডট কমের মতো সংস্থা। উদ্যোগী হয়েছে টাটা ভ্যালু হোমস, সিদ্ধা গোষ্ঠীর মতো নির্মাণ সংস্থা। এমনকী সুযোগ হাতছাড়া করছে না স্ন্যাপডিলের মতো ই-কমার্স সংস্থাও।
ক্রেতা টানার বিপণন কৌশল হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে উপহারের চমক রাখছে সংস্থাগুলি। যেমন, দিল্লিতে ফ্ল্যাট বুক করায় গাড়ি দিয়েছে এক নির্মাণ সংস্থা। কারও আবার প্রতিশ্রুতি উপহার হিসেবে আই-ফোন, ল্যাপটপ বা নতুন ফ্ল্যাট আসবাব দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার।

পনেরো দিনের অনলাইন বাড়ি মেলা করছে কলকাতারই আবাসন বিপণন সংস্থা এন কে রিয়েলটর্স। সংস্থার মুখপাত্র বিপ্লব কুমারের দাবি, প্রতি বুকিংয়ে অ্যাপল-এর কোনও-না-কোনও গ্যাজেট দিচ্ছেন তাঁরা। বাজার ধরতে নিজেদের সব প্রকল্পকে নেটে সামিল করছে সিদ্ধা গোষ্ঠীও।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মূলত দু’টি বিষয়ের জন্য নেট-বাজারে বাড়ি বিক্রির সাফল্য নিয়ে এত আশাবাদী সংস্থাগুলি। নতুন প্রজন্মের ক্রেতা আর নয়া প্রযুক্তি। সমীক্ষা বলছে, ফ্ল্যাট বা বাড়ির ক্রেতাদের গড় বয়স এখন ২৯-৪২ বছর। গত বছরেও যা ছিল ৩১-৪৫। অর্থাৎ নেট ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে-লাফিয়ে। সেই সঙ্গে, বাড়ি কেনার আগে তা নেটেই দেখে-শুনে নেওয়ার প্রক্রিয়া বাস্তব করতে এসেছে অ্যাপও। যেমন, কমনফ্লোর ডট কমের নতুন অ্যাপেই সম্ভাব্য ক্রেতা ‘মডেল ফ্ল্যাট’ দেখার অভিজ্ঞতা পেতে পারেন। সংস্থা কর্তা সুমিত জৈনের দাবি, ওই প্রযুক্তিতে প্রায় সত্যি হয়ে ওঠে বাড়ি দেখার অনুভূতি।

ফলে সব কিছু মিলিয়ে ক্রমশ বাড়ি-বাজারেরও দখল নিতে হাত বাড়াচ্ছে ইন্টারনেট। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু মেট্রো শহরে সীমাবদ্ধ না-থেকে এই বাজার দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে ছোট ও মাঝারি শহরেও। এমনকী অনলাইনে বাড়ি বিক্রির নিরিখে আগামী দিনে বড় শহরকেও টেক্কা দিতে পারে তারা।

আবার আমার বাড়ি কেনার জন্য এক ক্রেতা হাজির। তিনি এসে বললেন আপনার বাড়ি কোথায়? আমি বললাম, বাড়ি কিনতে গেলে কাগজপত্র দেখতে হয়। তিনি বললেন একবার আপনার গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নেব।। আমি বললাম মনে করুন আমার গ্রামে বাড়ি নেই। তাহলে কি করবেন। লোকটি আমতা আমতা করে বললেন আপনাকে সন্দেহ হচ্ছে। আমি পরে কথা বলব। আমার ছেলে বলল বাবা বাড়ি বিক্রি করা খুব ঝামেলার কাজ গো।আমি বললাম মজারও বটে।

দস্তাবেজ বা দলিল বলতে যে কোন চুক্তির লিখিত ও আইনগ্রাহ্য রূপ বোঝায়। তবে বাংলা ভাষায় সম্পত্তি, বিশেষ করে জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয়, বণ্টন এবং হস্তান্তরের জন্য ‘দলিল’ শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দলিলের পাঁচটি মৌলিক তথ্য হলো: (ক) সম্পত্তির বর্ণনা, (খ) দাতার পরিচয়, (গ) গ্রহিতার পরিচয়, (ঘ) সাক্ষীদের পরিচয় এবং (ঙ) দলিল সম্পাদনের তারিখ। দলিল সম্পাদনের পর সরকারের মনোনীত কর্মকর্তা কর্তৃক নিবন্ধনের বিধান রয়েছে। এতে দলিলের আইনি বৈধতা দৃঢ়তর হয়। দলিল সম্পাদনের জন্য সরকারকে রাজস্ব দিতে হয়।

জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয় এবং হস্তান্তরের জন্য দলিল শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হলেও যে কোনও চুক্তির ক্ষেত্রে দলিল শব্দটি প্রয়োগ করা যায়। যুদ্ধের আত্মসমর্পণ চুক্তি, ক্রয়ের জন্য লিখিত, আদালতের আদেশনামা ইত্যাদিও দলিল পর্যায়ভুক্ত।দলিল ও পর্চা আছে আমার।কিন্তু শহরের বাড়িতে প্ল্যান বাস্তু চাই।

প্লান ও বাস্তু না থাকার ফলে প্রচুর লোক আসা-যাওয়া করছে কিন্তু কেউ কেনার মত দিতে পারছে না। আর 25 লাখ এর বাড়ি তারা দাম বলছে দশ লাখ।তাতে কি পোষায়? তাই বন্ধু বলল যে না দরকার নেই আগে প্ল্যান বাস্তু করে নাও। তারপর প্রয়োজনে বিক্রি করবে।

বন্ধু বললেন,কোন ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট কোন সম্পত্তিতে তার স্বত্ত্বাধিকার নাই মর্মে অথবা স্বত্ত্বাধিকার ত্যাগ করছেন মর্মে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন। এরূপ দলিলকে না দাবী দলিল বলা হয়। বয়নামা দলিল: প্রজাদের ভূমি রাজস্ব বাকী পড়লে উপরস্থ মালিকগণ আদালতে খাজনার নালিশ করে ডিক্রি করতেন। প্রজা উক্ত ডিক্রিকৃত টাকা জমিদারকে প্রদান না করলে উক্ত খাজনার ডিক্রিজারী দিয়ে উক্ত ভূমি নিলাম করাতেন। উক্ত নিলাম উপরস্থ মালিকসহ সর্ব সাধারণের খরিদ করবার অধিকার ছিল। যে ব্যক্তি অধিক টাকায় নিলামের ডাক উঠাতেন তিনি উক্ত নিলাম খরিদ্দার বলে গণ্য হতেন। খাজনার ডিক্রি ছাড়া আরও কয়েক প্রকারের নিলাম হয়ে তাকে যেমন সরকার কর্তৃক বাকী ভূমি রাজস্বের নিমিত্ত মানী মোকদ্দমার দাবীর ওদেওয়ানী মোকদ্দমার খরচের টাকার নিমিত্ত ও রেহানী ঋণের দরুন। যিনি নিলাম খরিদ করতেন তাকে একটি নিদর্শন পত্র বা সার্টিফিকেট দেওয়া হতো, তাকে বয়নামা বলা হয়।

আর একজন ক্রেতা এলেন সপরিবারে। তারা আল রাস্তা পেরিয়ে দরজা অবধি এলেন। তারপর থমকে গিয়ে বললেন, বাবা রে এখানে কি মানুষ থাকে?
আমি বললাম, মানুষই থাকে। ভালো জায়গার বাড়ি তো দশ লাখে পাবেন না। তারা বললেন এর থেকে ভাড়া থাকাই ভালো। রাস্তার ধারে থাকব। তারা আর বাড়িতে প্রবেশ করলেন না। দরজা থেকেই টা টা বাই বাই করে চলে গেলেন। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল এই ভেবে যে আমি মানুষ হতে পারলাম না। তা না হলে এই মাঠে বাড়ি করে থাকতে হয়।

আমার বন্ধুটি সেটেলমেন্ট অফিসার। পাকা লোক। সে আমাকে সুযোগ পেলেই আইনগুলো শোনায়। সে বলে দুম করে বাড়ি কিনলেই হয় না। অনেক কিছু দেখতে হয়।সে বলল,আয়কর আইনের ধারা 54-এর অধীনে, যদি আপনি অন্য সম্পত্তিতে আপনার লাভের বিনিয়োগ করেন তবে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভের উপর কোনও কর দিতে হয় না। যদিও, সেখানে কয়েকটি প্রাকশর্ত আছে। প্রথমত, এই সুবিধা শুধুমাত্র একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তির বা এইচআইএফ (হিন্দু ইউনাইটেড ফ্যামিলি) -র জন্য পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, আপনার লাভ একটি অন্য আবাসিক সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা উচিত, অন্য কোন সম্পদে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। তৃতীয়ত, প্রথম সম্পত্তি বিক্রি করার হয়তো এক বছর আগে অথবা দুই বছরের মধ্যে আপনার দ্বিতীয় সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে। যদি আপনি একটি নতুন বাড়ি নির্মাণ করেন, তবে প্রথম সম্পত্তি বিক্রির তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে তার নির্মাণ সম্পন্ন করতে হবে। অবশেষে, সরকার এখন এই নিষ্কৃতিটিকে একমাত্র আবাসিক সম্পত্তিতে সীমিত করেছে।

বন্ধুর সঙ্গ ছেড়ে আমি বাথরুমে প্রবেশ করলাম। মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে।

আমার স্ত্রী আলো দেখলো পাশের বাড়িতে জমি জায়গা নিয়ে ঝগড়া চলছে দুই চাষীর। সে বলছে, তুই আমার আলে পা দিবি না।
আর অন্য একজন, চাষী তার গরু উঠিয়ে আল ভেঙ্গে দেয়।

আমি জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে থামতে বললাম,বেঁচে থাকলে অনেক জমি হতে পারে। এখন ঝগড়া করার সময় নয়।
তারা আলোর কথা শুনে ঝগড়া থামালো। জমি পরে থাকে।মানুষ চলে যায়।

একজন আলোকে মেসেঞ্জার বক্সে একটা ভিডিও পাঠিয়েছিল। আলোর কথা বলা হয়নি তার সঙ্গে। তাই সে রেগে তাকে ব্লক করে দিল।

সব ঝগড়ার সূত্র সেই ভুল বোঝাবুঝি। সময়ের ঈশারা বোঝেন কজন?

যাইহোক মেসেঞ্জার, কয়েকদিনের জন্য আনইন্সটল করে দিলো আলো। এখন একটাই চিন্তা পৃথিবীর এই কঠিন রোগ। কোভিড নাইনটিন, ভাইরাস আ্যাটাকে সারা বিশ্ব রোগগ্রস্ত। এখন দূরে দূরে থাকার সময়। দূরে থাকলে বাঁচবে জীবন, একত্রে সমাবেশ করলে মরবে।
ভাইরাস মানুষের হাতে হাতে ছড়িয়ে যাচ্ছে শিকলের মত। এই শিকল ভাঙ্গার জন্য লকডাউন।

আজ আমার বন্ধু অনিল এসেছে।এবার শুরু হবে তার বাড়ি বিক্রয় নিয়ে নানারকমের পরামর্শ। আমাকে সামনে দেখতে পেয়ে মেঝেতে বসে আমাকেও টেনে বসালো। সে শুরু করল তার লেকচার,যখন তুমি একটি বাড়ির বিক্রয়ের উপর লাভ করেন , তখন আপনাকে আপনার লাভের উপর কর দিতে হয়। যদি একটি সম্পত্তির ক্রয় এবং বিক্রয় তারিখের মধ্যে তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়ে থাকে , তাহলে, বিক্রয় থেকে আপনার লাভ একটি দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হবে। তিন বছর অতিবাহিত না হলে, আপনার লাভ একটি স্বল্পমেয়াদী মূলধন লাভ হিসাবে গণ্য করা হবে। দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভে 20% হারে কর দেওয়া হয়, আর স্বল্পমেয়াদী মূলধন লাভে কর আপনার মার্জিনাল কর হারে দিতে হয় I

বাড়ি শুধু কিনলেই হয় না। বাস্তুতন্ত্র বুঝতে হয়। ঈশানকোণে বাথরুম করতে নেই। অনিল আজও শুরু করেছে তার জমি সংক্রান্ত কথা। এলেম আছে বটে। শহরের বুকে চার চারখানা বাড়ি। জমিও অনেক কেনা আছে।সে বলে, বাস্তু মেনে যে কোনও নির্মাণ তৈরি করা না হলে তাতে বাস্তুদোষ থাকে বলে মনে করেন বাস্তু বিশেষজ্ঞরা। বাস্তুশাস্ত্র বিশারদরা সেই সব দোষ কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রতিকারের ব্যবস্থা করেন। বাস্তুশাস্ত্র বিশারদদের মতে বাড়িতে বা অফিসে কোনও জিনিস কীভাবে কোথায় রাখা হবে, তার উপর নির্ভর করে শুভ-অশুভ বা ভালো-মন্দ বিষয়। তাই এই বিষয় মাথায় রেখে প্রথমেই সঠিক জমি বাছাই করতে হবে। কারণ জমিতে বাস্তু দোষ থাকলে তার প্রভাব পড়ে নির্মাণের উপর। তাই সঠিক বাস্তু মেনে জমি বাছাই করলে বা কিছু নিয়ম মেনে চললে বাস্তুদোষ কাটানো সম্ভব হয়। তাই বাস্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বাস্তু সব সময় ভালো করে বিচার করে তারপর যে কোনও বাড়ি কিনুন।

বাস্তু মেনে যে কোনও নির্মাণ তৈরি করা না হলে তাতে বাস্তুদোষ থাকে বলে মনে করেন বাস্তু বিশেষজ্ঞরা। বাস্তুশাস্ত্র বিশারদরা সেই সব দোষ কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রতিকারের ব্যবস্থা করেন। বাস্তুশাস্ত্র বিশারদদের মতে বাড়িতে বা অফিসে কোনও জিনিস কীভাবে কোথায় রাখা হবে, তার উপর নির্ভর করে শুভ-অশুভ বা ভালো-মন্দ বিষয়। তাই এই বিষয় মাথায় রেখে প্রথমেই সঠিক জমি বাছাই করতে হবে। কারণ জমিতে বাস্তু দোষ থাকলে তার প্রভাব পড়ে নির্মাণের উপর। তাই সঠিক বাস্তু মেনে জমি বাছাই করলে বা কিছু নিয়ম মেনে চললে বাস্তুদোষ কাটানো সম্ভব হয়। তাই বাস্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বাস্তু সব সময় ভালো করে বিচার করে তারপর যে কোনও নির্মাণ তৈরি করলে তা জীবন শান্তিময় ও সুখকর হয়।

অনিল এসেছে। একজন খরিদদার এনেছে।অনিল তাকে বলছে, কেনার আগে আপনার জমির যে কোনও একদিকে একটি সাধারণ গর্ত করুন৷ এবার এই গর্ত খুঁড়ে তোলা মাটি দিয়ে গর্তটি ভরাট করে ফেলুন৷ গর্তটি ভরাট হয়ে যাওয়ার পর মাটির পরিমাণটি লক্ষ্য করুন৷ যদি দেখেন গর্তটি ভরাট হয়ে যাওয়ার পরেও সামান্য মাটি রয়ে গেছে তাহলে জানবেন জমিটি শুভ৷ যদি একটুও মাটি অবশিষ্ট না থাকে তবে জমিটি মধ্যম শ্রেণির৷ কিন্তু যদি সমস্ত মাটি গর্তে ফেলার পরেও গর্তটি যদি ভরাট না হয় তবে জানবেন জমিটি বসবাসের অযোগ্য৷
আমি বললাম,স্যার আমার বাড়ির প্ল্যানটা করে নিতে হবে।অনিল বললো,হবে কিন্তু ইনিও আমার বন্ধু। বাস্তু দোষ থাকলে বাড়ি নেবে না। আমি বললাম,ওসব কুসংস্কারের কথা ছাড়তো। অনিল বলল,এরজন্যই তোকে বাড়ি বিক্রি করতে হচ্ছে। ওনাকে আর অসুবিধার মধ্যে ফেলব না। তারপর আবার শুরু করলো,শুনুন বাস্তুশাস্ত্রের কথা। আপনি বাস্তু জমিটির কিছু অংশ কোদাল দিয়ে কুপিয়ে তিল বীজ বুনে দিন৷ এরপর প্রতিদিন বিকালে ও জমিতে জল দিন৷ লক্ষ্য রাখুন ওই তিল বীজের অঙ্কুরোদগমের সময়কালটি৷ যদি তিন দিনের মধ্যে ওই তিল বীজ অঙ্কুরিত হয় তবে জমিটি শুভ৷ পাঁচ দিন লাগলে মধ্যম শ্রেণির জমি৷ যদি সাতদিন বা তার বেশি সময় লাগে তাহলে জমিটি গৃহনির্মাণের অযোগ্য৷এইভাবে অনেক ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে বাস্তু সমস্যা নির্ধারণ বা সংশোধন করা যায়৷

ক্রেতা বলল,যে কোন জন্য জমির আকার কি রূপ হওয়া উচিত। অনিল বললো,জমির পরিমাণ যেমনই হোক না কেন তার আকার বা আকৃতিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ স্বল্প পরিমাণ জমি হলেও তার আকার যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে সেই জমি গৃহনির্মাণের পক্ষে উপযুক্ত৷ তাই সেখানে বসবাস শান্তিপূর্ণ হয়৷ অন্যথায় দোষযুক্ত জমিতে বসবাস করলে নানা রকম বিপর্যয় হতে পারে৷ মোটামুটিভাবে আয়তাকার, বর্গাকার, বৃত্তাকার জমি বাড়িঘর নির্মাণের পক্ষে অশুভ৷ তবে একথা ঠিক সর্বগুণ সম্পন্ন জমি পাওয়া অত্যন্ত দুঃসাধ্য ব্যাপার৷ তাই ছোটোখাটো বাস্তুদোষ থাকলেও অভিজ্ঞ বাস্তু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ সেই দোষত্রুটির সংস্কার করে নেওয়াই যায়৷

বাস্তুশাস্ত্রে সিঁড়ি নির্মাণের গাইডলাইন বাড়ির সৌন্দর্য্যের অন্যতম অংশ এই সিঁড়ি৷ বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে সিঁড়ি এমনভাবে নির্মাণ করা উচিত তা যেন ঘড়ির কাঁটার মতো ঘোরে অর্থাত্‍ ক্লক ওয়াইজ’ভাবে ঘুরবে৷ সিঁড়ি এমনভাবে হওয়া উচিত তা যেন পূর্ব থেকে পশ্চিমদিকে ওপরে উঠে যায়৷
বাড়িটা শেষপর্যন্ত বিক্রি হল না। দাম কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে।অনিলকে পাশ কাটিয়ে বললাম,আর বিক্রি করব না। আমি বাস্তু প্ল্যান বের করে দোতলা করব লোন নিয়ে। তারপর নিচের তলা ভাড়া দিলে মাসে ছহাজার পাব। ব্যাঙ্কের কিস্তির টাকাটা হয়ে যাবে। আবার দোতলাটাও হবে। অনিল বলল,বাড়ি বিক্রি করতে গিয়ে তোর রেকারেকশন হয়েছে।আমি বললাম, তার অর্থ কি?
অনিল বলল,পুনরুজ্জীবন হল তোর।
আমি বললাম,দোতলা বাড়ি পেলে ছেলেটা তো থাকতে পারবে। বিক্রি করতে নেই বাড়ি। বাড়ি তো মন্দিরের মত।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।