গদ্যানুশীলনে সুদীপ ঘোষাল (গল্প সিরিজ)

কবি

শরীরটা আছে।সে সম্ভোগে ব্যস্ত।দেহের অণু পরমাণু  অংশ ভিজে।কিন্তু মন যে শুষ্ক।মনের শূণ্য অংশও অধিকারে নেই তার।সে ছুটেছে পদ্মবনে। সেখানে তার রূপ দর্শনে মোহিত তার মন। এদিকে শরীরলোভি সে খবর রাখে না। ভিজে ভিজে ভালোলাগা শেষে বিরক্তির বিশ্রাম।আর মনলোভি নাগর দখল করে নেয় প্রিয়ার মন। শরীরে তার আসক্তি নেই।ক্ষণিকের আনন্দ নয়, অসীম আনন্দের অনুসন্ধানী তার মন।
কিশোরবেলায় একটা রঙীন বাক্স ছিলাে পড়ার ঘরে। তার ভিতরে দুটি রবীন্দ্রনাথ একটা জীবনানন্দ আর কয়েকটা বাল্যকালের খেলনা ছিল। মন খারাপ হলেই পুরী থেকে আনা, নকশা কাটা পেন ও হলুদ কাশীরাম দাস বের করত কবি বাক্স থেকে  ।তখনই প্রভাতী সূর্যের ভালবাসা দখল করত তার মন। তারপর বন্যা এলো, মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পড়ল। জীবনের তোয়াক্কা না করে সে ভেসে যাওয়া বাক্স ধরার  চেষ্টায় বিফল হল। ভেসে চলে গেলে তার স্বপ্ন। বাবা তার কান্না দেখে নতুন বাক্স কিনে দিলেন। তারপর বড় হল কবি। চাকরি পেল।আরও নতুন বাক্স কিনল। কিন্তু হায় সেই প্রভাতী সূর্যের  ভালোবাসা আর পেল না।
পূর্ণিমা পুকুরের জ্যোৎস্না ভিজে চাঁদ হওয়ার স্বপ্ন দেখত দীনু। সে চাঁদ ছুঁতে পারেনি।সমস্ত যোগ্যতার ফানুস সে উড়িয়ে দিয়েছে ঘাসের শিশিরে,বাতসের খেলায়। হেলায় সে হয়েছিল ফাঁকা মাঠের রাজা।
আলপথের মাটির গন্ধে তার যোগ্য সম্মান ঘ্রাণ নিত প্রাণভরে।সমস্ত চাওয়া পাওয়ার বাইরে অনুভূতির জগতে তার আসা, যাওয়া।
তার বন্ধু বলত তোর ধনী হতে ইচ্ছে হয় না?
দীনু  উত্তর দেয় না। সে জানে তার আপন জগতে সে শুধু রাজা নয়, সম্রাট। অবহেলায় যাপন করতে সাধারণ জীবন।সে জানে তার মতো ধনী, কমই আছে।বাতাসের রেণু,আকাশের হৃদয় আর সবুজের হাতছানিতে সে ছুটে চলে সবুজের শেকলে। সেখানে গিয়ে সে কথা বলত আপন মগ্নতায়।
তার নির্জন কথা হত কবিতার পান্ডুলিপি।
Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!