এক মাসের গপ্পে সৌমী গুপ্ত (পর্ব – ৮)

ঘেঁটে গেলেও ঘটনা – ৮

(৮)
বর্ধমানে নেমে সোহাগ চিরাগকে একটা হোয়াটসঅ্যাপ করে ,”ঝামেলায় পরতে না চাইলে বর্ধমান স্টেশনের কাছে চলে আয় ,আমি পাক্কা পনেরো মিনিট ওয়েট করবো ,ঘড়ির কাটার সময় ষোলোতে পা দিলেই রানী সায়রের কাছে কলেজের সামনে তোর পিসির বাড়িতে গিয়ে কুরুক্ষেত্র বাধাবো, ঝামেলা চাস না শান্তি ইটস আপ টু ইউ।”
বারো মিনিটের বেশি দাঁড়াতে হয়নি সোহাগকে ।
“তুই কি পাগল ?ফোনটা সুইচ অফ করলি কেন?”
“ফোনটা সুইচ অফ ই ছিল ,হোয়াটসঅ্যাপ করার জন্য খুলেছিলাম বাবা মা জানে না যে আমি এখানে এসেছি!”
“আর ইউ ক্রেজি! চল বাড়ি চল!”
“না ফিরব না তোর সাথে আমার কথা আছে!”
“ঘরে গিয়ে বলবি। আন্টি আঙ্কেল রাগ করবে কি অবস্থা বলতো!”
“ওসব জানি না তুই আমাকে কোন হোটেলে নিয়ে চল এখন।”
“সোহাগ তোর মাথাটা একেবারে ঠিক নেই!”
“খবরদার ভ্যাবলা তুই আমাকে মোটি ছাড়া অন্য কোন নামে যদি ডেকেছিস?”
চিরাগ দারুন ভয় পেয়ে গেল।
“তুই যাবি না আমি একাই যাবো??”
চিরাগ ভয়ে ভয়ে টোটোতে সোহাগের পাশে বসল সোহাগ অন্যদিকে তাকিয়ে বলল ,”কোন ভালো ভদ্র জায়গায় নিয়ে চল আর শোন তুই কিন্তু আমার বিয়ের আগে টাচ করবি না বলে দিলাম!”
“কি সব বলছিস সোহা….মানে মোটি হোটেলে যাওয়া সম্ভব নয়,চল আমার এক বন্ধুর বাড়ি!”
“সে তুই আমাকে যেখানে খুশি নিয়ে চল তোর সাথে আমি জাহান্নামে যেতেও রাজি!চিরাগ মুখ গোমরা করে ভাবে কি ঝামেলায় পড়া গেল!
চিরাগের বন্ধু অর্নবের বাড়িতে গিয়ে অর্নবের মাকে সবটা বুঝিয়ে বলে । অর্নবের মাপ্রথমটায় দুজনকে তিরস্কার করলেও দুজনের বাড়িতে ফোন করে জানায় পুরো ব্যাপারটা।
ওদিকে সোহাগ শুধু অপেক্ষা করছিল কখন চিরাগ কে হাতের নাগালে পাবে। সমস্ত ঝড় আয়ত্তের মধ্যে চলে এলে সোহাগ নিয়ে যায় চিরাগকে ছাদ চিরাগ কাঁচুমাচু হয়ে গেল,” এসবের মানে কি মোটি?
“ইঃ ওরে আমার ভ‍্যাবলাকান্ত নেকুচন্ডী রে কিছু বোঝে না। ওরে তোকে ছাড়া আমি মরেও শান্তি পাবো নারে এটুকু বুঝতে পারিস নি?”
“তুই যেন কত বুঝেছিস !আমি ছাড়া তোকে অমন করে মাসকাবারি ভদকা কে খাওয়াবে রে ,আর বিড়ি ফোঁকাবে কোন শালা তাছাড়া আমি ছাড়া তোকে কেইবা বিয়ে করবে মুখটা দেখেছিস প্যাঁচার মেজ বোন।”
“তবে রে শুয়োর ,কুকুর শয়তান,চলে যাব দেখ, বিয়ে করে নেব অংশুকে।”
চিরাগ পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে সোহাগকে “দেখি তো কেমন করে পালাস তোকে জড়িয়ে ধরার মতো অত বড় হাত দুটোও কারোর নেই।”
সোহাগ লজ্জায় লাল হয়ে যায় ।
ফোনটা বেজে উঠল সোহাগের।
“হ্যালো মা বলো!”
“বলার কিছু বাকি রেখেছো? বিকেলবেলা ঘর থেকে পালিয়ে গেলে কাউকে না বলে কান্ডজ্ঞানটা কবে হবে শুনি।”
“সরি সরি সরি মা!”
“এমন করে মুখে চুনকালি মাখালে হচ্ছিল না মিষ্টি? চিরাগ কে যদি এতই ভালবাসতে কেন এত নাটক করলে? অংশুর বাড়ির কাছে কি করে মুখ দেখাবো!”
“মুখ দেখানোর দরকার কি মা? মুখ দেখানোর আর তো কোন কারন নেই। আর আমরা নিজেরাই ছাই এত কিছু জানতাম নাকি।এজন্য কিন্তু মেনিমুখো কে আমার হয়ে একটা থ্যাঙ্কস জানিয়ে দিও।”
“ওকে আবার কেন থ্যাঙ্কস জানাবো !এরপর আবার ওকে ফোন করতে বলো তুমি?”
“ও তুমি বুঝবে না , মেনিমুখো না এলে অনেক কিছুই বুঝতাম না আমরা।”
“তোমাদের রকমসকম বুঝিনা ,তোমার বাবা ভীষণ আপসেট দয়াকরে কাল বাড়ি ফিরে এসো চিরাগ কে সঙ্গে নিয়ে!”
সোহাগ ফোন কেটে দেয়। চিরাগ দাঁড়ায় সোহাগের মুখোমুখি।আলিঙ্গন করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ,”চাপ-নিস-না মোটি! কাল ঢিপ করে দুবার আন্টি আঙ্কেলকে প্রণাম করে নেবো সব রাগদেখবি গলে জল।”
“ওসব নিয়ে আমি ভাবছি না আমার একটাই শর্ত আমি কিন্তু উপোস করতে পারবোনা বিয়ের দিন, আমাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব তোর। কিভাবে, কার মাধ্যমে করবি সেটা তোর ব্যাপার, নয়তো কিন্তু আমি অংশু কে………”
“অ‍্যাঁ….”
“অ‍্যাঁ নয় হ‍্যাঁ “।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।