এক মাসের গপ্পে সৌমী গুপ্ত (পর্ব – ১)

ঘেঁটে গেলেও ঘটনা –

সকালবেলার চিনিঘুমের বারোটা বাজিয়ে ভাইব্রেশনে রাখা ফোনটা তিন-চারবার ভোঁভোঁ করে আওয়াজ করতে সোহাগ আধো ঘুমে আধো চোখ খুলে ফোনের স্ক্রিনে চিরাগের নম্বরটা দেখেই খেপে গেলো। ঘুমের গলায় জড়িয়ে জড়িয়ে বলল, “কি মরতে এত সকালে ফোন করেছিস রে শয়তান?”
“সাধে কি ফোন করেছি তোকে? কাল অনন্যার সাথে হেভি খিঁচাইন হয়েছে, তুই একটু ম্যানেজ করে দে না বস ,না হলে সামনে সেমিস্টারের প্র্যাক্টিক্যাল গুলো পুরো ঝুলে যাবে।”
সোহাগ পাত্তা না দিয়ে বলল,” পারব না যা— তোরা দিনরাত ঝগড়া করবি আর আমায় মাঝে টানবি, বিরক্ত লাগে, সাতসকালে এতবার ফোন করে ঘুমের বারোটা না বাজালে তোর চলছিল না।”
“রাগ করছিস কেন প্লিজ প্লিজ তুই একবার ফোন কর ওকে।”
“কেনরে তোর তো অটো, বাসের মতো গার্লফ্রেন্ড, একটা গেলে আরেকটা আসে, অনন্যা যাবে প্রিয়াঙ্কা আসবে !তোর আবার প্র্যাক্টিকাল করার লোকের অভাব!”
সোহাগ বিছানা ছেড়ে জানালার ধারে এসে বসে একটা সিগারেট ধরালো।
“ঠিক আছে মোটি তোকে কিছু করতে হবে না, পরে কিন্তু কোন ঝামেলায় পড়লে আমাকে ডাকিস না ,তোর তো আবার পাড়ার দোকানে সিগারেট কিনতে গেলে আমি ছাড়া চলবে না -তখন ডাকিস আমায়!”
সোহাগের এবার রেগে যায় ,”সকাল থেকে মাথা খারাপ করিস না ,দেখছি কি করা যায়— কাঁচা ঘুমটা চটকে আবার বড় বড় বাতেলা!”
“ওরে কুম্ভকর্ণের ছোট বোনরে, এখন বেলা নটা এখন তোর কাঁচা ঘুম ?উঠে যা বস, আর উঠেই যে ফুঁকতে শুরু করেছিস সেটাও টের পাচ্ছি , তুই ছেলে না হয়ে মেয়ে হলি কি করে সেটাই চিন্তার।”
“শাট ইউর মাউথ ভ্যাবলা ,মেয়ে বলে কি সিগারেট খেতে নেই!”
“তা নির্ঘাত খেতে পারিস ,কিন্তু কিনতে গিয়ে আমার কথা কেন মনে পড়ে কে জানে!”
“তুই ফোন রাখ ,দেখছি কি করা যায় আর চোদ্দবার ফোন করে জ্বালাবি না বলে দিলাম।”
সোহাগ ফোনটা কেটে ঘরের ফ্যানের স্পিডটা বাড়িয়ে দেয় একটু। ঘরময় সিগারেটের গন্ধে ম ম করছে। এখনই যদি বাবা আসে বা মা তাহলেই হয়ে গেল। সব জারিজুরি শেষ। চিরাগ সঙ্গে থাকলে পুরোটা ওর ঘাড়ে চালানো যায় বলে ঘরে একা থাকলে সোহাগ খুব একটা স্মোক করার রিস্ক নেয় না। এই এক হচ্ছে চিরাগ এত বড় দামরা ছেলে হয়েছে পরের বছর ক্যাম্পাসে চাকরি জয়েন করবে তবু সিরিয়াসনেস বলে কোনো ব্যাপার নেই। ডজনখানেক প্রেম করে চলেছে ,কোনটাই আর ফেভিকলের মত আটকে যাচ্ছে না তার জীবনে। ঝামেলা করবে ও আর সমস্যা মেটাবে সোহাগ, এসব ভাবতে ভাবতে’ ধুত্তোরি ‘বলে ইতস্তত করে ফোনটা করে ফেলল অনন‍্যাকে। ওদিকে আবার আরেক সমস্যা ,ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা দিলেই প্রকৃতির ডাক অমোঘ আকর্ষণ চুম্বকের মত টানে— সোহাগ বেডরুমের দরজাটা খুলে দিয়ে ফোনটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।