T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় সপ্তর্ষি গাঙ্গুলী
by
·
Published
· Updated
হৃদমাঝারে তুমি – বিশ্বকবি আমাদের রবি
বৈশাখ পঁচিশের পুণ্যতিথিতে বাঙলামায়ের ক্রোড় সৃষ্টির নবালোকে আলোকিত করে আবির্ভূত হয়েছিল সকলের নয়নের মণি ললিত যে রবি, কেই বা ভেবেছিলো সেদিন! বিশ্বের দরবারে একদিন তাঁরই জীবনদর্শন আর লেখনশৈলী তুলবে ধরে বঙ্গ সংস্কৃতির এক চিরন্তন ছবি। রত্নগর্ভা বঙ্গজননীর গৌরবান্বিত কৃতী সন্তান তুমি, সুজলা সুফলা বাঙলার বুকে পড়েছিল তোমার প্ৰথম নিঃশ্বাস; এ যেন বাঙালির সাত জনমের পুণ্য। সুবিস্তীর্ণ সৃষ্টির পরিমন্ডল তোমার; নিতান্তই ক্ষুদ্র এ ভূ-ব্ৰহ্মান্ড, তোমার সৃজনমাধুরীর আতর ছড়িয়ে যেভাবে সদা মানুষের সুখদুঃখের সঙ্গী রয়েছ; ধন্য এ জীবন ধন্য। বঙ্গজননীর সুনীল আকাশ; পরিমল বাতাস জুড়ে আজও রয়ে গেছে রেশ তোমার ফেলে যাওয়া প্ৰতিটা নিঃশ্বাসের স্নিগ্ধতার। ইহলোক ছেড়ে গেছো চলে; কেটে গেছে দীর্ঘকাল, পিছে ফেলে যাওয়া তোমার সকল অমর সৃজনী বাঙালির আননে মননে রেখে দিয়েছে ছাপ মন্ত্ৰমুগ্ধতার। ইংরেজ পরাধীনতার খাঁড়ার নিঠুর পরাক্ৰমী কোপে ত্ৰস্ত-বিপর্যস্ত জাতির মুখে মুখে ফেরা তোমার গীতিকবিতা হয়ে উঠেছিল তখন যেন নীরব প্ৰতিবাদের ভাষা। স্বাধীনতার অতিক্ৰান্ত পঁচাত্তরটা বৎসর; তবু মেরুদন্ড ভগ্নপ্রায় বঙ্গসন্তানরা প্ৰয়োজনে তোমারই দেখানো পথে স্বৈরাচারের বিরূদ্ধে উঠবে গর্জে; বঙ্গজননীর কেবল এটুক আশা। সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালির ঘরে ঘরে তুমি পরমপূজ্য দেবতুল্য, মিলনসুখে; বিরহবেদনায় আমাদের বক্ষমাঝে তোলে অনুভূতির লহরী তোমার সাধের সাধনা ‘গীতাঞ্জলি’। তোমার প্ৰেমিকহৃদয় বোঝেনি তো কেউ; বুঝেছিল শুধু অলি আর কলি, কুৎসার গলি ধরে চলা জাতের নামে বজ্জাত কিছু নৈরাজ্যবাদী তাই প্ৰতিনিয়ত করে চলে তোমায় কলঙ্কের বলি। সকলের প্ৰিয় বিশ্বকবি; আমাদের রবি আপন সৃজনীর ইন্দ্রজাল পিছে ছেড়ে শ্ৰাবণ বাইশের বেদনাবিধুর দিনের শেষে ঘুমের দেশের অস্তাচলে গিয়েছিল ফিরে। তবু মানে না অবুঝ মন সেই মহাপ্ৰস্থান; দানা বেঁধে চলে আপামর বাঙালির মনের ক্ষীণ আশা, আবার হয়তো আসবে ফিরে তাদের আদরের ছোট্ট রবি কোনো একদিন কায়াকল্প ধারণ করে এই বাঙলা মায়েরই হাত ধরে।