সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব – ৩২)

সীমানা ছাড়িয়ে 

তাই সে অন্ধকার হওয়ার জন্য বসে প্রতীক্ষা করতে লাগল। আর চিন্তা করতে লাগল, স্বপ্নে ভালোবাসার কথা, কত ভালোবাসতো তাকে।

সে আদরে সোহাগে ভরে তুলেছিল অন্ততর। অল্প সময়ে চলে যাবে বলে হয়তো এত তাড়া ছিল। ভাল লোকের স্বর্গীেও প্রয়োজন হয়।

তাই ঈশ্বর বোধহয় ভালো লোককে বেশিদিন পৃথিবীতে রাখতে চান না কিন্তু কি দায়িত্বজ্ঞানহীন এর মত চলে গেল সে, তনু বিড়বিড় করে পাগলের মত।

এসব চিন্তা করতে করতে তনু ঘুমিয়ে পড়েছিল ক্ষুধায় ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে।

হঠাৎ যখন ঘুম ভাঙলো দেখল নুরআলি সামনে দাঁড়িয়ে। চোখে অশ্রু এসেছিল।
নুর বাজার করতে এসে দেখে তনুকে।

আর গঙ্গার ধারে ওর এক আত্মীয় বাড়িতে দেখা করে করে একটু বেড়াতে এসছিল এদিকে। তাই দেখা হল,
এই মুহূর্তে।।

বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে লাগল নুর কিন্তু কিছুতেই রাজি নয় তনু। সে লাফ দিতে চেষ্টা করছে গঙ্গায়। অবশেষে বাধ্য হয়ে থাপ্পড় দিল তনুর গালে, নুর।

তনু নিজে মা হতে চলেছে,এই খবর নুরকে জানাল।

নুর বলল তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।

তবু বলল আমি যে মা হতে চলেছি।

তখনই আমার এক বন্ধু রাজি হবে আশা করি।
সমস্ত সংবাদ জানিয়ে তনুর বাবাকে একটা ফোন করল।
তনু বলল, আমি কাউকে ঠকাতে পারব না।
নুর বলল,তাহলে আমি স্বইচ্ছায় ঠকতে রাজী।
চল আজ আমরা বহরমপুরে যাব। ঘরভাড়া নেব। সংসার করব চুটিয়ে।
আজ থেকে তুমি আমার স্ত্রী হলে। তনু বলল, এটা কি করে সম্ভব। তুমি ভাল ছেলে। আমার কলঙ্ক তুমি বইবে কেন?
নুর বলল, এ কলঙ্ক কালো নয়। আমি তোমার মধ্যে আলোর বিজুলি দেখেছি। তুমি মা হও স্বপনের স্বপ্ন পূরণ কর।
তনু ভাব আকাশে দেখল, নুর আলি আর বংশীধারি একসাথে পাশাপাশি তার সাথে ছাতা ধরে চলেছে কঠিন জীবনের চড়াই উৎরাই পথে…

আমাদের বিয়ের পরে তারাপীঠে প্রণাম করে এলাম দুজনে। আমার স্ত্রী আমাকে বললেন, মায়ের কাছে ঘোরা তো বারোমাসের ব্যাপার। চল, এবার দূরে কোথাও হনিমুনে যাই।
আমি বললাম, ঠিক আছে সামনের মাসে পূর্ণিমাতে হনিমুন হবে আমাদের। স্ত্রী খুব খুশি। নতুন বৌয়ের আদর সেই সুবাদে পেলাম খুব। আমি খুঁজে খুঁজে সবকিছু ঠিক করে রেখেছি। প্রেজেন্টেশন কি ভাবে করব তার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছি। আদরে সমাদরে চলে এল বহু প্রতিক্ষিত পূর্ণিমারাত।
রাতে বৌ বলল,তুমি যে বললে পূর্ণিমাতে আমাকে হনিমুনে নিয়ে যাবে। সারাদিন চলে গেল কই এখনও তার প্রস্তুতি দেখছি না।

আমি বললাম, রাত তো বাকি। তুমি সেজে নাও। বৌ খুশি হয়ে সেজে নিল। তারপর আমি ব্যাগ নিয়ে ওর হাত ধরে বললাম, চল তো একবার ছাদ থেকে ঘুরে আসি।
– কেন গো, ছাদে কি হবে?
– চলোই না, গিয়ে দেখবে।
আমার জেতার জেদে বৌকে নিয়ে ছাদে উঠলাম। বৌ বলল, বলো কি বলবে।
আমি ভাল করে শয্যা পাতলাম। তারপর দুজনে বসলাম তার উপর। বৌ বলল,বল তাড়াতাড়ি বল। কি যে কর, দেরী হয়ে যাবে তো।
আমি বললাম, দেখ চাঁদের আলোর বন্যায় কেমন জগত মায়াবী হয়ে উঠেছে। তোমাকেও চাঁদের মত লাগছে। তুমিও আমার চাঁদ।
তারপর ব্যাগ থেকে ডাবরের একটা মধু মানে হানির শিশি বের করে বৌয়ের ঠোঁটে দিলাম। বললাম, এই হল হানি আর অই আকাশের মুন। তাহলে হানিমুন হল তো?
বৌ ও কম যায় না। বলল,আমি জানতাম তুমি যাবে না কোথাও। কেবল দৌড়টা দেখলাম। আমি বললাম, বাড়ির কাছে শিশিরবিন্দু আমরা ঠিকমত দেখি না। একটু তাকিয়ে দেখ বাইরের জগতের থেকে আপন জগতের সৌন্দর্য বেশি।
বৌ হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ল আমাকে জড়িয়ে।
আমাদের জ্যোৎস্না রাতের ঘরে রোজ দুজনে দুজনের দেহে আলো মাখাই হানিমুনের। মন জুড়ে ক্যাপসিক্যামের আদর।আলুপোস্ত আর মুগের ডালে রসনা তৃপ্ত।ঝাল লাগলে জলের স্নেহ মাখি…
ওপাড়ে যে কুটীর দেখা যায় গোলাপ ঘেরা।তার পাশ দিয়ে বয়ে চলে ছোট নদী।শ্রমিকের ঘাম ধুয়ে দেয় উদার কুলুকুলু স্রোত। ওটাই আমাদের শীতল আশ্রয়ের আদর
সবুজ মনে মাঠে কাজ শেষে ফেরে যখন,ঈশানীর হাওয়ায় দোলে প্রতিক্ষারত চাঁদমুখ, খুশির হাওয়ায় জেগে ওঠে রাঙা সূর্যের রোদ…চন্দ্রাবলীর পরিশ্রমের ঘাম চেটেপুটে খায়
খিদের পাতে। একেবারে হানিমুন হয় নি তাও না।

পরের দিন রোদের ভালবাসার আদর গায়ে মেখে সস্ত্রিক উইকেন্ডসে আমরা এসেছি এখানে ভালোবাসার টানে। বহুবছরের ঋণ মনে হয় জমা হয়ে আছে এই খোলা মাঠের মায়ায়।স্ত্রী বলল, তুমি হানিমুনে এসে কবি হয়ে গেলে। স্ত্রীর নাম সোমা, সে বলল,এটা আমার দূরে যাওয়া না হলেও আফটার অল হানিমুনে আসতে পেরে ভালো লাগছে খুব।
সোমা আমাকে বলল,সিঙ্গি হল বাংলার প্রাচীন গ্রাম। এই গ্রামেরই নদী পুকুর খাল বিল জলাশয় সব আছে। ফসল বিলাসী হওয়ার গন্ধ আছে সিঙ্গীর মাটির উর্বরতায় ফুলে ফলে ফসলের সুন্দর গ্রাম।
বাংলার সব পাখিরা কমবেশি সিঙ্গীর আকাশে বাতাসে ঘুরপাক খায়। তিনি বিখ্যাত করেছেন ইতিহাসে স্থান করে দিয়েছেন।কবি কাশীরাম দাস সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন মহাভারতের কাহিনী। এই মহাপুরুষের জন্মভিটার সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আমরা দিনে তাঁর ভিটাতে দাঁড়িয়ে তাঁকে শ্রদ্ধাসংগীত শোনাতে পারি। তারপর অনেকটা হেঁটে গিয়ে দাসপাড়া পেরিয়ে গিয়ে বটবৃক্ষের তলায় দাঁড়ালাম উদাস হয়ে। এই স্থানের মাটি কপালে বুলিয়ে নিলাম একবার। সবাইকে ক্ষেত্রপালের মন্দির নিয়ে গেল। ক্ষেত্রপাল বটবৃক্ষের নিচে অবস্থিত। তারপরে রাস্তা দিয়ে গিয়ে সোজা শিব মন্দির।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।