সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব – ২৭)

সীমানা ছাড়িয়ে

উনি বাড়িতে এলে করে খুব ভালাে লাগে। সাধু মানুষের সঙ্গ। স্কুল ছুটি হওয়ার পর সময় কাটে সাহিত্যসভা বা কোন ধর্মীয় সভায়। উপস্থিত থাকতে পারলে অংশুমানের মন খুব ভালো থাকে। অর্থের প্রয়ােজন থাকলেও আমাদের মনে রাখা উচিত এটাই মূল নয়। তবু অর্থই এখন সমাজের শাসনকর্তা। যেদিন অর্থের চেয়ে মানুষের গুণের সমাদর হবে, তখন মানুুষ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ হবে।সৈকতের উপর যত্ন এবার হওয়া প্রয়োজন। বারো পেরিয়ে তের ওসবের প্রয়ােজন নেই। পৈতেটা দিয়ে দেওয়াই ভালাে। বড়িতে জায়গা। আবার খরচও বেশি। তাই ওরা সামনের খাজুরডিহি প্রেমের ও বর আশ্রমে পৈতে-টা দেওয়া মনস্থির করল। উপনয়নকে চলতিথেয় পৈতে নেওয়া’ বলে। ঠিক হল ১৫ই অগ্রহায়ণ হবে। অনুষ্ঠানের আগের দিন সমস্ত বাজার করে অংশুমান আশ্রম পৌছে দল। পরের দিন সকালে আশ্রমে চলে গেল সপরিবারে। আয়োজন আসতে শুরু করেছে। অংশুমানের মা সীতা দেবী, বডদ দিলীপবাব চলে এসেছে। দেবীর বাবা সমস্ত ব্যবস্থা ঠিকমতাে হয়েছে বিশ্বে গেল। উপনয়নের সাজ সৈকতকে দর শেখা একটা বড় কাজ হয়ে গেল। এবার অংশুনানের মায়ের চোখ অপারেশ করতে হবে। দেবী মাকে নিয়ে আনতে বলল। মা নীতাদেবী উপনয়নের দশদিন পরকাটোয়া এলেন। তারপর সকালবেলা অংশুমান ও বাবা কতদিন গিয়ে চোখ অপরেশন করিয়ে মা-কে নিয়ে এল।
এমন হল তার যার বিজ্ঞান পরিষদ, সাহিত্যের স্থানে মাসে সাহিত্য বাবাও এসেছেন। বাড়িতে এসে তিন ঘণ্টা আহ্নিক করার পর ভাত খেলেন। আজ রবিবার, তাই সৈকত আজ বাবার সাথে বিকেলবেলা স্টেডিয়ামের মাঠে লে দেখতে গেল। বাড়িতে ফিরে দেখে অসংখ্য লােকের ভিড়।
একদিন ভিড় দেখে, অংশুমানের বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠল। কাছে এসে দেখল কি উঠোনে একটা শাঁখামুটি সাপ ঢুকেছে। সাপকে কি করে। তাই লােকজন চেষ্টা করছে। সাপটা বেশ বড়। শাঁখামুটি সাগ থাক আশেপাশে অন্যান্য বিষধর সাপ থাকে না। কারণ, রাজসাপ সব সপে গিলে খায়। তাই অন্যান্য সাপগুলাে ভয়ে পালায়। রাতে
অংশুমান খবর পেল রিলিফ অনেকদিন পরে গ্রামের বা এসেছে সপরিবারে। স্ত্রী চন্দ্রাণী ওই গ্রামেরই মেয়ে। তাই । চন্দ্রাণীরও খুব আনন্দ হয়। বাবা-কাকা-মা-ভাই সবাইকে দেখে মনে শৰ পায়। রুদ্কা আর ইন্দ্র মামার বাড়িত এসে খুব আনন্দ করে। আবার যখন খুব ভালােবাসে। খুশি নিজেদের বাড়িতে চলে আসে। ঠাকুমাকে ওরা খুব ভাল ঠাকুমাও অনেকদিন পরে ওদেরকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে রিলিফ বরাবরই ভ্রমণপিপাসু লােক। কোথাও গেলে সে স্থির হয়ে থাকার লােক নয়। দু-দিন পরেই বৌদি রুণাকে বলল, “চলাে সবাই ৪ একসঙ্গে আমরা অট্টহাস ঘুরে আসি। আর অট্টহাসের কাছেই শ্রীরাম বড় পিসির বাড়ি, সেখানেও দেখা করা যাবে।” | পুরুলে গ্রামেই ভুলু বাঁড়ুজ্যের একটা সুমাে গাড়ি আছে। সেই গাড়ি ভাড়া করে ওরা সবাই অট্টহাস যাবার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ল। এক ঘণ্টার মধ্যেই ওরা পৌছে গেল। পঞ্চমুণ্ডির আসন, মন্দির, গাছপালা সব ঘুরে ঘুরে ওরা দেখল। রিলিফের ছবি তােলা চিরকালের অভ্যাস। ও ছবি তুলল সবার। তারপর দুপুরে আশ্রমেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হল। ফিরে আসার পথে শ্রীরামপুরে বন্য পিসির সঙ্গে দেখা করে ওরা সন্ধ্যাবেলা পুরুলে ফিরে এল।। রিলিফ পুরুলে এলেই এরকম ব্যবস্থা করে থাকে। হৈ-হুল্লোড় লােকজন ও খুব পছন্দ করে। রিলিফ মুখে বলে, আমি নাস্তিক। কিন্তু জ্ঞানী যারা তারা একটু কথা বলেই জানতে পারে রিলিফের ভিতর গভীর জ্ঞানের পরিচয়। ছােট থেকেই বাস্তবের সঙ্গে লড়াই করে রিলিফ বড় হয়েছে। প্রচুর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেশে। ফলে বাস্তব জ্ঞান অনেক বেশি। এই বাস্তব জ্ঞানকে পাথেয় করে রিলিফ লিলুয়ায় বাড়ি করেছে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দু-একবার মিতালি সংঘের সম্পাদকও হয়েছে। ও দোখন দিয়েছে বাপকা বেটা, সিপাহি কা ঘোড়া, কুছ নেহি তো থােরা থােরা। অস্বীকার করার কোনাে জায়গা নেই। রিলিফের বন্ধু হারু এসেছে সঙ্গে, হার বলল, “আমি আজকে লিলুয়া যাচ্ছি। তােরা দু-দিন পরে চলে আয়।”লিলিফ আজকে মা-কে ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে বেলুনগ্রামে ছােট পিসির বাড়িতে গেল। পিসির বাড়ি বলছি। কিন্তু ছােট পিসি আর বেঁচে নেই মনে করতে বলল রিলিফ। মা রিলিফের কথা শুনে কাদতে শুরু করল। রিলিফ পালটে বলল, মা দেখো আমরা বেলুন চলে এসেছি।” বেলুনে সোশায় ও তার ছেলেদের সঙ্গে দেখা করে মা শান্তি পেল। মা পিসেমশায়কে লন, “মাঝে মাঝে পুরুলে যেও ঠাকুরজামাই।” পিসেমশায় রাশভারী লোক। মাকে খুব শ্রদ্ধা করেন। উনি বললেন, “নিশ্চয়ই যাবো।”রিলিফ বেলুনে থেকে মায়ের সঙ্গে পা-ভ্যানে ফিরে আসছে। মা বললেন, ছােট পিসি মারা যাওয়ার পর থেকে পিসেমশায়ের শরীরটা ভেঙে পাড়েছে।” রিলিফ বলল, “এই তাে ক-দিনের নাটক মা। অভিনয় শেষ হলে প্রত্যেককেই ফিরে যেতে হবে যথাস্থানে। ওর জন্য বেশি চিন্তা করে লাভ নেই।মা চোখের জল ফেলেন। আর ছােটকাকা, পিসি, চণ্ডীদা, বাঁটুলদা সবার কথা মনে করেন। মা বলেন, “যারা মরে যায় তারা তাে ভালােই যায়। কিন্তু যারা বেঁচে থাকে তাদের স্মৃতি বুকে করে, তাদের হয় জীবন্ত অবস্থায় মরণ। এই তাের বাবাকেই দ্যাখ, কেমন ড্যাং ড্যাং করে চলে গেলেন আর আমি বেঁচে থেকে তােদের গলগ্রহ হয়ে রইলাম।” রিলিকের চোখে জল এসে গিয়েছিল। সহজে রিলিফ কাঁদে না, তবু মায়ের কথা শুনে অশ্রু সম্বরণ করতে করতে পারেনি। মাকে আড়াল করে চোখ মুছে নিল। | রিলিফ ভাবছে, সংসারে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, তার পিছনে মানুষের হাত থাকে না। অবস্থার বিপাকে পড়ে রিলিফ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিজের বাবা-মার কাছে থেকে দিতে পারেনি। সবাই দই-এর ফোঁটা দিয়ে আশীর্বাদ দিয়ে ছেলেকে পরীক্ষায় পাঠায়। কাজের জন্য অনেক সময় রিলিফকে লরির তলায় শুয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। এখন ছেলেমেয়ে সবাই আছে। স্ত্রী আছেন। কিন্তু মনের এই গােপন কথা রিলিফ অন্যদের মতাে ফলাও করে বলতে পারে না। এখনও জগতে অনেক ছেলে দুঃখকে সহজমনে মেনে দেয়া জগতে আর কিছু না পারি মানুষের মতা মানুষ যেন হতে পারি’—মনে ন এই প্রার্থনা করে রিলিফ। আদির, দোকানে এসে অংশুমান দেখা পায় বিখ্যাত সব সাংবাদিক, শ্রী দীপ্তিকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌলাল পত্রিকার সম্পাদক ও গবেষক ড স্বপন ঠাকুর, কবি রাজকুমার রায়চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে অংশুমান ভাববিহ্বল হয়ে পড়ে। আজ কবি ও গবেষক শ্রী তারকেশর চট্টরাজ মহাশয় বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছেন প্রসাদ খাওয়ার জন্য। তিনি অংশুমানকে করেন। তারকেশরবাবু ক্লেহের চোখে ছােটদের লেখেন ও ভালো তিনি বলেন, “সকলকে নিয়ে একসাথে চলার যে সুখ তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

কবি অনিলবাবু বলেন, আমার সম্বন্ধে কোনো প্রশংসার কথা বলবেন না , “আমি ওসব পছন্দ করি না।” অমায়িক লােক। তিনি বলেন, আমার নামের আগে যেন কবি লিখ না। কাটোয়া তথা পশ্চিমবঙ্গের এক বিখ্যাত সাহিত্যিক কবি তারকেশ্বর চট্টরাজ মহাশয়। অংশুমান বাড়িতে অবসর সময় পেলেই লেখালেখি করে আর যখন ডাক পায় তখন সাহিত্য আসা গিয়ে বসে। কিছু ভালাে কবিতা, ভালাে গান বা ভালাে কথা শুনতে যাওয়াই তার লক্ষ্য। সে জানে সে তারই মতাে। বলে, আমার ক্ষমতা যতটুকু, ততটুকই আমার পক্ষে সম্ভব। এর বেশি আমি কোথা থেকে পাই। আর মনে করে আদিত্যর কথা “কিছু নাই পারেন অংশুদা, অন্তত একজন ভালাে মানুষ তাে হতে পারেন।
রুদ্রজ ব্রাহ্মণ সম্মেলন অনুষ্ঠানে অংশুমান সৈকতকে নিয়ে গেছে। প্রণব আর আদিত্য নিমন্ত্রণ করেছে। বড় স্টেজে অনুষ্ঠান হচ্ছে। অনুষ্ঠানে এসেছেন মধা শ্রী স্বপন দেবনাথ, আসাম ও পুরী থেকে দু-জন সাধুবাবা, পৌরপ্রধান অমর রাম, বিধায়ক শ্রী রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, গবেষক স্বপন ঠাকুর, কবি তারকেশ্বর চট্টরাজ প্রমুখ বিশিষ্টজন ছাড়াও আরও অনেকে। সবাইকে মালা-চন্দন দিয়ে বরণ করা হল। উদ্বোধনী সংগীত হল। ডঃ স্বপন ঠাকুর গবেষণধর্মী একটি বক্তব্য রাখলেন। সমবেত সুধীজনের হাততালিতে ভরে উঠল সভাপ্রাঙ্গণ। এবার একটি সংগীত গাইছে একজন কিশোরের। ইতিমধ্যে রােমাঞ্চিত হল। এতবড় একজন পণ্ডিত মানুষ আমার পাশে-বলল অংওমান দেখি “আমার পাশে ত্রিপলে মাটির মানুষ ডঃ স্বপন ঠাকুর। আমার দেই আদিত্যকে। আদিত্য বলল, “অবাক হচ্ছেন কেন? পৃথিবীতে যারা বড় তার এইরকমই হন। এটাই স্বাভাবিক। আমি মঞ্চে উপবিষ্ট মানেই আমি সব। এসব নিচু মানসিকতার লক্ষণ। আদিত্য আবার আলাদা। এই ধারণা শুনিলে প্রাণপাগল করা সেই গান- যারা সুজন নাইয়া, উজান বাইয়া বােকাই করে মাল স্বদেশে ফিরে গেছেন তারা, থাকিতে সকাল, থাকিতে সকাল রে, থাকিতে সকাল। এমনি কত গান পাগল আদিত্য, অংশুমানের পাড়ার ভাই। বার্তাসূচী সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক শ্ৰী দেবাশীষ রায়ের সঙ্গে আশুমানের এখানেই পরিচয়। আদিত্য অংশুমানকে বলল, “বার্তাসূচীর সম্পাদক মহাশয় কে লেখা দেবেন। আপনার লেখা ছাপা হবে।” সম্পাদককে বলে দেখে অংশুমান। শ্রী দেবাশীষ রায় সমস্ত লেখককেই সম্মান দেন। তার পত্রিকা এখন বাজারে বেশ নাম করেছে। পত্রিকাটিতে সম্পাদকের ভাবনার ছাপ স্পষ্ট। আত্যি এখন সরস্বতী পূজার প্রস্তুতি নিয়ে খুব ব্যস্ত। প্রথ্যাত জি, খ্যাত কবি অসীম সরকারকে নিয়ে আসছে আদিত্য। প্রায় দশহাজার লোক জমায়েত হয় এই কবির গান শােনার জন্য। যুবকদের সঙ্গে থেকে আদিত্য এইসব অনুষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। আদিত্য অংশুমান বলল, এবার সরস্বতী পুজোর সময় কবি অসীম সরকারকে দেখতে আসবেন, দেখবেন ভালো লাগবে।এবার অনেকদিন পর কাটোয়ায় অংশুমানের বাড়িতে এল। সঙ্গে পরেশ তার মাসীর ছেলে। অংশুমান ও পরেশ ছােটো থেকেই বন্ধুর মতাে। ওরা একসঙ্গেই থাকত কোনাে বিয়ে বা অনুষ্ঠান বাড়িতে। অংশুমানের পিসির ছেলে কালীচরণ ও বড়পিসির ছেলে অপু। ওরা সবাই সমবয়সি। যখন কোনাে বিয়েবাড়িতে ওরা একসাথে থাকে তখন বিয়েবাড়িও যেন আলাদা একটা মাত্রা পেয়ে যায়।। বাৰু পরেশকে সঙ্গে এনেছে কারণ পরেশের ছােট দিদির ছেলের জন্য এক পার্থ প্রয়ােজন। বিয়ে দিতে হবে। ছােট দিদির ছেলে রমেশ। রমেশ অরে। কিন্তু পছন্দ মতো মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না—বলল পরেশ। পরেশকে বলল, “চলাে অংশুমানের বাড়ি ঘুরে একবার ছােট মামীর গিয়ে বলে দেখি।” পরেশ বলল, “হ্যা, যা করেই হােক এক বছরের নয় বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। পরেশ সাঁইথিয়া হোমিওপ্যাথি দোকানের মালিক। খুব সৎ, সত্যবান ও পরিশ্রমী। ফুটবল খেলতাে ভালো। এখন বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। পরেশ বলে, কত, জানিস অংশুমান জীবনে লােভে আদর্শ ভ্রষ্ট হয় নি । আমি আমার আদর্শ নিয়ে সঠিক এ জীবনে পরেশ কারাের সাথে খারাপ ব্যবহার কোনোদিন করেনি। সবাই তাকে সৎ, সাহসী ছেলে বলেই জানে। ওদের এ ডাকাতের উপদ্রব। রাত্রি হলেই সবাই ভয়ে ভয়ে কাটাতে। এই হয়-এরকম ভাব। পরেশ ও তার বন্ধুরা নিয়ম করে লাঠিসেসাঁটা নিয়ে রাত পাহারা দিয়ে চিৎকার করে সমস্যার শুরু করল। ওরা হাঁক দিত, ‘ও-ও-ও হ্যাৎ’-চিৎকার করে । কিছুদিনের মধ্যেই ডাকাতদের অত্যাচার কমে গেল। সবাই । ঘুমুতে পারল। অংশুমান মাসির বাড়ি গেলেই পরেশের সঙ্গে ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে যেত। ওখানে বালির চরে ফুটবল খেলা হত। অংশুমান বলত, পরেশ আ তােদের এখানেই থেকে যাবাে। পরেশ বলত, “নিশ্চয়ই থাকবি।” সেসব ছােটবেলাকার কথা মনে পড়ে আর ভালাে লাগে—অংশুমান বলল দেবীকে। সব ছােটবেলার কথা অংশুমান তার ছেলে সৈকতকে বলে। সৈকতের এসব শুনে শুনে মুখস্থ হয়ে গেছে। সৈকত আজ মন দিয়ে বাংলা পড়ছিল। বাংলা বইয়ে ভালাে ভালাে লেখকের গল্প-কবিতা আছে। লালন ফকিরের একটা কবিতা আছে, ওটাই সৈকত পড়ছে, “বাড়ির কাছে আরশিনগর, ও এক পড়শি বসত করে।” অংশুমান সৈকতকে থামিয়ে বলল, এর অর্থটা জেনে নিস। শেষে অংশুমান নিজেই বলল, আরশি হল আত্মদর্শনের এক মাধ্যম অর্থাৎ যা নিজেকে দেখা যায়। তাই আরশি’ হল মানুষের মন। আর ‘পড়শি বলট বােঝানাে হয়েছে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে বাস করা আর এক মানুষ বা ঈশ্বর বা মনের মানুষ। যাকে অন্য গানে লালন অধর মানুষ’, ‘সহজ মানুষ। অলখ সাঁই ইত্যাদি বলেছেন। সৈকতের খুব ভালাে লাগে বাবার কথা। অংশুমানের ক্লাসমেট’ সুলেখক ডা রবীন্দ্ররনাথ মণ্ডল খুব ভালোবাসে তাকে। তার কাছে অনেক প্রয়োজনে অংশুমান উপকার পেয়েছে।কিছু লোক যদি এইরকম হৃদয়বান হতেন, তাহলে মানুষের উপকার হত। সুলেখিকা সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অংশুমান লেখা পড়ে অনেক অনা তথ্য জানতে পেরেছে। বিবেকানন্দবাবু ও আরও লােকজনের সঙ্গে দেখা হয় । টিফিনে বাড়িতেই থাকে। মানুষ কেন খাওয়া-খাওয়া করে। আর মাসে যতটুকু পারে সাহায্য করে। বড়দার হাতে দেয়, মায়ের ওষুধ দেয়। আজ কবি বলছেন সভায় “গুরুজনদের প্রণাম। সবাইকে যথাযােগ্য সম্মান জানিয়ে আমি দু-চারটে কথা বলব। ধর্ম কথার অর্থ, । ধারণ করে থাকে। সমাজের শান্তি, সুস্থ মন ও কর্ম হচ্ছে ধর্মের ফল। কথাটি সন্ধিবিচ্ছেদ করলে অন্যের কথা আসে। কিন্তু সেই নিয়ম। সুস্থ নিয়ম পালন পুর্বক আমরা যদি প্রত্যেক কর্ম করি, তাহলে ধরে সেটা হল সনাতন ধন অনুশাসন সার্থক হয়। সনাতন ধর্ম। ধর্ম একটাই। সেটা হল সনাতন আর বাকিগুলাে হল সম্প্রদায় বা গােষ্ঠী। এক-একটি গােষ্ঠি করে চলতে ভালােবাসে। আমরা একদম প্রাচীন যুগে যদি চলে যখন মানুষের সৃষ্টি হয় নাই, তাহলে দেখা যাবে, এককোষী প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ এসেছে। আর একজন মানুষ পিতা থেকে আমাদের সৃষ্টি। একজন পিতা আর একজন মাতা থেকেই ধীরে ধীরে এই বিশ্বের মানুষরা এসেছেন। অনেকে বলেন এই পিতামাতার নাম আদম ও ঈভ। তাহলে প্রশ্ন আমরা মানুষ হয়ে তাহলে আলাদা ধর্মের হতে পারি কি করে? আমরা লড়াই করি কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের। শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের উন্নত করতে হবে। অংশুমান বলছে, আমি অনেক কথা বলেছি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।