ক্যাফে কাব্যে সুদীপ ঘোষাল (গুচ্ছ কবিতা)

১| আফশোস

ভারতবর্ষকে চেন না যারা তাদের বলছি
জাতির সুড়সুড়িতে কাজ হাসিল হবে না তোমার
আমাদের দেশ-মায়ের কোন জাত নেই
বন্দুক বেয়নেট সামলে রেখো জানোয়ারের দল
শান্ত মা কে দুঃখ দিলে বুকে বিঁধবে হিংসার তির
বিষে ছেয়ে যাবে ছায়ার দেশ, এক যে ছিল হিটলার
বেনো জলে ভেসে যায় মলের মত
দুদিনের জীবনে কত জীবন পেলে, শান্ত হবি তুই
তোর চাহিদার শেষ চিতায় জ্বালাব বিদ্বেষ আগুন
ছারখার হবি তুই মুছে যাবে অহংকারি ভাষা
এখনও সময় আছে বন্ধ হোক মৃত্যুমিছিল
হায়েনার দাঁত লুকিয়ে রেখে ঢালো শান্তিবারি
মানুষ এনেছে তোকে সিংহাসনে ছিটকে যাবি আঙুলের ঘৃণায়
তর্জনি লুকিয়ে রাখ, নখ উপড়ে বেরিয়ে আসুক আশীষ
একবার কুশপুতুল হলে, ফিরে আসে পদক্ষেপে গন্তব্য
হয়ে যায় জনমের ভুল, বেশি সময় নেই
দেশের মানুষ ছিটোবে, মন্ত্রভোট জল হয়ে যাবি পুনরায় মুষিক।

২| খাদ্য প্রাণ

নদী র তীরে কাশফুলগুলো যদি ভুট্টা হতো
নতুন জামার বদলে মাটন বিরিয়ানি
এক পেট খিদে থাকা মানুষ গুলো নদীর
জল, ভুট্টা খেয়ে কবিতা লিখত হাসতো
প্রাচীন একটা গোল কাঠের নৌকায়
পেটমোটা লোক গুলো
বোকা জলে ভেসে যায়
আর তাকিয়ে উপহাস করে অভুক্ত জনকে
হাসে আর দেখে কাশফুলগুলো
টেনে ছিঁড়ে চিবোয় ভুখা মানুষের দল।
আসলে ওরা জানে না
কাশের গোড়া থেকে ভুট্টার
খাদ্য প্রাণ শুষে নিচ্ছে প্রাণপণে
নগ্ন মানুষের দল

৩| বাল্যকাল

বাল্যকাল জুড়ে পুজো বাড়ির শ্যাওলা
পাড়ায় পুজোর বাজনা, শালুকের মালা
ক্ষেতে ধানের হিল্লোলে মন মাতোয়ারা
দাদুর প্রিয় হলুদ বিবর্ণ চিঠির তোড়া
বাউল সুরে ভেজে মায়ের পরশের মত মায়া
শিশিরের ছোঁয়া , আদরের কদম তলার ছায়া,
দাদার আব্দারে গোকুল পুকুরে সাঁতার
বাঁদরলাঠি আর বাবলা ঘেরা সব্জী বাজার
পিসির বাড়ি, শীতলার মাঠ, কবি গানের সুর
খড়ের বিছানা,খেলার মাঠ মেজাজ ফুর ফুর
কতশত সোনার স্মৃতি মধুর খেলায় মাতি
পরাণের পান্তুয়া, হাড়িমা গঙ্গার ঘাটে জেটি
মন খোঁজে ডুবোপাড়া, কাটোয়ার ক্ষেপিমা,
নিলুদার কালিবাড়ি, নিচুবাজার , হাড়িমা
গৌরাঙ্গতলা,মাধাইতলা আর পানুহাট
পাশ ছাড়ে না, কলেজ, কে ডি আই মাঠ

সুবােধ স্মৃতির মােড় স্টেশনের আড্ডা
দূরন্ত কার্তিক লড়াই আর গঙ্গার বাঁধটা

ন্যাশনাল সিনেমা, উত্তরার মােড়, ভাষাসদন, রবীন্দ্রভবন,জানকীলাল,ডিডিসি,ভারতীভবন
হৃদয় জুড়ে দেশের মাটি আর শ্মশান,
মাটি মানুষের ভালবাসা, মায়ের -টান

৪| ভাগ্যবান

পাশের বাড়ির লোকটি বিয়ে করেনি
রোগে ভুগে নেশা করে সে পরপারে চলে গেলো
তারপর শবদেহ, চার কাঁধের বদলে ট্রাকটর
ইলেকট্রিক চুল্লিতে ছাই ও নাভি
বন্ধুরা গঙ্গানদীর বদলে অজয় প্রবাহে ছুঁড়ে ফেললো তার অবশিষ্ট মায়া
তারপর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির টাকায় ধুলোখেলা,বিশ্রদ্ধ শ্রাদ্ধের নির্লজ্জ ভোজন
শ্মশানবন্ধুরা দেখে
প্রতিবেশিদের দরজায় দরজায় সারি সারি সধবারা আজ বিধবার সাজে
সাদা শাড়ি পরে হাত নাড়ে শেষ বিদায়ের ভোজে
শ্মশানবন্ধুর ফিসফাস, লোকটা বিয়ে না করেও…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।