গদ্যানুশীলনে সুদীপ ঘোষাল (গল্প সিরিজ)

খোলস

সূর্য হেলে পড়ছে গোধূলিবেলায়। আলপথের কোথাও ডাঙা কোথাও বর্ষার জলে, আধো ডোবা। কেনারাম,  আলপথ পেরিয়ে বাঁধে উঠে দেখল এদিকটায়  এখনও একজন লাঙল চালাচ্ছে জমিতে।কেনা বলল, ঠিক ঠাওড় করতে পারছি না। কে গো এখনও জমিতে লাঙল দিচো।কে তুমি?
– আমি মরা, মরাদা গো , হাজরাদের মরা।এবার উঠব।
– ও মরাদা!  একবার  ট্রাকটর ডেকে জমিটা চষে দিলেই তো পারো।এত পরিশ্রম আর কেউ করে না গো এখন।
– তা বটে। তবে কি জানো আমার মাটির বুক যে ধরফরিয়ে ওঠে। কত প্রাণী ঘুমোয় মাটির নীচে। ট্রাকটরের চাপে সব শেষ হয়ে যাবে।ও আমি পারব না।
– কেনে, কেনে? সবাই তো তাই করছে গো মরাদা।
– আরে বাবা, মাটি তো আমাদের বুকের মত গো।আস্তে আস্তে বুক মালিশ করি যেমন, ঠিক তেমন করে জমি চাষ করি আমি।
মরাদা এবার গর্তে জমা জলে হাত,পা ধুয়ে নিচ্ছে। মোষ দুটোর পিঠে জল দিয়ে ধুয়ে হাত বুলোতে বুলোতে বলল,চলো তোমার সঙ্গে বাড়ি যাই,কথা বলতে বলতে।
কেনারাম  বলল, চল। কিন্তু তুমি তো বিষ স্প্রে করো না।গোবর সার দাও  জমিতে। কেন গো?
মরাদা বলল, রাসায়নিক সার দিই না গো। জৈব সার দিই।গোবর আর পচা খড় প্রথমে দি। তারপর বৃষ্টি হলে আরও পচে।তার থেকে আর ভাল সার কী হতে পারে বল তো?
– কেনে, রাসায়নিক সার। বেশি ফলন হবে।
– তবুও অভাব যায় না।রাসায়নিক সারে,বিষে  বন্ধুপোকা মরে যায়।মাটির ক্ষতি  হয় গো।
কেনা বলে,ওসব বুঝি না। তবে তোমার চাষের পদ্ধতি আমার কিন্তু বেশ ভাল লাগে। সবথেকে তোমার জমিতে ফসল ভাল হয়, তা ঠিক বটে।
– আরে সেইকথাই তো বলছি গেরামের সকলে যদি গোবরসার ব্যবহার করি মাটি বাঁচবে,উর্বর হবে আর বন্ধুপোকাও বাঁচবে ।
কেনারাম  ওর পাড়ার পথে পা বাড়ালো।
মরাদা বাড়ি পৌঁছে গরুকে খেতে দেয়।তারপর নিজে খায়।একটু জিরিয়ে নিয়ে ঘুমে ঢলে পড়ে।সে স্বপ্ন দেখে, মাটিরগর্ভে জীবনগুলো সে বাঁচিয়ে তুলেছে। আর নব যুবকের দল, উন্নত চিন্তাধারায় চাষের কাজ করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে অলসতার খোলস ছেড়ে।
Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!