সব কিছুর সুন্দর সংগা থাকলেও আমার কাছে রুচির কোন সংগা নেই। মাংশে বৃহস্পতিবার রুচি থাকলেও শনিবারে বাড়ে সোমবারে কমে। ঘুরতে রুচি বেশি ঠিকই ঘুরতে গেলে রুচি থাকে না। মামার বাড়ি দিদার হাতের রান্নায় আমার সবচেয়ে বেশি রুচি কিন্তু অন্যদের বাঁকা চাহনিতে রুচি ছুটে যায়। গ্রামের ছেলে হওয়াতে কাদা মাটিতে বেড়ে উঠেছি বলে কাদা জলে বড় অরুচি, শহরের ঝলমলে আলোতে আমার রুচি বেশি। এখন শহরে থেকে বুঝেছি গ্রামের পতিত ক্ষেত থেকে কুঁড়িয়ে আনা শাকে বেশি রুচি। আমার এমন রুচিবোধে আমার সাথে থাকা মানুষের খুব অরুচি লাগে। বলে যা জোটে তাতে পেট পুরে খেয়ে নিতে। আমি জানি আমার মত অল্প রোজগারের মানুষের উন্নত রুচি থাকা ঠিক না। কিন্তু এটাও বুঝি আমার মত তাদেরও প্রত্যহ পেঁপে ডিমে রুচি আসে না। কিন্তু প্রকাশে তাদের রুচি আমার মত বেশি না। তাদেরও মহান স্রষ্টা জিহ্বা দিয়েছেন, রুচি তাদের যেমন আমার ক্ষেত্রে বেশি হবে কেন? তারা আমার আয়ের সীমাবদ্ধতা বুঝে রুচির ব্যাপারটা অপ্রকাশ রাখে। কিন্তু আমি পারি না, আমার জিহ্বাতে রুচি বেশি এবং হাতে কর্মক্ষমতা কম। জিহ্বা আছে অথচ রুচি কম বললে কি করে বিশ্বাস করি! যারা বলে আমার ইলিশে অরুচি বুঝতে হবে তার অক্ষমতা প্রবল। যারা বলে আমি গ্রামের ছেলে শাক-সবজি হলে মাছ মাংশ আড়াল করি, সেখানেও বুঝতে হবে জিহ্বার স্বাদের বিরুদ্ধে সে রুচি প্রকাশ করছে। অরুচিকরেও আমরা নানাবিধ কারণে রুচি দেখাই। পকেটে অক্ষমতা থাকলে রুচিও বদলে যায়। কেউ কেউ বলে চিংড়িতে এলার্জি, বুঝতে হবে চিংড়ি ক্রয়ে তার সীমাবদ্ধতা আছে। নতুবা এলার্জির ডর ভুলে একদিন হলেও চিংড়ি খেয়ে জিহ্বাতে রুচি লাগাত। রুটি-রুজি-রুচির জন্যই আমরা কর্ম করি, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের কাজ কর্ম রুচিকর থাকে না। রুচিকর পোশাক-আশাকের জন্য অরুচিকর কাজ করতেও আমাদের রুচি লাগে। সেই অরুচিকর কাজ প্রথম দিন করতে যেমন অরুচিকর ছিল দিনের পর দিন করতে করতে অরুচিকর কাজটিই হয়ে উঠে রুচিকর। আর তাই আমরা সবাই ভাবি রুচিকর কাজ করছি, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। কেউ যদি বলে আমি ধোপদুরস্ত থাকি, কারণ রুচিশীল, বুঝতে হবে অরুচিকর কাজটিকে সে রুচিকর করে নিতে পেরেছে। সমাজ বাস্তবতায় স্বল্প আয়ে রুচিশীল থাকা, রুচিকর খাওয়া, রুচিশীল চলা, রুচিকর বক্তব্য রাখা সত্যই কঠিন। এখন মানুষের চিন্তাতেই অরুচি, সুযোগের অপেক্ষায় রুচির জন্য অরুচি কর্ম করতে উঁৎ পেতে আছে। মুখের রুচির জন্য ডান হাতের কাজ বাম হাতে করে ফেলছে। রুচিশীল চলার জন্য ডান পা বাম পা না বুঝে ফেলে মুখ থুবড়ে পড়ছে, মগজ বিক্রি করে হলেও রুচিকর কিছু চাচ্ছে। এটাকে রুচিশীলতা বলে না, রুচি জিনিসটিই ভিন্ন। লুঙ্গি পরলে রুচি নষ্ট হয় না, স্যান্ডেল পরে হাটলে রুচি নষ্ট হয় না, বরং দামি দামি পোশাক-আশাক পরলেই মানুষ প্রশ্ন ছোঁড়ে অত টাকা ও পায় কোথায়! আমরা আমাদের রুচির জন্য, শুধু রুচির জন্য বিবেক বিক্রি করে দিই। রুচিশীল হতে হবে আগে, তারপর রুচিশীল পোশাক পরতে হবে। রুচিশীল পোশাক পরলেই রুচিশীল মানুষ হওয়া যায় না। রুচিশীল হওয়ার জন্য রুচিকর ব্যবহার দরকার, রুচিকর কাজ করা দরকার, রুচিশীল পোশাক নয়। আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যহ বিবেকের আয়নার সামনে দাঁড়ানো উচিত, নিজেকে চেনার জানার বোঝার এবং সমীক্ষার দরকার। মনের আয়নায় প্রত্যকে ধরা, যখনই নিজেকে নিজে উপলব্ধি করবে তখনই রুচির সংগা বদলে যাবে। রুচি মানুষ ভেদে ভিন্ন হলেও অতি রুচি নজরে পড়েই। মানুষ ভেদে রুচির সংগা ভিন্ন এ বাক্য ভুলে যাই। রুচির সংগা ভিন্ন মানেই ঘুষে তুমি রুচি পাও, আমি দেখি অন্যায়। আর রুচির সংগা অভিন্ন মানেই অন্যায় অন্যায়ই। রুচিশীল হই মন-মননে, রুচিকর হই ক্রিয়া-কর্মে। তেমন রুচিবান হই যাকে নিয়ে কেউ প্রশ্ন ছুঁড়বে না। সব কাজে সৌন্দর্য আনি, সুন্দর হবে ধরণী।