কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে স্বপঞ্জয় চৌধুরী (পর্ব – ৪)

সায়লব গোয়েন্দা সিরিজের গল্প

এথলেটসের ডায়েরি

৪.

সবাই রাতে চেম্বারে মিটিং এ বসেছেন। ফরেনসিক রিপোর্টে আপেলের সাথে আরেকটি মারাত্মক মাদকের সন্ধান পেয়েছেন। যার নাম এলএসডি। এটি যেকোন যুবককে মুহূর্তের ভেতর মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটিয়ে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করতে পারে। নম্্রতাকে ডায়েরিটি পড়তে দেয়া হয়েছে। ডায়েরির পাতা উল্টাচ্ছেন আর শিহরিত হচ্ছেন, ব্যথিত হচ্ছেন ডায়েরির লেখাগুলো দেখে।

ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠা: আজ ২০ নভেম্বর ২০১৪ আমি দেশের হয়ে খেলে এশিয়ান গেমসে স্বর্ণ পদক পেয়েছি। আজ আমার জীবনের একটি স¥রনীয় ও গৌরবের দিন। এই দিনটিকে আমি উদযাপন করছি আমার পরিবারের সাথে। এক থেকে চার পৃষ্ঠায় তার স্বর্ণ জয়ের পেছনে কঠোর শ্রম ও অধ্যাবসায়ের বর্ণনা দিয়েছেন।
ডায়েরির পঞ্চম পৃষ্ঠা: নিবেদিতাকে আমি মনে মনে পছন্দ করি। ও কি সেটা জানে। এখন আমি স্টার । এখনই মোক্ষম সময় ওকে প্রপোস করার। স্বর্ণ জয়ের পর বন্ধুরা সবাই খুশি হয়েছে। অভিনন্দন জানিয়েছে কিন্তু শ্যামল কী খুশি হতে পারেনি। ও আমার দিকে কেমন যেন এক হিংসাত্মক চোখে তাকিয়ে ছিল। ওর চোখের ভাষায় আমি চরম হিংসা দেখেছিলাম। যেদিন আমি নিবেদিতাকে প্রপোস করি। নিবেদিতা আমার প্রপোসে হ্যাঁ কিংবা না কিছুই বললো না। আবার সে যে আমাকে অপছন্দ করে সেটিও কিন্তু তার আচরণে বোঝা যায় না। আসলে শাস্ত্র তাই বলে- নারী রহস্যময়ী।

ডায়েরির বিশতম পৃষ্ঠা- শ্যামলের হিংসাত্মক রুপ দিনকে দিন প্রবল হতে থাকে। আমাকে পেছন থেকে নানাবিধ নোংরা স্লেজিং করে ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা করে। আমিতো ওর সাথে কোন শত্রুতামূলক আচরণ করিনি কখনো। আমার গোল্ড মেডেল জেতা, ভালো ফলাফল, নিবেদিতার প্রতি দূর্বলতা কোন কিছুই যেন ও মেনে নিতে পারছেনা। তাই খেলার মাঠে প্রায়ই গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসে।

ডায়েরির আটষট্টিতম পৃষ্ঠা: নিবেদিতার সাথে আমার সম্পর্ক এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ও যেকোন দিন আমাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে ফেলবে মনে হচ্ছে।

ডায়েরির সত্তরতম পৃষ্ঠা( ৭ ফেব্রুয়ারি) : আজ আমার জীবনের সবচেয়ে কলঙ্কতম দিন। আমাকে নোংরাভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আয়া নসিমনকে দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি নিবেদিতার দেয়া আপেল খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর কী ঘটে মনে নেই। চোখ খুলে দেখি নসিমনের কাপড় ছেড়া, আমাকে এলোপাথাড়ি ভাবে মারলো সবাই। আমি যতই বললাম -তোমরা আমাকে মারছো কেন? আমি কোন দোষ করিনি। সিসিটিভির ফুটেজ চেক করে দেখো , বিশ্বাস না হলে। কিন্তু সিসি ক্যামেরাটাও রুম থেকে হাওয়া করে দিয়েছে। এসব শ্যামলের কাজ । নিবেদিতার কাছ থেকে আমাকে দূরে সরানো জন্য। আমার এতদিনের সম্মান ও সুনামকে ধূলোয় মেশানোর জন্য ও এতটা নিচে নামতে পারলো। আমাকে ও ঘৃণা করে। আমার জন্য ও আর কখনো আপেল আনবে না। দু’জনে শেয়ার করে আর কখনো আপেল খাওয়া হবে না। ওহ! গড আমাকে মৃত্যু দাও।

ডায়েরির আশিতম পৃষ্ঠা: আজ অনেক রক্ত ঝড়িয়েছি। ব্লেড দিয়ে হাতটাকে ক্ষত বিক্ষত। ভার্সিটির সহপাঠীরা আমাকে রেপিস্ট বলে। পাড়া প্রতিবেশিরা তাদের স্কুলগামী ছোট ছোট বাচ্চাকেও আঁচলের তলে লুকায় আমাকে দেখে। কিন্তু পৃথিবীকে আমি জোড়ে চিৎকার করে বলতে চাই- – I am not rapist, I am not rapist. এরপর এ বাক্যটি সে বহুবারই লিখেছে এবং পৃষ্ঠা ছিড়েছে। যার অংশই খাটের তলায় পাওয়া গিয়েছিল।

কিন্তু ডায়েরিটা ভার্সিটির বাগানে গেল কীভাবে? রহস্য থেকে যায়।

গভীর রাতেই নম্রতার ফোন। সায়লবের মোবাইল বেজে উঠলো। স্যার, সত্যিকারের কালপ্রিটকে খুঁজে পেয়েছি কাল আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।