রম্যরচনায় সংযুক্তা দত্ত

“নৃত্য রসে চিত্ত মম উছল হয়ে বাজে”

এটাই আমার কাছে নাচ। অনেক গুরুগম্ভীর সংজ্ঞা পাওয়া যায় নৃত্যকলা নিয়ে, তবে সোজা ভাষায় বলতে গেলে, গান অথবা কোন বাজনার সাথে মানানসই ভঙ্গিমার মাধ্যমে ভাবপ্রকাশ।
নাট‍্যশাস্ত্রে বলে,
যথা হস্ত তথা দৃষ্টি
যথা দৃষ্টি তথা মনহ্
যথা মনহ্ তথা ভাব
যথা ভাব তথা রস।
যথাযথ নৃত‍্যরসটি দর্শকদের কাছে আস্বাদন না করাতে পারলে, সে প্রচেষ্টা বৃথা।
অনেক তথ‍্যকথা হল, এবার বলি আমার চিত্তের সাথে নৃত‍্য কীভাবে মিলে মিশে গেল। বাঙালি বাড়ীতে ছেলে মেয়েদের ছোটবেলায় নাচ, গান, তবলা, ছবি আঁকা কিছু না কিছুতে ঠিকই ভর্তি করা হয়। সেইরকমই তিন বছর বয়সে আমার মা আমাকে পাড়ার নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল। দুখানি মুখ্য কারণ এক নম্বর ছোটবেলা থেকে কাশিতে ভোগার ফলে গলাটা ভাঙা, গান গাওয়া একটু মুশকিল আর ছটফটে মেয়েকে যদি নাচে ব্যস্ত রাখা যায়। সেই থেকে আমি তো মহা উৎসাহে পায়ে ঘুঙুর বেঁধে নাচের স্কুলে চললাম। সেই নাচ, গান ও আঁকার স্কুলের নাম ছিল ‘হিন্দোল’।কিছুদিন শেখার পর সেখানের বাৎসরিক অনুষ্ঠান। আমার ভূমিকা শেয়ালের দলের এক শেয়াল।একদল শেয়ালের গোটা দুয়েক নাচ ছিল। তা নাতনীর প্রথম নাচের ফাংশন, বাড়িশুদ্ধু সবাই যাবে দেখতে। এমন সময় দিদি(ঠাকুমা)জিজ্ঞাসা করল, সবার তো একরকম মেকাপ হবে, তোকে কী করে চিনবো? সঙ্গে সঙ্গে কাকিমার উত্তর, দেখবেন যে শেয়ালটা খকখক করে কাসছে, সেটাই আপনার নাতনি।
বাড়ির সবাই হো হো করে হাসতে লাগল। যাই হোক, অনুষ্ঠানের দিন তো হইহই করে মেকাপ হল। মুখে কালো রঙ, কালো জামা সবকটা শেয়ালের এক রা, থুরি এক রূপ। আমার সেই সময় কাশি ছিল না কিন্তু ভাবলাম দিদি (ঠাকুমা) কী করে আমাকে চিনবে? তাই নাচতে নাচতে বেশ কয়েকবার খকখক করে কেশে নিলাম। না না ভাবছেন কী, নাচের স্টেপে কোন ভুল করি নি। এই ছিল আমার প্রথম স্টেজ পারফরম্যান্সের গল্প খকখকে খেঁঁকশেয়াল রূপে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।