ধারাবাহিক রম্য রচনায় সংযুক্তা দত্ত – ১৪

 

আগে এক পর্বে আমি ম‍ানেজমেন্ট স্কুলের নাচের গল্প বলেছিলাম আজ বলব আমার আরেক শিক্ষিকা রূপী অভিজ্ঞতার গল্প।
সেসময় আমি সবে বিশাখাপটনমের এক মিশনারি স্কুল শিক্ষিকা রূপে যোগদান করেছি। আর ওই যে ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে ঠিক তেমনি সেই বছরই ছিল ওই স্কুলের ৮০ বছর পূর্তি সেলিব্রেশন, ব‍্যস কালচারাল কমিটিতে আমি।
বিশাল পোর্ট স্টেডিয়াম ভাড়া করে প্রোগ্রাম হবে।
অনেক প্ল‍্যানিং ইত‍্যাদির পর ঠিক হল ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কার্নিভ্যাল ড‍্যান্স হবে। তা স্কুলের এক শিক্ষিকা ছিলেন যিনি নাচের ব‍্যাপারে সর্বেসর্বা। সুতরাং তিনি আমাকে ও আরো একজন সামান্য নাচ জানা শিক্ষিকাকে বললেন যে,”আমি ড‍্যান্স কোরিওগ্রাফি করব, তোমরা শুধু দেখবে বাচ্চারা ঠিক মতন করছে কী না”।আমি তখন একদম নতুন,তাই বড় করে ঘাড় নেড়ে দিলাম।
মিউজিকের দায়িত্বে ছিলেন ভ‍্যাইজাগ শহরের এক বহুগুণ সম্পন্ন মানুষ। প্রায় সব ধরনের বাদ‍্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন তিনি। তাঁর মিউজিক ও রিদম সেন্স ছিল অতুলনীয়।
রিহার্সাল দেখে উনি বললেন ঠিক জমছে না, স্টেপ বদলাও। তা সেই শিক্ষিকা তখন নতুন স্টেপ ভাবছেন। আমি সেইসময় একদল বাচ্চা সামলাতে নাজেহাল। তাদের মন ভোলাতে তাদের সাথে নিয়ে কিছু নাচানাচি করছিলাম। মিউজিক স‍্যার খেয়াল করেছিলেন। আমায় ডেকে বললেন,” আমি কী বোর্ডে বাজাচ্ছি, আপনি স্টেপ করুন।” “।পাশ্চাত্য নৃত্যশৈলী মানে কোনদিনই আমার জঁনার নয়। কিন্তু ওই সেন্স অফ রিদম টা তো ছিল তাই নেমে পড়লাম ময়দানে।
জয় গুরু জয় বাংলা, প্রথম চান্সেই স্টেপ এ‍্যাপ্রুভ হয়ে গেল। এবার সেই শিক্ষিকার তো মুখভার। যাইহোক অনুষ্ঠান ফাটিয়ে জমে গেল।
সেইসময় মনক্ষুন্ন হলেও তারপরে সেই শিক্ষিকা ও আমি বেষ্ট ফ্রেন্ডস হয়ে উঠলাম আর দুজনে মিলে প্রচুর সুচারুভাবে অনুষ্ঠান করেছি একসাথে। শিল্প এমন একটা জিনিস যা দুরের মানুষকেও কাছের মানুষ করে তোলে। এ আমার উপলব্দি।

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!