কর্ণফুলির গল্প বলায় স্বপঞ্জয় চৌধুরী – ২

চন্দ্রক্ষুধা
দুই
বরকত সাহেবের ঠিক পাশের বাড়িটাই হচ্ছে মকবুল সাহেবের বাড়ি। এ বাড়ি থেকে ও বাড়ির দূরত্ব এক হাতও হবে কিনা সন্দেহ আছে। পুরোনো ঢাকার বাড়িগুলো অনেকটা লোকাল বাসের যাত্রীদের মতো। একজনের গা ঘেঁষে অন্যজন দাঁড়িয়ে থাকে। বরকত সাহেবের বাড়িটি আগে ছিল এক হিন্দু ভদ্রলোকের। তার নাম ছিল সম্ভবত শ্রী নটমঙ্গল ঠাকুর। বরকত সাহেব গাঁয়ের জায়গা জমি বিক্রি করে চৌদ্দ বছর আগে এ বাড়িটি কেনেন। শোনা যায় তাঁর গাঁয়ের বাড়িতে জমিজমা সংক্রান্ত শত্রুতার জের ধরে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। এমনকি তাদের উপর মাঝে মধ্যেই চলতে থাকে বর্বচিত হামলা। শেষমেষ বরকত সাহেব প্রাণ ভয়ে পাড়ি জমান ঢাকার শহরে। গাঁয়ের জায়গা জমি বিক্রি করে বন্ধু শ্রী নটমঙ্গলের কাছ থেকে এই ছোট্ট বাড়িটি কেনেন। মকবুল সাহেবের সাথে তার খুব ভাল সম্পর্ক। অসুখে বিসুখে একে অন্যের পাশে থাকেন। বরকত সাহেবের দুঃখ তার মেয়ে পুষ্প। পুষ্পের এই রহস্যময়ী জীবন তাকে অসহায় করে দেয়, অপরাধী করে দেয়। সাজেদা পুষ্পের আম্মা। ডায়বেটিস এর রোগি। প্রতিদিন সকাল বেলা ছাদে হাঁটাহাঁটি করেন, সিড়ি দিয়ে একবার উপরে ওঠেন আবার নিচে নামেন। এটাই তার বেয়াম। রাতের বেলা রুটি খান, চিনি ছাড়া চা খান। প্রতিদিন সকালে এলোভেরার সরবত খান। তিনি মেয়ে পুষ্পের জন্য একটা বড় ঝুলন্ত আয়না কিনে এনেছেন। কিন্তু পুষ্প আয়নায় কখনো নিজের মুখ দেখেনা। এমনকি মাথা আঁচড়াবার সময়ও কখনও আয়না ব্যবহার করেননা। কালো কাপড় দিয়ে আয়নাটা ঢেকে রাখেন। মাঝে মধ্যে মেজাজ খুব গরম থাকলে আয়নাটা এক আছাড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেন।