সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী (পর্ব – ১৮)

ক্ষণিক বসন্ত

হোমশিখা

সারা রাত ঘুমোতে পারল না হোমশিখা। যতবার তন্দ্রা আসে, গুরুজি চলে আসেন স্বপ্নের ভিতর। তাঁর চোখমুখ দেখে হোমশিখা বুঝতে পারে তিনি তার উপর বেশ রুষ্ট। ঠিক তিন বছর থেকে গুরুজির কাছে তালিম নিয়েছে সে। গুরুজি ঠুমরির বাংলা ঘরানার প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতজ্ঞ গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর ছাত্র তিলকরঞ্জন ভট্টাচার্যর ছাত্র। নিয়ম করে প্রতিদিন আট ঘন্টা রেওয়াজে বসতে হত। ফাঁকি দেবার অবসর ছিল না। মাত্র ষোলো বছর বয়সে হঠাৎ এক টিভি চ্যানেলের ট্যালেন্ট শোতে হোমশিখা আহির আশিকের চোখে পড়ে গেল। আহির তখন ইতিমধ্যেই মুম্বাইতে সুপ্রতিষ্ঠিত। তারপরের ধাপগুলোতে এগিয়ে যেতে দেরি হল না তার। আহিরের সঙ্গে লাইভ শো, ট্যুর, প্রোমোর সমান্তরালে হোমশিখা তার বুকের ওপর হাত রেখে বুঝতে পারত সে ভিতরভিতর কাঁপছে। ট্যালেন্ট শো তে নাম দেবার কথা সে কারোকে জানতে দেয়নি। গুরুজিকেও না। গুরুজিকে সেই প্রথম সে কোনও কিছু না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। উপায় ছিল না। এখবর জানতে পারলে গুরুজি কোনও দিন তাকে অনুমতি দিতেন না। হোমশিখা কিছুদিনের ভিতরেই বিখ্যাত হয়ে উঠল। কিন্তু খ্যাতনামা হবার মূল্য তাকে দিতে হয়েছিল। গুরুদেব চিরকালের জন্য তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তার থেকে। সেই শূন্যতা এতোগুলো বছর সে বুকের ভিতর অভিমান ভরে চাপা দিয়ে আগলে রেখেছিল। আজ অডিশনের সময় সাগরের গলায় গান শুনতে শুনতে তাঁর এতোগুলো বছর পরে সেই চেপে রাখা শূন্যভাবের কথা মনে পড়ে গেল আবার।

হোমশিখা দেখল তার মুখোমুখি বসে আছেন তার গুরুজি। বাংলার ধ্রুপদী ও ঠুমরি ঘরানার প্রবাদপ্রতিম মহীরূহ তুখারিরাম শাস্ত্রী।এই গুরুজি একদিন তাকে তিলতিল করে কতো জটিল তান, বোল-বনাব, গিটকারী, মুরকী শিখিয়েছেন। ধ্রুপদি ঘরানার পাশাপাশি গুরুজি শিখিয়েছেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আদিধারা লোকায়ত স্বর ও সুরে। কতো চৈতী, কাজরী, সাবনী, ফাগ, হোলী, তিরোঁতীর তালিম নিয়েছে সে। পরবর্তীতে সেইসব তালিমের প্রকাশ মুম্বাই হিন্দি ফিল্মের সুরকাররা হোমশিখার গলায় শুনে বিস্ময়ে চমকে উঠেছে। হোমশিখা দেখল তার স্বপ্নের ভিতর সেই গুরুজি তার সামনে বিষণ্ন মুখে বসে আছেন।
-এ তুই কী করলি বেটি? আমার এতোদিনের মেহনত, সাধনা, সব মিথ্যে করে দিলি?
-কেন গুরুজি? আমি তো আমার রেয়াজে ফাঁকি দিইনি।
-সাধনা আর রেয়াজ এক যে নয়, কতোবার বলেছি তোকে। ওই ছেলেটার গান শোনার পরেও ওকে বাদ দিতে পারলি তুই?
-আমার উপায় ছিল না গুরুজি। ওরা…
-সঙ্গীতসাধনায় কোনও ‘ওরা’ নেই বেটি। সেখানে শুধু তুই আর তোর বারোটি স্বর। বাস। এবার বুঝেছিস কেন নারাজ ছিলাম তোর ওপর। আমি জানতাম তুই ওখানে গেলে মরে যাবি।
-আমি মরব না গুরুজি। সত্যি বলছি। আমি সব ঠিক করে দেব। আমি পারবো। গুরুজি…
হোমশিখা দেখল তার গুরুজির চোখে জল।তিনি মৌন। ধীরে ধীরে তার অবয়বটুকু তার চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে মিলিয়ে গেল। ঘুম ভেঙে গেল আবার। ধড়মড় করে উঠে পড়ল সে। আজ তিনদিন হল অডিশন হয়ে গেছে। বারবার সেই ছোট্ট বারো বছরের ছেলের গলার স্বর তার কানে ভেসে আসছে। সাগর! যাকে নিজের প্রতিবন্ধকতার দোহাই দিয়ে মূলপর্বে এনে দিতে পারেনি সে। নিজের মনের ভিতর কতো যুক্তির দুর্গ খাঁড়া করেছে সে। অডিশনের দিন তো নিজের কার্ড তাকে দিয়েছে সে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সবসময় পাশে থাকার। একটা বহুজাতিক টিভিসংস্থার ভাড়া করা বিচারক সে। সেখানে গলা ভেজানোর এক গ্লাস জলটুকুও স্পনসরের পয়সায় আনা হয়। সে তো কোনও রণভূমি নয়। নট্যশালা। কী করতে পারত সেদিন হোমশিখা? যতোবার নিজেকে বোঝাতে যায় ততোবার গুরুজির মুখের ছবিটুকু ভেসে ওঠে তার সামনে। যুক্তির তোরণগুলো ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ে। এই তিনদিনে ছেলেটি তাকে ফোন করেনি। পড়শু হোমশিখা আবার বান্দ্রা ফিরে যাবে। এদিকে ছেলেটি কোথায় থাকে,ফোন নম্বর, কিছুই তো জানবার উপায় নেই তার।
মুখেচোখে জল দিয়ে উঠে পড়ে সে। আজ স্টুডিওতে কয়েকটা পোস্ট এডিটের কাজ রয়েছে আজ। দ্রুত সেরে ফেলে। স্টুডিওতে লজিস্টিক্স সামলায় ভারতী। তার সমবয়সীই হবে। এই কদিনে মেয়েটির সঙ্গে বেশ আলাপ হয়ে গেছে তার। মেয়েটি তার গানের ভক্ত। মেয়েটিকে বললে হয়তো একটা কোনও সমাধানের পথ বের হতে পারে। ভাবতে ভাবতেই শাওয়াররুমে ঢুকে শাওয়ার চালিয়ে দিল হোমশিখা। অঝোরধারায় তার ভিতরের অবরুদ্ধ পাপবোধ কিন্তু কিছুতেই পরিশুদ্ধ হতে পারল না। স্টুডিওতে আজ ‘বন্দিশ ফাইট’ এর প্রথম রাউণ্ডগুলোর পরিকল্পনার কথা বলতে এলেন প্রযোজক। পুরোটা দিন মিটিং ঘরেই কেটে গেল তার। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সব মিটে গেলে হোমশিখা কম্পিউটার রুমে উঁকি মেরে দেখল তখনও ভারতী তার ডেস্কটপের সামনে বসে কাজ করে চলেছে। একবার গুরুজির মুখটা স্মরণ করে হোমশিখা বুকের ভিতর সাহস নিয়ে ভারতীর দিকে এগিয়ে গেল।
-একটা কাজ করে দেবে প্লিজ?
-বলুন না ম্যাডাম।
ভারতী আশা করেনি তার স্বপ্নের মানুষ এইভাবে হঠাৎ তার সামনে উপস্থিত হবে। হোমশিখা সেই মোহস্তব্ধতার সুযোগে সাগরের কথা বলল। হোমশিখার সাগরের বাড়ির ঠিকানা দরকার। ভারতী একটু ভেবে বলল।
-এমনিতে রিজেক্ট করা ক্যাণ্ডিডেটদের কনট্যাক্ট ডিটেইলস সাতদিনের ভিতর সিস্টেম থেকে অটোডিলিট হয়ে যায়। কিন্তু আজ মোটে চারদিন হয়েছে। আপনি বসুন ম্যাডাম। একটা চেষ্টা ঈরে দেখি। হয়ে গেলেও যেতে পারে। বসুন।
হোমশিখাকে পাশে বসিয়ে ভারতী ডেস্কটপের ডাটাবেসে সাগরের সন্ধান করতে লাগল। হোমশিখা দেখল কতো হাজার হাজার স্বপ্নের নিভে যাওয়া বাতি তার সামনে পোড়ামাটির ফেলে দেওয়া প্রদীপের মতো সরে সরে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কতো সম্ভাবনাময় হোমশিখা, আহির আশিক লুকিয়ে আছে। লুডোখেলার ঘুঁটির মতোই হয়তো তাদের জীবনে সেইদিন শুধু ‘পুঁট’ পড়েছে বলেই তারা এই স্বন্নফেরির সফর থেকে ছিটকে গেছে। ভাবনার ভিতরেই ভারতী একবার জিজ্ঞেস করল।
-ম্যাডাম। এখানে এগারোটা সাগর দেখাচ্ছে। আপনি একটু অডিশনের তারিখ আর আনুমানিক সময়টা বলতে পারবেন? বা আগুপিছু কোনও ক্যাণ্ডিডেটের নাম? তাহলে আমার খুঁজতে সুবিধা হবে।
হোমশিখা ভাবতে থাকে। ওই সাগরের সঙ্গে থাকা ছেলেটির কী যেন নাম? কুন্তল। ঠিক। কুন্তলই তো! ওকেই তো মূলপর্বে পাঠানো হল।
ভারতী অবশেষে সাগর গোস্বামীকে খুঁজে পেল। ফোন নম্বর আছে একটা। বাবার নাম মধুবসন্ত গোস্বামী। আর মায়ের নাম ইন্দুমতী গোস্বামী। ঠিকানা নবদ্বীপের। হঠাৎ মনে পড়ে গেল হোমশিখার। ছেলেটি বলেছিল বটে তাদের একটা কীর্তনের দল আছে। ভারতীকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে স্টুডিও থেকে বেরিয়েই নম্বরটায় কল করল সে বার তিনেক। প্রতিবারই একবার রিং হয়ে কেটে গেল নম্বরটা। মনের ভিতর উচাটন বাড়ছে হোমশিখার। গুরুজীর গলার স্বর ভেসে আসছে বারবার। ‘এ তুই কী করলি বেটি?’সে গুরুজিকে কথা দিয়েছে সে সব ঠিক করে দেবে। হোমশিখা নিজেকে শক্ত করে। তাকে পারতেই হবে।
হোমশিখা রূপসী ও বিদুষী। তার জীবনে কোনও তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনি। আসলে তার জীবনজুড়ে সম্পর্ক এখনও একটাই। সঙ্গীত। কিন্তু খোলা পাত্রে রাখা মধু নিজে মগ্ন থাকলেও মধুপায়ী মাছির অভাব হয় না। যোগ তেমনই একজন। যোগ আগরওয়াল। ‘বন্দিস ফাইট’ অনুষ্ঠানের হোস্ট ‘ঋতম কমিউনিকেশনস’এর মালিকের একমাত্র ছেলে। কলকাতায় আসার পর থেকে ছুকছুক করছে। হোমশিখা রাগবিস্তারে শ্রুতি নেবার মতো এড়িয়ে সরে যাচ্ছিল বারবার। প্রযোজক চটলে চাকরি যাবে। সঙ্গে থাকবে কালোতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবার সম্ভাবনা। এই জগতটা বড় বিষম। এখানে নক্ষত্রপুঞ্জর আলোর রোশনাই যেমন আছে একদিকে, তেমনই কালোতালিকায় একবার ঢুকে গেলে ব্ল্যাকহোলে চিরকালের জন্য হারিয়ে যাবার সম্ভাবনাও বিলক্ষণ আছে। তাই যোগ আগরওয়ালকে পুরোপুরি কাটিয়ে দিতে পারছিল না সে। স্টুডিওর বাইরে বের হতেই হোমশিখা দেখল বিরাট বড় মাস্তাঙ গাড়ি নিয়ে যোগ বাইরে তার জন্য অপেক্ষা করছে। সে মৃদু হাসতেই সে বলল।
-মে আই ড্রপ ইউ টু দ্য হোটেল?
হোমশিখা ভাবল। আজ ফিরতি পথে তার গাড়ি নেই। উবের করতে হতো। হোটেল এখান থেকে চোদ্দ পনেরো মাইল দূরে।
-ওকে।
বলেই গাড়িতে উঠে পড়ল সে। ছেলেটাকে এমনিতে ক্যাসানোভা মনে হয় না দেখে। বেশ ‘ক্যাবলা ক্যাবলা’ চাহনি। থাক না। চটিয়ে লাভ নেই। হোমশিখা আরও কয়েকবার সাগরের ফোন নম্বরে রিঙ করে পেল না লাইন। মনটা খিঁচিয়ে উঠছিল ভিতরভিতর। আন্দাজ করেই যোগ পাশ থেকে একটু ইতস্তত করে বলে উঠল।
-এনি প্রবলেম?
-নো। জাস্ট আ নম্বর। নট গেটিং থ্রু।
-লেট মি সি।
কিন্তু যোগের মোবাইল থেকে সাগরের নম্বরটা ধরা গেল না।
-ওয়াজ ইট আর্জেন্ট?
-ইয়েস। ভেরি মাচ।
-ওহ।
হোমশিখা দেখল যোগও বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। ঘটনার মাথামুণ্ডু কিছু না জেনেই। ফিক করে হেসে ফেলল সে। ছেলেটাকে বেশ বোকা বোকা লাগে দেখতে। ভাবটা এমন, যেন এক্ষুণি আকাশ থেকে চাঁদ পেড়ে আনবে।
-মে আই হেল্প?
হোমশিখা ভাবে। কলকাতায় আসার দিন থেকে ছেলেটা তাকে নিয়ে লঙ ড্রাইভে যাবার প্রস্তাব দিয়েছিল। হোমশিখা সেটাকে ঝুলিয়ে রেখেছিল। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল।
-ক্যান ইউ টেক মি দেয়ার?
যোগ ঠিকানাটা দেখল। নবদ্বীপ। যেতে যেতে ঘন্টি পাঁচেক। তা হোক। আজ তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অডিশন। তাকে পারতেই হবে। মাথা নেড়ে গাড়ি ন্যাশানাল হাইওয়ের দিকে ঘুরিয়ে দিল সে।

নবদ্বীপের সরু গলির ভিতর সাগরের বাড়ি খুঁজে বের করা কঠিন হল না প্রযুক্তির কৃপায়। যোগ আগরওয়াল দক্ষ হাতে সেই বাড়ির প্রায় দোরগোড়ায় নিয়ে গেল হোমশিখাকে। মাঝে কল্যাণীর এক ধাবাতে দাঁড়িয়েছিল খানিকক্ষণ। সেখানে হোমশিখা তাকে সব খুলে বলার পর হোমশিখার প্রতি তার মোহ মায়ায় পরিণত হয়েছে। হোমশিখার মনটিও ঠিক তার কণ্ঠস্বরের মতোই পবিত্র। দেবীর মতো।
একটা পরিত্যক্ত গৌড়ীয় মঠ পেরিয়ে প্রাচীন একতলার একটি ঘরের সামনে দাঁড়াল দুজন। ঘরের উপর সাদা পাথরের উপর লেখা,”শ্রীহরি মাধব”। পথের একটি ছেলে কীর্তনীয়া মধুবসন্ত গোস্বামীর ঘর কোনটা জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিয়েছিল। সদর দরজা রাত হয়ে যাওয়ায় বন্ধ ছিল। কলিঙ বেল বাজাতে ক্লান্ত চোখে এক মধ্যবয়স্ক দরজা খুলেই হোমশিখাকে দেখে খানিকক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তারপর দিব্যোন্মাদের মতো ভিতরে যেতে যেতে বললেন,”ওরে সাগর। দেখ রে। শ্রীহরি তোর কথা শুনেছে। কে এসেছে দেখ একবার। দেখ দিখি।”
রাতের বেলায় হঠাৎ এই অপ্রত্যাশিত চলে আসার জন্য দুই হাতে ক্ষমা চাইছিল হোমশিখা। কিন্তু পরক্ষণেই সে বুঝল এরা কেউ তাকে মানবী ভাবে না। এঁদের চোখে এরা দেবী। যদিও সাগর থামের আড়াল থেকে তাকে দেখছিল। তার মুখেচোখে অভিমান। সেইদিকে চেয়ে হোমশিখা বলল।
-এদিকে আয় না একবার বাবু। বলেই তো ছি। সরি।
সাগর দৌড়ে এসে প্রণাম করল হোমশিখাকে। গেটে দাঁড়িয়ে এই সমস্ত দৃশ্যায়ণ যোগ আগরওয়াল অবাক চোখে দেখতে লাগল।

-আমার গুরুজির কাছে গানা শিখবে সাগর? আমি ব্যবস্থা করে দেব। শিখবে?
সাগর ঘাড় নাড়ে। সাগরের মা ইন্দুমতী সরবত এনে দেয় দুজনের জন্য।হোমশিখা সাগরের বাবা আর মাকে বুঝিয়ে বলে সব। তার ছেলেবেলার কথা বলে। গুরুজির কথা বলে। গুরুজির বাড়ি হালিশহর।
-হাতে সময় নেই আমার। পড়শু চলে যাবো। কাল একবার আসতে পারবেন ওকে নিয়ে হাশিশহর। আমি কথা বলে রাখব।
সাগরের বাবা ও মা মাথা নেড়ে সম্মতি জানান। সাগর থাকে প্রণাম করলে তার মাথার ওপর হাত রেখে হোমশিখা বলে।
-আগের দিন ঠিক যেখান থেকে শেষ করেছিলে, আজ সেইখান থেকেই শুরু করতে হবে আবার। সঙ্গীতের তারানার মতোই জীবনের বন্দিশ অনন্ত সাগর। তুমি একদিন অনেক বড় শিল্পী হবে। ওই টিভি ট্যালেন্ট হান্ট বা মারকাটারি যোগবিয়োগের ঊর্ধ্বে। মনে থাকবে?
সাগর ঘাড় নেড়ে বলল,”হ্যাঁ ম্যাডাম। মনে থাকবে।”

ঘর থেকে বেরিয়ে যোগের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে হোমশিখা।
-ক্যান ইউ লিফ্ট মি টু মাই হোটেল?
যোগের চোখে জল। সে মকড়ানা মারবেলে মোড়া রাজবাড়িতে মানুষ হয়েছে। রাজবাড়ির বসার ঘরে রাজহাঁসগুলো সব হাতির দাঁতের। একটা সোনায় বাঁধানো বীণা আছে দাদুর ঘরে। সে বীণাতে সুর গাঁথেনি কেউ। আর ঠাকুর ঘরে আছে ধবধবে সাদা কষ্টিপাথরের বাগদেবী। কিন্তু সেই দেবী কথা বলে না। যোগ কলকাতা ফিরতে ফিরতে অনুভব করছিল তার পাশের সীটে বীণারঞ্জিত সরস্বতীই যেন জীবন্ত বসে আছেন। তাঁকে অপবিত্র হাতে ছোঁয়া যায় না। ছুঁলে পুড়ে যায় হাত। হঠাৎ হোমশিখা তার দিকে তাকিয়ে বলে।
-ক্যায়া হুয়া?
সে ঘাড় নেড়ে হেসে বলে শুধু।
-কুছ নেহি। জাস্ট ওয়েসেহি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।