প্রবাসী মেলবন্ধনে সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায় (নিউ জার্সি,আমেরিকা)

আলপথ

গল্পে ছিল একটা মেয়ে তার সাথে দুই ব্যথা, চিনার পাতার মত চিনচিনে বিরহ আর এক অপার মুগ্ধতার যন্ত্রণা, গত শ্রাবণের ঝড় ওর বুকের মৌজা জুড়ে এঁকেছে খলখল নয়নজুলি আর আগের চেয়েও দীর্ঘতর এক গোপন আলপথ ,যাকে মেয়ে প্রেম ভাবে;
আশেপাশের প্রকাণ্ড ভিড় কিন্তু বলে পরকীয়া তবুও ওর বাউল মন ঘিরে তিলতিল জমানো এক একাকীত্ব ; সুদূরের কোন এক শহরে ওর পরিযায়ী যে বহুদিন ঘর ভুলেছে…তার ঘরে নতুন চাঁদ।
বেলা অবেলায় মন আকুলিবিকুলি হলেই, মেয়ে আনমনে হাঁটে তার আলপথে যদি সেই দিব্যকান্তি পুরুষ রেখে যায় তার ভাঙা বোতাম
ওর আলতা পায়ের ছাপ পথের ওপর এঁকে রাখে আল্পনা ,আঁচলে বাঁধা ভাঙাচাবি ঝমঝম করে…
আলপথের দুধারে আলো হয়ে ফুটে থাকে হলুদ সর্ষে ক্ষেত …
ওর আঁচল ভরে ওঠে কুড়োনো আন্তরিক আলোয় …ঝিঙাশাল ধানের চাল …
স্তনবৃন্তে শিরশিরে মাতৃস্নেহ শাড়িটি হাঁটু অব্দি তুলে, যতটা সম্ভব কাদা বাঁচিয়ে ,তুলে আনে শাপলার ডাল…কলমীপাতা…এ কাদা বড় পিচ্ছল…তবুও যদি একটা চ্যাং বা মাগুর মেলে… গেঁড়ি-গুগলি হলেও কম কী! বড়টা ভালোবাসে ,বুকে আরেকটু দুধ নামে…ছোটটার রাতভোর ক্ষিধের কান্না কমে…মা মা ঘ্রাণ ছড়িয়ে ঘরে ফেরে মেয়ে …
এভাবেই ওর দিন গড়ায় সন্ধ্যে নামে ,রাত বাড়লে হায়নার দল ছোঁকছোঁক করে ঘরের আশেপাশে
মেয়ে রক্ষাকালী হয়ে পাহারা দেয় ভাঙা সংসার…
হঠাৎ এক নিঝুম দুপুরে পাঁকে ভরা খালের ধারে ওর ছলের নুপূর নিয়ে উড়ে যায় এক দল কামুক চিল…শরীরে সহস্র চাবুকের বিকৃত কাম ঢেকে দেয় আদরের আঁচড় ,স্খলিত আঁচল থেকে ছড়িয়ে পরে না-খেয়ে থাকা সন্তানের জন্য কুড়োনো শষ্য,একমুঠো ভাতের টান ,কী নির্বিচারে লুঠ হয় মায়াময় মনের তল…
থইথই আঁধার আরো গাঢ় হয়ে ঢেকে দেয় চরাচর…
মেয়ে ছড়িয়ে থাকা স্বপ্ন কুড়োয়,ছেঁড়া আঁচলে পুটুলি বাঁধে ,পা বেয়ে গড়িয়ে পরে রক্ত …
টইটুম্বুর চোখ তুলে দেখে তুমুল উৎসাহে ডাইনির ঘরে আগুনের মশাল ছুঁড়ছে কামতৃপ্ত হায়নার দল…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।