কর্ণফুলির গল্প বলায় স্বপঞ্জয় চৌধুরী (অন্তিম পর্ব)

পরজীবী

 

আট

কয়েক মাস পর সাদিব তার মাকে খুঁজে পেয়েছিল। সেই ফুটওভারের ওপরে টুথব্রাশ আর রুমাল বিক্রি করছে । আসমা তাকে পাঁচশত টাকা পুঁজি দিয়েছে ব্যবসা করার জন্য। সুকন্যাকে জরুরীভাবে হাসপাতালে েিনয় গিয়েছিলেন তারপর একটু সুস্থ হলে প্রতিবন্দীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন নাম না জানা একজন ভদ্রলোক। সেদিন ওই ভদ্রলোক ফেরেশতার মতো তাদের সামনে এসে হাজির হয়েছিল। যেন সাক্ষাৎ দেবদূত নেমে এসেছে সাত আসমান থেকে। সেলিনার বিশ^াস ছিল -তার সন্তানেরা এখানেই ফিরে আসবে । জুলমত হাতে পাইপ ধরে আছে। সে পাইপের মাধ্যমে মূত্র ত্যাগ করে। সে তার পাপের সাজা ভোগ করেছে। এখন সে পুরোদস্তুর ধার্মিক ভিক্ষুক। মিনিটে দু’তিনেট সুরা গরগর করে বলতে পারে । তার কামদন্ড বিচ্যুত হবার পর থেকে সে এখন ভিন্ন মানুষ। সাদিব তার মাকে আর পথে ঘাটে ব্যবসা করতে দিবে না। সে প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত ব্যাটারিচালিত রিকশার অনুমোদন পেয়েছে। বস্তির একটা ঘরে মা আর বোনকে নিয়ে সে তার বাকী জীবন কাটিয়ে দেবে।

 

দেখতে দেখতে বছর দুয়েক কেটে গেল। জুলহাস সাহেব খেয়াল করলেন। তার আর মুনিরার ভ্রæণ থেকে জন্ম নেয়া শিশুটি কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। জুলহাসের চোখের সামনে প্রতি রাতেই ভেসে ওঠে সুকন্যার মুখ। নতুন শিশুটি কি আরও একজন সুকন্যা হতে চলেছে। এই আশঙ্কায় সে মাঝে মাঝে আতকে উঠে। মুনিরাও কী পরবর্তী পরজীবী হতে চলেছে। তাহলে সেলিনার দোষ ছিল কী। জুলহাস সাহেব কী একটু অনুতপ্ত নন? সে হয়তো পরবর্তী আদমের সন্ধানে চাদনী রাতে নতুন করে মুনীরার সাথে ক্রীড়ারঙ্গে মেতে উঠবেন। আর নবজাতকের চোখে মুখে সুকন্যা কিংবা সাদিবের ছায়া দেখে আঁতকে উঠবেন।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।